সবজির গ্রাম দক্ষিণ ঘাটচেক

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | রবিবার , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৯:২০ পূর্বাহ্ণ

পিচঢালা রাস্তা ধরে গ্রামে ঢুকতেই দুইপাশে যতদূর চোখ যায় কেবল সবজি ক্ষেত আর সবজি ক্ষেত। এভাবে সারি সারি কৃষি জমিতে নানা জাতের সবজিতে ভরে আছে পুরো গ্রাম। বিলজুড়ে, সড়কের ধারে, ঘরের আঙিনায়, নদীপাড়ে নানা জাতের সবজি তুলে রাখা আছে। এমনই দৃশ্য দেখা গেছে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ ঘাটচেক গ্রামে।

ইছামতী, কর্ণফুলী ও ইছাখালী খাল দ্বারা তিনদিক থেকে বেষ্টন করে রেখেছে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ ঘাটচেক গ্রামটিকে। এই গ্রামের ইছামতী ও দক্ষিণের চরে সবজি আবাদে বিপ্লব ঘটিয়েছেন এই গ্রামের শত শত কৃষক। যেখানে উৎপাদিত সবজি চলে যায় রাঙ্গুনিয়াসহ সারাদেশের বিভিন্ন বড় বড় বাজারে। তিন ফসলি এই জমিতে সবজি আবাদ করে নিজেরা যেমন হয়েছেন স্বাবলম্বী অন্যদিকে শত শত শ্রমিকের কর্মের যোগান দিয়েছেন এই গ্রামের চাষিরা। গ্রামটি এখন সবুজ সবজি গ্রাম নামেও খ্যাতি পেয়েছে।

জানা যায়, ইছামতী ও কর্ণফুলী নদীর মোহনায় পলি উর্বর জায়গা হল দক্ষিণ ঘাটচেক গ্রাম। এই গ্রামের ৩০০ একর ইছামতী ও দক্ষিণের চরজুড়ে আদিকাল থেকেই তিন ফসলি সবজি আবাদ হয়ে আসছে। গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার বাসিন্দার মধ্যে অধিকাংশ পরিবারই কৃষি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। চাকরির পেছনে না ছুটে বাপদাদার পেশায় আত্মনিয়োগ করায় আধুনিক কৃষির ছোঁয়ায় বদলে গেছে এই গ্রামের আর্থসামাজিক চিত্র। কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামটি এখন বিষমুক্ত সবজি গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের কৃষকেরা সবজিক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ চাষের জমি তৈরি করছেন, কেউ সার দিচ্ছেন, কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন, কেউবা জমিতে সেচ দিচ্ছেন। কৃষকেরা মাঠের পর মাঠ ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, নানা জাতের শাক, মরিচ, শিমসহ বিভিন্ন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। কোনো কোনো মাঠে দেখা যায়, কৃষকেরা সবজি তুলে বাজারে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করছেন। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এখান থেকে গাড়িবোঝাই করে সবজি কিনে নিয়ে যান বলে জানান কৃষকরা।

এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম। যিনি নিজেও একজন সবজি চাষি। করেছেন নানা ধরনের সবজি আবাদ। তিনি বলেন, আমার বাপদাদার আমল থেকেই সবজি আবাদ করে আসছি। বিষমুক্ত সবজি আবাদ করে নিজে খেয়ে বাজারেও বিক্রি করি।

গ্রামের অপর কৃষক মো. নাছের আলম। যিনি ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রবাসে ছিলেন। দেশে ফিরে এসে এই গ্রামের উর্বর কৃষি জমিতে শুরু করেন কৃষি কাজ। বর্তমানে তারও নানারকম সবজি ক্ষেত রয়েছে। যেখানে তার নিয়মিত ১০ জন শ্রমিক কাজ করে। ৪ একর জমিতে ৪ লাখ টাকা খরচে এক মৌসুমেই আয় করেছেন ২০ লাখ টাকা।

এভাবে এই গ্রামের জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রবাস ফেরত যুবক, বয়োবৃদ্ধ সবাই সবজি আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

এই সবুজ গ্রামে সম্প্রতি সৌর বিদ্যুৎ এর একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে ৩০০ একরের মধ্যে ১৯০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। চারদিকে কাটাতারের বেড়া দিলেও এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে গেল কয়েক বছর ধরে এই কাটা তারের বেড়া ভেদ করে এখনো সবজি আবাদ করে চলেছেন গ্রামের সকল বয়সী চাষি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, এই গ্রামটি সবজি আবাদের জন্য বিখ্যাত। সবধরনের সবজির আবাদ হয় গ্রামটিতে। যেখানকার উৎপাদিত সবজি চলে যায় স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে সারাদেশে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক এই গ্রামের কৃষকদের পাশে থেকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচুনতি লাইটহাউস ও ক্লাব একাত্তরের অমর একুশে বিতর্ক প্রতিযোগিতা
পরবর্তী নিবন্ধহকার উচ্ছেদ অভিযানকে তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির সমর্থন