সাহস পরিশ্রম ও এক সেনোয়ারার গল্প

করিয়েছেন ৫ হাজার ৩৪০ টি ডেলিভারি

হাবীবুর রহমান | বুধবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কেরোসিন কিনেন, তবে মাতৃত্বের টানে নিজেকে মেরে ফেলতে পারেননি। তিনি উখিয়ার রত্নাপালংয়ের নারী সেনোয়ারা আক্তার। এরমধ্যে ২০০৮ সালে স্বামী দুবাই চলে গেলে বাবা তাকে পল্লী চিকিৎসক কোর্সে ভর্তি করিয়ে দেন। যোগাযোগ থাকলেও স্বামী টাকাপয়সা দিতেন না। এ জন্য বাচ্চাকে নিয়ে তিনি চলে আসেন চট্টগ্রামে। একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করে পরে আন্দরকিল্লা মাতৃসদন হাসপাতালে মিডওয়াইফে ভর্তি হন। খবর পেয়ে স্বামী দুবাই থেকে এসে তাকে গ্রামে নিয়ে যান এবং মারধর করেন। এর জন্য তাকে ১৫ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। বাবার বাড়ির লোকজন মামলা করতে চাইলে তিনি তা করতে দেননি। এ জন্য বাবার বাড়ির লোকদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়। এদিকে তার উপর স্বামীর নির্যাতনের মাত্রা বাড়তেই থাকে। ২০১২ সালে তাকে ডিভোর্স দিয়ে বাচ্চাকে কেড়ে নেন স্বামী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দুয়ারে ঘুরেও বিচার পাননি। পরে সাহস ও কঠোর পরিশ্রম করে তিনি ঘুরে দাঁড়ান এবং সফল নারীতে পরিণত হন।

গতকাল নগরীর প্রাইমারি টিসার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) অডিটরিয়ামে সেনোয়ারাসহ পাঁচ ক্যাটাগরিতে পাঁচজনকে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত করে সম্মাননা ও সংবর্ধনা দেয় চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর। ‘নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী’ ক্যাটাগরিতে সংবর্ধনা পেয়েছেন সেনোয়ারা আক্তার। অনুষ্ঠানে আলাপে তিনি জানান, ডিভোর্স দিয়ে বাচ্চাকে কেড়ে নেন স্বামী। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দুয়ারে ঘুরেও বিচার পাননি। এ অবস্থায় ভেঙে না পড়ে নিজেকে শক্ত করে তিনি শুরু করেন নতুন পথচলা। মিডওয়াইফের কোর্সকে কাজে লাগিয়ে উখিয়ার কোর্টবাজারে পল্লী চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। কোর্ট বাজারে নার্স ও ডাক্তারের অভাব ছিল। তার এ কার্যক্রমের খবর পেয়ে প্রাক্তন স্বামী গুন্ডা লাগিয়ে তাকে সরোনোর চেষ্টা করেন। অনেক কষ্টে তিনি তা সামলেছেন। তার ডেলিভারির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে উল্লেখ করে তিনি জানান, ৫ হাজার ৩৪০ টি ডেলিভারি করাতে তিনি সক্ষম হন।

এরমধ্যে ঢাকা থেকে ব্লক বাটিক ও স্ক্রিন প্রিন্টের প্রশিক্ষণ নিয়ে বাসায় ব্লক বাটিকের কাজও শুরু করেন সেনোয়ারা। বিয়ের প্রস্তাব আসে। পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর বাবামাকে ৫ রুম বিশিষ্ট একটি টিনশেড ঘর উপহার দেন। ২০ লাখ টাকা দিয়ে একটি জায়গা ক্রয় করেন এবং পরে বাড়ি নির্মাণ করেন। একটি ফার্মেসি নিয়ে নিজস্ব চেম্বার শুরু করেন। ব্লক বাটিক করে একটি শোরুম ও একটি কারখানা করেন। যার মূলধন ১৮ লাখ টাকা। সেখানে ব্লক বাটিক প্রশিক্ষণ দেন। সেনোয়ারা বলেন, এখন আমার একটি নিজস্ব পরিচিতি আছে। আমার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে।

আমি যুদ্ধজয়ী, প্রতিষ্ঠিত মহিলা। বর্তমানে আমার কোটি টাকার সম্পদ আছে, ৫টি গরু আছে, ২টি পুকুর আছে। যে পুকুরে আমি মাছ চাষ করি। আমার সফলতার পিছনে রয়েছে আমার সাহস, পরিশ্রম, মেধা, স্বপ্ন ও জেদ। আমার প্রথম পুঁজি কানের দুল বিক্রি করে পাই ১৭ হাজার টাকা। বর্তমানে আমার অধীনে ১২ জন কর্মচারী কাজ করে। আমি একজন সফল নারী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরুমায় সীমান্তবর্তী পাহাড়ে ১১৫ একর পপি বাগান
পরবর্তী নিবন্ধপাঁচ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ পাঁচ জয়িতা পেলেন সংবর্ধনা