সীমান্তে কমেছে গোলাগুলি তবে কাটেনি আতঙ্ক

মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আরও ৬৩ সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয়কেন্দ্রসহ স্বজনদের বাড়িতে কয়েকশ মানুষ

বান্দরবান ও টেকনাফ প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে সীমান্ত পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে উঠলেও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমতুমব্রুজলপাইতলী সীমান্তে আতঙ্ক কাটেনি স্থানীয়দের। মিয়ানমার বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারের জান্তা বাহিনীর সংঘাতে ছোঁড়া গুলি, বোমা, মর্টারশেলের গোলার আঘাতে বাংলাদেশি হতাহতের ঘটনায় ভয়ে আতঙ্কে সীমান্তবর্তী তুমব্রু বাজারপাড়া, কোনাপাড়া, মাঝেরপাড়া, ঘুমধুম পাড়া, জলপাইতলী পাঁচটি গ্রামের কয়েক শতাধিক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রসহ দূরদূরান্তের আত্মীয়স্বজনের বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। তবে গতকাল বুধবার সকাল থেকে সীমান্ত পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক দেখা গেছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মাঝেমধ্যে কয়েকটি গুলি ছোড়ার শব্দ পাওয়া গেলেও সীমান্তের ওপারে মর্টারশেল ও বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি বলে জানিয়েছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে নতুন করে টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্ত দিয়ে ৬৩ জন সেনা ও বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৩২৭ জন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী প্রবেশ করল বাংলাদেশে।

জানা গেছে, এ পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৪০টি পরিবারের ২৪৩ জন সদস্য। অপরদিকে আত্মীয়স্বজনের বাসাবাড়িতে চলে গেছে দেড় শতাধিকের মত পরিবার। তবে ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো কেউ আশ্রয় নেয়নি।

ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, বুধবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে তেমন গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। শুনেছি আরাকান বিদ্রোহীরা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের তুমব্রু, ঘুমধুম, ডেকুবুনিয়া তিনটি ক্যাম্পই দখল করে নিয়েছে। এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তবাসীদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা দুটি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজনদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে গ্রাম প্রহরী ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয় সরিয়ে নিতে খোলা হয়েছে অস্থায়ী দুটি আশ্রয় কেন্দ্র। সীমান্তবর্তী অতি ঝুঁকিপূর্ণ আড়াইশ পরিবারের মধ্যে দেড়শ পরিবার ইতিমধ্যে আত্মীয় স্বজনের বাসাবাড়িতে চলে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে আড়াইশ মানুষ। অন্যদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জেরে এখন পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী পুলিশ (বিজিপি), সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন সদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার ৩২৭ জন সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এদের মধ্যে সর্বশেষ বুধবার দুপুরে ৬৩ জন প্রবেশ করেন। বিজিবি তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণ শেষে হেফাজতে নিয়েছে। বর্তমানে তারা হোয়াইক্যং বিওপিতে রয়েছে। এদিন দুপুরে বিজিবি সদর দপ্তর থেকে পাঠানো বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

জানা গেছে, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অংসান সুচির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষদিকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী সংগঠনের বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। এ বাহিনীগুলো হচ্ছেতা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), আরাকান আর্মি (এএ) এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ)। এরা শান, রাখাইন, চীন ও কেয়াহ রাজ্যে লড়াই চালাচ্ছে। বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনাপোস্ট দখল করে ইতোমধ্যে তারা নিজেদের শক্তি সাফল্যের জানান দিয়েছে। আরাকান আর্মি (এএ) এ জোটেরই অন্যতম অংশ। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী এটি। তারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলা ভাষাকে ধ্বংসের নানা কারসাজি চলছিল
পরবর্তী নিবন্ধ১৩৩ কন্টেনার রাসায়নিক নিয়ে বিপাকে কাস্টমস