দুই বছর ধরে প্রস্তাবটি হিমাগারে

| রবিবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ঋত্বিক নয়ন 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) তৃতীয় পুলিশ লাইন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দুই বছর ধরে হিমাগারে পড়ে আছে। ২০২২ সালে কর্ণফুলী উপজেলায় চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার (সিইউএফএল) কারখানা সংলগ্ন ২৫ একরের বেশি জায়গা নিয়ে নতুন পুলিশ লাইনস প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল। সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচ্য প্রস্তাবনাটির বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এর ফলে নগরীর পরিসর বাড়ানো কিংবা নতুন আটটি থানার জনবলের বাসস্থানের কী হবে, সে বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে।

সিএমপির উপকমিশনার (এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) এসএম মোস্তাইন হোসাইন আজাদীকে বলেন, আমরা এ প্রস্তাবটি হেডকোয়ার্টারে পাঠিয়েছিলাম। অনুমোদন পেলে জমি বরাদ্দের বিষয়টি সামনে আসত। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর পাইনি। তাই মনে হচ্ছে বিষয়টি বিবেচনায় নেই।

১৯৭৮ সালে ছয়টি থানা ও ২ হাজার ৪৮৬ জন জনবল নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়। ৪৫ বছরে এ মহানগরে থানা বেড়ে হয়েছে ১৬টি। পাশাপাশি জনবল বেড়ে হয়েছে ৭ হাজারের বেশি। চট্টগ্রামে বেশ কিছু অবকাঠামো গড়ে ওঠায় নিরাপত্তার প্রয়োজনের কারণ দেখিয়ে মহানগর পুলিশের পরিসর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, দামপাড়া পুলিশ লাইনসে ৫০ একর জায়গা জুড়ে আছে পাঁচটি পুরুষ এবং একটি নারী ব্যারাক। পাশাপাশি আছে স্কুল, হাসপাতাল ও অস্ত্রাগারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বাহিনীর আবাসন সংকট মোকাবেলায় মনসুরাবাদ এলাকায় ১৪ একর জায়গা নিয়ে ২০১৫ সালে গড়ে ওঠে দ্বিতীয় পুলিশ লাইনস। সেখানে একটি ব্যারাক ভবন এবং টিনশেড ব্যারাক রয়েছে। তার সাত বছর পর ২০২২ সালে আওতা বাড়াতে কর্ণফুলী উপজেলার সিইউএফএল সংলগ্ন খাস জমিতে ২৫ একর জায়গা জুড়ে তৃতীয় পুলিশ লাইনস স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

কারণ হিসেবে সেই সময়কার সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেছিলেন, জেলা থেকে কিছু অংশ যুক্ত করে নতুন চারটি থানা নিয়ে মহানগর পুলিশের পরিসর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি নগর পুলিশে লোকবলও বাড়বে। আবার কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল, আনোয়ারায় গড়ে ওঠা কোরিয়ান ও চায়না ইপিজেড, বিমানবন্দরসহ বেশ কিছু নিরাপত্তার বিষয় যুক্ত আছে। সেজন্য নতুন এ পুলিশ লাইনস স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন পুলিশ লাইনস স্থাপনের প্রস্তাবটি পুলিশ সদর দপ্তরে আছে। সেখান থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে যাবে। অল্প সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে তিনি আশার কথা জানিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএমপি সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, পারকী সমুদ্র সৈকত, বিমানবন্দর, টানেল, কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেডসহ বিভিন্ন স্থানের নিরাপত্তায় অনেক পুলিশ সদস্যের প্রয়োজন পড়বে। সেই প্রয়োজন দামপাড়া কিংবা মনসুরাবাদ পুলিশ লাইনস থেকে মেটানো কঠিন হবে। কর্ণফুলীতে নতুন পুলিশ লাইনস হলে সেখান থেকে ফোর্স পাঠানো অনেকটা সহজ হবে। আর পরিসর বাড়িয়ে যেহেতু নতুন আটটি থানা হচ্ছে, তাই সেগুলোর জন্য আবাসন ব্যবস্থা বর্তমানের দুটি পুলিশ লাইনসের মাধ্যমে সম্ভব নয়। সেজন্যও জায়গা প্রয়োজন। তাছাড়া সিএমপির দপ্তর জানিয়েছে, তৃতীয় পুলিশ লাইনসে ব্যারাকের পাশাপাশি পরিবহন ডাম্পিং স্টেশন, ওয়ার্কশপ, ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, জোনাল এসি অফিস (সহকারী কমিশনার কার্যালয়), বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি এবং বন্দর জোনের উপকমিশনার কার্যালয় স্থাপনের কথা ছিল। তাই দুই বছর ধরে ফাইলবন্দি এ প্রস্থাবটি নতুন করে আলোর মুখ দেখবে, এটাই প্রত্যাশা নগর পুলিশের সংশ্লিষ্ট সকলের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২২ বছর পর আলোর মুখ দেখছে নৌ তদন্ত কেন্দ্র
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্ব ইজতেমায় আজ আখেরি মোনাজাত