মাতৃভাষার অধিকারকে বুকের রক্ত দিয়ে আপন করে নেওয়ার ইতিহাস শুধুমাত্র বাঙালির। বাংলা ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদান রয়েছে। ১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্ব থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন সক্রিয় ছিলেন তিনি। তিনি তখনও ছাত্র। কলকাতা থেকে ফিরে আইন পড়তে ভর্তি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু দিনরাত মাথার ভেতরে গুঞ্জরণ করে যাচ্ছে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার রক্ষার আগুন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের অল্প সময়ের মধ্যেই পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র বুঝতে পারেন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নিরাপত্তা আইনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ছিলেন শেখ মুজিব ও বরিশাল মুসলিম লীগের সাবেক সেক্রেটারি মহিউদ্দিন আহমদ। কারাগারে তিলে তিলে মৃত্যুবরণ করার চাইতে আমরণ অনশন শুরু করেন শেখ মুজিব। ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন শুরু করেন তিনি। ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে তাকে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তর করা হয়।
ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে বন্দিমুক্তির ব্যাপারে পূর্ববঙ্গ বিধান–পরিষদের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির একটি যুক্ত আবেদন পেশ করা হয়। এতে প্রদেশের সব রাজনৈতিক কর্মীর মুক্তির দাবি জানানো হয়। এই আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক কাজী গোলাম মাহবুব, আতাউর রহমান খান, মওলানা রাগিব আহসান, সৈনিক পত্রিকার সম্পাদক হাসান ইকবাল প্রমুখ।
কারা প্রাচীরের অন্তরালে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শেখ মুজিব আমরণ অনশন শুরু করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের মুখে সৈন্যরা গুলি ছুঁড়লে এবং কয়েকজন শহিদ হওয়ার ঘটনায় ২৩ ফেব্রুয়ারি অনশন ভঙ্গ করার কথা জানিয়ে তার প্রেরণ করেন মওলানা ভাসানী। তিনি উল্লেখ করেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বেঁচে থাকার প্রয়োজন আছে।’ তীব্র গণ–আন্দোলনের মুখে শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন।