ডা. সোমা চৌধুরী
রক্তস্বল্পতা একটি প্রচলিত সমস্যা। রক্তস্বল্পতা মানে রক্তকমে যাওয়া নয়। বয়স ও লিংগভেদে লোহিত কণিকায় অবস্থিত হিমোগ্লোবিন এর প্রয়োজনীয় মাত্রা কমে যাওয়াকে এ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা বলে। সাধারণত জন্মের সময় নবজাতকের রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা ১২–১৪ গ্রাম/ডেসিলিটার। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, মহিলা ও গর্ভবতীর ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১৩–১৬.৫, ১২–১৬ এবং ১১–১৬।
রক্তস্বল্পতার লক্ষণ : অবসাদ, ক্লান্তি, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, দুর্বলতা, বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঝিম ঝিম করা, অরুচি, হাতপা অবশ লাগা, চোখে ঝাপসা দেখা, ফ্যাকাশে হওয়া, নখ ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি।
রক্তস্বল্পতার কারণ : রক্তস্বল্পতা মূলত কোনও নির্দিষ্ট রোগ নয়, অনেক কারণে এনিমিয়া হতে পারে। তবে নারীদের মধ্যে এ্যানিমিয়ার প্রবণতা বেশি। এর অন্যতম কারণ প্রতিমাসে পিরিয়ডজনিত রক্তস্রাব। এছাড়াও রয়েছে আয়রনের ঘাটতি, ভিটামিন বি ও ফলিক এসিডের ঘাটতি, অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, কৃমির সমস্যা, অস্থিমজ্জার উৎপাদন জনিত সমস্যা, কিডনি রোগ, লিভারের সমস্যা, থাইরয়েড হরমোন এর সমস্যা, রক্তের ক্যান্সার, জন্মগত কারণ, পুষ্টির অভাব, যে কোনও কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। এছাড়াও আমাদের দেশে কিশোরী বিয়ে, কম বয়সে মা হওয়া, ঘনঘন বাচ্চা জন্ম দেয়া, গর্ভবতী এবং প্রসবপরবর্তী সময়ে সঠিক পুষ্টির অভাবে মেয়েরা প্রায়ই রক্তস্বল্পতায় ভোগে।
শনাক্তকরণ : এ্যানিমিয়া শনাক্তকরণের জন্য রক্তের উপাদানের পরিমাপ, স্মিয়ার পরীক্ষা করা হয়। সাধারণত তিন ধরনের এ্যানিমিয়া শনাক্ত করা হয়। যেমন : কম এ্যানিমিয়া, মাঝারি এ্যানিমিয়া, গুরুতর এ্যানিমিয়া।
চিকিৎসা : কোন প্রকারের রক্তস্বল্পতা তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসকেরা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। যেমন: লৌহ ও ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ, আয়রন সমৃদ্ধ ইনেজকশন, রক্তদান, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন, সিপ্লনেকটমী। রুগীর অবস্থা ভেদে এর যে কোনটি প্রয়োজন হতে পারে।
এ্যানিমিয়া নিয়ন্ত্রণে করণীয় : জীবন ধারায় পরিবর্তন আনা। যেমন : তামাক পরিহার করা, খাদ্যের সাথে চা পান না করা, লৌহ সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা। যকৃত, মাংস, সামুদ্রিক খাবার, মসুরডাল, মটরশুঁটি, আলু, ব্রোকলি, কচুশাক, আপেল, পেয়ারা, লালশাক, বাদাম, কিসমিস, আনার আয়রনের ভালো উৎস। ভিটামিন সি বা এসকরবিক এসিড আয়রন শোষণে সাহায্য করে। তাই ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য প্রতিদিন খেতে হবে। রক্তস্বল্পতাকে অেেনক অবহেলা করে থাকে। কিন্তু এ্যানিমিয়ার কারণে নারীর গর্ভধারণে বাধা, অনিয়মিত মাসিক, গর্ভকালীন জটিলতা, প্রসবকালীন বা প্রসবোত্তর জটিলতা, স্বাস্থ্যহানি, গর্ভস্থ শিশুর জটিলতা, জন্মগত ত্রুটি সহ অন্যান্য অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনি যদি অল্পতেই দুর্বলতা অনুভব করেন এবং হাঁপিয়ে উঠেন তবে সত্বর ডাক্তারের পরামর্শ নিন। প্রাথমিক পর্যায়ে এ্যানিমিয়া সনাক্ত হলে আয়রন ট্যাবলেট সেবনের মাধ্যমে রক্তস্বল্পতা কমানো সম্ভব। তবে চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়। অপুষ্টি, দারিদ্র্য, পরিবারের অধিক সদস্য সংখ্যা, কুসংস্কার রক্তস্বল্পতা সৃষ্টির মুল কারণ। স্বাস্থ্যসচেতনতা ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করলে এ্যানিমিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই আসুন সচেতন হই এবং সুস্থ জীবন গড়ি।
লেখক : অবস্ ও গাইনী বিশেষজ্ঞ