রাত যত গভীর হয়, নগরীতে কমতে থাকে যানবাহন। এই সুযোগে বেপরোয়া হয়ে ওঠে ছিনতাইকারীরা। তারা সিএনজি টেক্সি নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় শহরের বিভিন্ন সড়ক–অলিগলি। এ সময় তাদের শিকার হয় রিকশাযাত্রী বা পথচারীরা। কখনও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনিয়ে নেয় টাকা, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান সামগ্রী। আবার কখনও ছোঁ মেরে নিয়ে যায় ব্যাগ। এমন কর্মকাণ্ড চলে ভোর অবধি। তারপর আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে আড়ালে চলে যায় তারা। আবার ছিনতাইকারীদের কিছু গ্রুপ ভোরে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দূরপাল্লার যাত্রীদের টার্গেট করে; একইভাবে তাদের শিকারে পরিণত হয় ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে যাওয়া সাধারণ নগরবাসী। এ অবস্থায় গত বছরের মতো এ বছরও রমজান মাসে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য রোধে বিশেষ পরিকল্পনা নিতে চলেছে সিএমপি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকে ছিনতাই দমনে নানা কৌশল নিয়ে আলোচনা হলেও ছিনতাই কমছে না। এমনিতেই রাতের নগরীতে পুলিশি টহল নেই বললেই চলে। সড়কের কোথাও কোথাও গতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ব্যারিকেড স্থাপন করা হয়। কোথাও কোথাও পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু সন্দেহভাজনদের তল্লাশিও করা হয় না। ছিনতাইকারীরা পুলিশের টহল এড়িয়ে ছিনতাই করে বেড়ায়। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, চট্টগ্রাম ছিনতাইয়ের শহর হিসেবে পরিচিত। নানা কৌশলে এই শহরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কৌশলগুলো এনালাইসিস করে সিএমপি ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। গ্রেপ্তার হচ্ছে দাগী ছিনতাইকারীরা। ফলে বছর খানেক ধরে এ বিষয়ে সুফল এসেছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা বিগত সময়ের চেয়ে কম হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পুলিশ প্রশাসন এগিয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র যেসব সড়কে যানবাহন কম থাকে এবং পর্যাপ্ত আলো থাকে না, সেসব এলাকার রিকশাযাত্রী বা পথচারীদের টার্গেট করে। এক জায়গায় ছিনতাই শেষে অন্য সড়কে চলে যায়। একই কৌশল অবলম্বন করে সিএনজি টেঙিযোগে ছিনতাই করা চক্রটিও।
নগরীতে প্রতিদিন একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও থানায় মামলার সংখ্যা কম। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ছিনতাইকারীরা কম দামী মালামাল নিলে ভুক্তভোগীরা মামলা করতে চান না। কেউ কেউ শুধু সাধারণ ডায়েরি করেন। ভুক্তভোগীরা জানান, ছিনতাইয়ের খপ্পরে পড়ে থানায় গিয়ে মামলা করতে চাইলে পুলিশ নিতে চায় না। মামলা করলে কোর্ট–কাছারিতে দৌঁড়াতে হবে, এমন ভয় দেখিয়ে তারা জিডি করতে উৎসাহিত করে। জিডিতে সাধারণত সঙ্গে থাকা সামগ্রী হারিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করতে হয়। ফলে এসব জিডির তদন্তে তারাও আর গুরুত্ব দেয় না।
গত বছর রমজানের আগে নগরীতে দাপিয়ে বেড়ানো অন্তত ২২ গ্রুপের ৬০৩ ছিনতাইকারীকে শনাক্ত করে কঠোর অভিযানে নামে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এর ফলে রমজান মাসে ছিনতাইকারীদের দাপট কমে গিয়েছিল। সর্বশেষ সেই তালিকানুযায়ী ১৬ থানার ছিনতাইকারীদের সংখ্যা– কোতোয়ালী (৫০), সদরঘাট (২২) চকবাজার (২৯), বাকলিয়া (৬৫), পাঁচলাইশ থানা (২৯), চান্দগাঁও (৫৮), খুলশী (৫৭), বায়জিদ বোস্তামি (৪২), ডবলমুরিং (৬), হালিশহর (১১), পাহাড়তলী (৩০), আকবরশাহ (৬৮), বন্দর থানা (৭১), ইপিজেড (৩৮), পতেঙ্গা (১৬), কর্ণফুলী (১১)।
এদের মধ্যে ৪৭৩ দাগী ছিনতাইকারী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চট্টগ্রাম শহরে। তারা সন্ধ্যা থেকে ভোররাত, এমনকি দিনদুপুরেও ছোঁ মেরে নিয়ে যায় পথচারীর মোবাইল ফোন, টাকা, ল্যাপটপ কিংবা মূল্যবান জিনিসপত্রের ব্যাগ।