কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল গত বছরের ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত গাড়ির চাপ খুব বেশি না হলেও তিন মাসে ঘটেছে ৭টি দুর্ঘটনা। এতে দুজন নিহত ও ১৯ জন আহত হন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় টানেলের স্থাপনার বিভিন্ন অংশ। টানেলের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার বেঁধে দেওয়া হলেও অদক্ষ চালকের বেপরোয়া গতি এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণে বারবার টানেলে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দুর্ঘটনা রোধে টানেলের ভিতরে–বাইরে স্পিড ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শীঘ্রই এ ধরনের ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী তানভীর রিফা।
বঙ্গবন্ধু টানেল সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু টানেলের ভেতর ৬০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালানোর নির্দেশনা থাকলেও টানেল পারাপারে অধিকাংশ যানবাহনের চালকেরা এই নির্দেশনা মানছেন না। টানেলে সেলফি তোলা, গতি কমানো–বাড়ানো, ইচ্ছেমতো গাড়ি চালানোর কারণে গত তিন মাসে ৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ১৯ জন। অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটি–এই তিন কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে বলে জানা গেছে। এসব দুর্ঘটনা টানেল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।
জানা যায়, গত শনিবার রাত ৭টার দিকে একটি প্রাইভেটকার চট্টগ্রাম নগরী থেকে আনোয়ারা প্রান্ত হয়ে টানেলের প্রবেশ করে। এ সময় প্রাইভেটকারে থাকা ব্যক্তিরা সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন। অতিরিক্ত গতির কারণে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে গাড়িটি টানেলের সৌন্দর্যবর্ধনের বোর্ডে ধাক্কা দিয়ে উল্টে যায়। এরপর কারের পিছনে থাকা আরও দুটি কার ও দুটি মাইক্রোবাস একটার সাথে আরেকটার ধাক্কা লাগে। এতে প্রাইভেটকার তিনটি দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং দুর্ঘটনায় আহত হন ৫ জন। ঘটনার পর টানেলের নিরাপত্তাকর্মীরা আহতদের উদ্ধার ও দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িগুলো জব্দ করেন। এ সময় টানেলে প্রায় ৪০ মিনিট যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এই ঘটনায় টানেলের সৌন্দর্যবর্ধনের বোর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এর আগে উদ্বোধনের একদিন পর ৩০ অক্টোবর টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে টোল প্লাজায় একটি প্রাডো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে প্রথম দুর্ঘটনায় পড়ে। দুদিন পর ৩ নভেম্বর টানেলের ভেতরে একটি প্রাইভেটকারকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় বেপরোয়া গতির বাস। এই ঘটনায় কারের ৪ যাত্রী আহত হন। কারটি দুমড়ে মুচড়ে যায়।
১০ নভেম্বর টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে ওয়াই জংশন সংলগ্ন এলাকায় বাসের ধাক্কায় কঙবাজারের চকরিয়া উপজেলার আবুল হোসেন (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হন। ১৬ জানুয়ারি টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে বৈরাগ মুহাম্মদপুর এলাকায় দ্রুত গতির একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিকিউরিটি পোস্টে ধাক্কা দেয়। এতে সিকিউরিটি পোস্ট ভেঙে দায়িত্বরত একজন নিরাপত্তা কর্মীসহ ৭ জন আহত হন। এই ঘটনার একদিন পর ১৮ জানুয়ারি টানেলের ভেতর একটি পিকআপ ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে টানেলের ভেতরের টিউবে ধাক্কা দিলে ডেকোরেশন বোর্ডের কিছু অংশ ভেঙে যায় এবং অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামের ক্ষতি হয়। এছাড়া ৩০ জানুয়ারি ভোরে টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে মুহাম্মদপুর এলাকায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হন কেইপিজেডের নিরাপত্তাকর্মী হন। আহত হন আরো দুই নিরাপত্তাকর্মী।
দুর্ঘটনার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী তানভীর রিফা বলেন, চালকের অদক্ষতা আর বেপরোয়া গতির কারণে টানেলে বারবার দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। শনিবারের দুর্ঘটনাটি চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া গতি কারণে ঘটেছে। তিনি বলেন, টানেলে মুরগির যে পিকআপটি দুর্ঘটনার শিকার হয়, গাড়ি চালানোর সময় চালকের চোখে ঘুম ছিল। ইতোমধ্যে টানেল কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থার সাথে বসেছে। টানেলে লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি যাতে চলাচল করতে না পারে সেই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় গাড়ির চাপ থাকে। অন্যান্য দিনে গাড়ির তেমন চাপ থাকে না। তারপরও দুর্ঘটনা হচ্ছে। অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলের জন্য এসব দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। টানেল কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই টানেলের ভেতরে ও বাইরের সড়কগুলোতে স্পিড ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে স্পিড ক্যামেরা বসানোর সমীক্ষার কাজ চলছে।