লালদিয়ার চরে হবে নতুন কন্টেনার টার্মিনাল

প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব মার্স্ক লাইনের ৪৪ একর জায়গা চিহ্নিত করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ

হাসান আকবর | শুক্রবার , ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক একটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। লালদিয়ার চর বস্তিসহ অবৈধ দখলে থাকা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৫২ একর জায়গার মধ্যে ৪৪ একর জায়গায় এই টার্মিনাল নির্মিত হবে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। নিজস্ব অর্থায়নে টার্মিনালটি নির্মাণের ব্যাপারে ডেনমার্ক ভিত্তিক বিশ্বের বৃহত্তম শিপিং কোম্পানি মার্স্ক লাইন ৪০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনার সুযোগ না পেয়ে কোম্পানিটি লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবটি নিয়ে সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিপিং মার্স্ক লাইন বহুবছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যবসা করে আসছে। বিশ্বের ১১৬ টি দেশে এই কোম্পানির বিনিয়োগ এবং ব্যবসা রয়েছে। মার্স্ক লাইন ৭৮৬ টিরও বেশি জাহাজ পরিচালনা করে এবং এর ধারণক্ষমতা ৪.১ মিলিয়ন টিইইউএস। ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ডেনিশ কোম্পানিটি চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল পরিচালনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু সেটি সৌদি আরবের রাজ পরিবারের মালিকানাধীন রেড সি গেটওয়েকে প্রদানের পর মার্স্ক লাইন লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ এবং পরিচালনার ব্যাপারে নতুন করে প্রস্তাব দেয়। এতে তারা ৪০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। তারা টার্মিনালটি নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্ট স্থাপন করে বন্দর পরিচালনা করবে। ৪০ বছর পর তারা যে অবস্থায় টার্মিনালটি থাকবে তা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করে চলে যাবে। বিল্ড অপারেট এন্ড ট্রান্সপার (বিওটি) ভিত্তিতে টার্মিনালটি নির্মাণের যে প্রস্তাব মার্স্ক লাইন দিয়েছে সরকার তা বেশ ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর প্রস্তাবিত এই টার্মিনাল নিয়ে সার্ভে করা হচ্ছে। মার্স্ক লাইন নিজস্ব অর্থায়নে এই সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে বন্দর কর্তৃপক্ষের ৫৩ একরের মতো জায়গা অবৈধ দখলে ছিল। ২০২১ সালের মার্চে বন্দর কর্তৃপক্ষ এখানে বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে জায়গাটি দখলমুক্ত করে। কর্ণফুলীর মোহনার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটির মধ্যে ৪৪ একর জায়গা প্রস্তাবিত টার্মিনালের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ব্যাপারে ‘লালদিয়া কন্টেনার টার্মিনাল প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার অগ্রসর হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, লালদিয়ার চর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। টার্মিনাল নির্মাণের জন্য এই জায়গা মার্স্ক লাইন চাচ্ছে। এটি বন্দরের বিদ্যমান জেটিগুলোর তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর একটি টার্মিনাল হবে বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, বহির্নোঙরের কাছাকাছি এবং কোনো বাঁক না থাকায় এই স্থানটি টার্মিনালের জন্য আলাদা গুরুত্ব বহন করে। এখানে অনায়াসে বড় জাহাজ বার্থিং দেয়া যাবে। বাঁক না থাকায় লম্বা জাহাজ ভিড়তেও কোনো সমস্যা হবে না। তারা বলেন, পিসিটিতে ইতোমধ্যে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হয়েছে। লালদিয়া টার্মিনালেও একই আকৃতির জাহাজ ভিড়ানো যাবে। মার্স্ক লাইনের প্রস্তাব সরকার বিবেচনা করছে। আলাপ আলোচনায় দেশের স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মার্স্ক লাইনের প্রস্তাবের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, তারা সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। যা মন্ত্রণালয় থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট এসেছে। এখন সরকার সবদিক দেখে শুনে দেশের জন্য যা ভালো হবে নিশ্চয় তা করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছয়টি বাজারের ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্ত চসিকের
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু আজ