নিজেদের মাঠে জয় দিয়ে শুরু করা হলো না স্বাগতিক চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। আগের তিন রাউন্ডে ৮ ম্যাচ খেলে জয় পেয়েছিল ৫টি। ১০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার তৃতীয় স্থানে থেকে নিজেদের মাঠে এসেছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। কিন্তু নিজেদের মাঠে প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়া হলো না। আগের ম্যাচে ঢাকায় রংপুরের কাছে হেরে চট্টগ্রাম এসেছিল স্বাগতিকরা। সে হারের বলয় থেকে বের হতে পারলনা শুভাগত হোমের দল। গতকাল বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম ম্যাচে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে ৭৩ রানে হেরেছে চট্টগ্রাম। দু দলের প্রথম মোকাবেলাতেও জয়টা ছিল কুমিল্লার। তাই প্রতিশোধটা আর নেওয়া হলোনা চট্টগ্রামের। প্রথমে ব্যাট করে রানের পাহাড় গড়েছিল কুমিল্লা। আর সে পাহাড় আর টপকাতে পারেনি চট্টগ্রাম। কুমিল্লার ব্যাটারদের পাশাপাশি বোলাররাও দারুণ করেছে কুমিল্লার। আর তাতেই ৮ ম্যাচে ষষ্ঠ জয় তুলে নিল কুমিল্লা। উইল জেকসের সেঞ্চুরি, মঈন আলির হাফ সেঞ্চুরির সাথে হ্যাটট্রিক, দুই শতের বেশি রান সব মিলিয়ে দুর্দান্ত এক ম্যাচ দেখল দর্শকরা চট্টগ্রামের মাঠে। যেখানে ব্যাটে বলে দুর্দান্ত পারফর্ম করে ম্যাচটা জিতে নিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ব্যাটিং কিংবা বোলিং কোন বিভাগেই কুমিল্লার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি চট্টগ্রাম। যার পরিণত আরেকটি হার। যদিও নিজেদের মাঠে আরো তিনটি ম্যাচ খেলবে চট্টগ্রাম। নিশ্চয়ই বাকি ম্যাচ গুলোতে নিজেদের ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করবে স্বাগতিক চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। টসে হেরে ব্যাট করতে নামা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স শুরুটা ধীরে করলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে থাকেন দুই ওপেনার লিটন দাশ এবং উইল জেকস। মাত্র ৭.৫ ওভারে ৮৬ রান তুলে বিচ্ছিন্ন হন দুজন। ৩১ বলে ৯টি চার এবং ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৬০ রান করা লিটনকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন শহীদুল। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা তাওহিদ হৃদয়কে রানের খাতা খুলতে দেননি শহীদুল। পরের বলেই এলবিডব্লিউ করে ফেরান তাকে। ব্রুক গেস্টও পারেননি লিটনের দেখানো পথে হাটতে। ১০ রান করা গেস্টকে ফেরান সৈকত আলি। এরপর উইল জেকসের সাথে যোগ দেন ইংলিশ ক্রিকেটার মঈন আলি। কিন্তু কে জানতো এই দুই ইংলিশ ক্রিকেটার টর্নেডো চালাবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বোলারদের উপর। ১১.১ ওভারে ১১১ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হিসেবে গেস্ট বিদায় নেওয়ার পর ৫৯ বল খেলেছেন মঈন এবং জেকস। আর তাতে রান উঠেছে ১২৮। মাত্র ৪৩ বলে শতরানের জুটি গড়েছেন দুজন। এরপর সময় যতই গড়িয়েছে ততই চট্টগ্রামের বোলারদের উপর ঝড় বইয়ে দিয়েছেন দুজন। ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে নামা উইল জেকস তুলে নেন তার শতক। যা এবারের বিপিএলে দ্বিতীয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারী দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে এবারের বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের তাওহিদ হৃদয়। পরের ম্যাচে সেঞ্চৃুরি তুলে নিলেন একই দলের উইল জেকস। এই ইংলিশ ব্যাটারও করলেন ১০৮ রান। তবে তিনি খেলেছেন ৫৩ বল। আর হৃদয় খেলেছিলেন ৫৭ বল। জেকস ৫টি চার আর ১০টি ছক্কা মেরেছেন। আর হৃদয় মেরেছিলেন ৮টি চার আর ৭টি ছক্কা। মঈন আলি অপরাজিত ছিলেন ২৪ বলে ৫৩ রান করে। তিনি দুটি চারের পাশাপাশি মেরেছেন ৫ টি ছক্কা। আর তাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ২৩৯ রানে। যা এবারের বিপিএলে দ্বিতীয় দুইশত রানের বেশি ইনিংস। আগের ইনিংসটা ছিল রংপুর রাইডার্সের ২১১ রান। গত ১০ ফেব্রুয়ারী মিরপুরে ঢাকার বিপক্ষে এই স্কোর গড়েছিল রংপুর। শুধু তাই নয় এই ২৩৯ রান বিপিএলের ইতিহাসে সবোচ্চ দলীয় রান। যদিও আগের সর্বোচ্চটাও ২৩৯ রানের। আর সেটা করেছিলে রংপুর রাইডার্স ২০১৯ সালে। কাকতালীয়ভাবে দুটি ইনিংসই চট্টগ্রামে এবং চট্টগ্রামের বিপক্ষে। জবাবটা বেশ ভালই দিচ্ছিল চট্টগ্রাম। দুই ওপেনার তানজিদ তামিম এবং জস ব্রাউন ৮০ রান যোগ করেছিলেন। ২৪ বলে ৪১ রান করা তামিমকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙেন মোস্তাফিজ। পরের ওভারে ফিরেন আরেক ওপেনার ব্রাউন। তাকে ফেরান রিশাদ হোসেন। ২৩ বলে ৩৬ রান করেন ব্রাউন। এরপর শুরু হয় চট্টগ্রামের ব্যাটিং ধস। ৯০ থেকে ১১৫ রানে পৌছাতে আরো তিন উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। যেখানে কুমিল্লার লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের এক ওভারেই ফিরেন টম ব্রুস এবং শাহাদাত হোসেন দিপু। ১১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে হারের মুখে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। সৈকত আলিকে নিয়ে এরপর দলেল হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক শুভাগত হোম। কিন্তু জমলনা তাদের জুটিও। দুজন মিলে ৪২ রান যোগ করলেও দলকে টানতে পারেনি। মঈন আলিকে আগের বলে ছক্কা মেরে পরের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন ১১ বলে ৩৬ রান করা সৈকত আলি। একটি চারের পাশাপাশি ৫টি ছক্কা মেরেছেণ তিনি। পরের ওভারে ফিরেন ১৯ রান করা শুভাগত হোম। এরপর আর বাকিরা দাড়াতেই পারেনি। বিশেষ করে ইংলিশ স্পিনার মঈন আলির ঘুর্নির মুখে পড়ে ১৬৬ রানে অল আউট হয় চট্টগ্রাম। মঈন আলি পুরন করেন হ্যাটট্রিক। নিজের চতুর্থ এবং ইনিংসের ১৭ ওভারের প্রথম বলে শহীদুল ইসলামকে স্টাম্পিং বানিয়ে, দ্বিতীয় বলে আল আমিন হোসেনকে জেকসের ক্যাচে পরিনত করে ফেরান। তৃতীয় বলে বিলালকে বোল্ড করে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন মঈন আলি। এবারের বিপিএলে এটি দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। প্রথমটি করেছিলেণ দুর্দান্ত ঢাকার পেসার শরীফুল। আর তাতেই চট্টগ্রামকে থামিয়ে দেন ১৬৬ রানে। মাত্র ৯ রানে শেষ ৫টি উইকেট হারিয়েছে চট্টগ্রাম। ৪টি করে উইকেট নিয়েছেন মঈন আলি এবং রিশাদ হোসেন। ২টি উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। ম্যাচ সেরা হয়েছেন সেঞ্চুরিয়ান উইল জেকস।