আধুনিক ল্যান্ডফিল ব্যবহার করলে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব

চসিকের কাছে কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন উপস্থাপন

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ

নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এমআরএফ (ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফ্যাসিলিটি) পদ্ধতি অনুসরণ এবং আধুনিক ল্যান্ডফিল (আবর্জনাগার) ব্যবহার করলে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব। এতে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পাশাপাশি পরিবেশের সুরক্ষাও নিশ্চিত করবে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) দেয়া দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘কোরিয়া এনভারনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড টেকনোলজি ইনিস্টিটিউট’ (কেইআইটিআই) প্রস্তাবিত প্রকল্পের ‘প্রি ফিজিবিলিটি স্টাডি’ (প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। গতকাল সোমবার নগরের একটি হোটেলে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন কেইআইটিআই কর্মকর্তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্পের ম্যানেজার হং জিয়ং ওয়ান, প্রকৌশলী কো জুন হিয়ং ও প্রকৌশলী গিউহা চোয়।

পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে কেইআইটিআই কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপর একটি সার্বিক কৌশল তুলে ধরেন। বর্তমানে সব ধরনের বর্জ্য একসাথে সংগ্রহ করা হয়। এর পরিবর্তে এমআরএফ (ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফ্যাসিলিটি) পদ্ধতি অনুসরণ করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়। যার মাধ্যমে সংগৃহীত প্লাস্টিক, পিচবোর্ড, কাগজ (সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, অফিসের কাগজ, মিশ্র কাগজ), কাচের বোতল এবং জার, অ্যালুমিনিয়াম এবং স্টিলের ক্যানসহ ধাতব পাত্র মেশিনের মাধ্যমে পৃথক করা হবে। এরপর সেগুলো ‘ম্যাটেরিয়াল রিকভারি কারখানায় কম্প্যাক্ট করে প্রয়োজন অনুসারে কাজে লাগানো যেতে পারে। প্রতিবেদনে ফুড ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব দেয়া হয়। এছাড়া, জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা এবং পরিচ্ছন্নকর্মীদের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, সচেতনভাবে বর্জ্য সংগ্রহ করা, ডোর টু ডোর সংগ্রহের জন্য আধুনিক উপকরণ সরবরাহের পাশাপাশি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

কেইআইটিআই মনে করে, বর্তমানে চসিক আনন্দবাজার ও আরেফিন নগরে দুটি ল্যান্ডফিলে শহরের বর্জ্যগুলো যেভাবে রাখছে তা পরিবেশ ও আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিকর। এজন্য চসিকের উচিৎ দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের আধুনিক দেশগুলোর মতো আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ডফিল্ড গড়ে তোলা। এ ধরনের আধুনিক ল্যান্ডফিলকে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব এবং বর্জ্যকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষা সম্ভব।

প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ল্যান্ডফিলসহ পুরো প্রকল্পের জন্য ব্যয় হবে ১৩ কোটি ৪২ লাখ ৫৮ হাজার ডলার। যার মধ্যে এক কোটি ২৯ লাখ ৭৪ হাজার ডলার অনুদান এবং ১২ কোটি ১২ লাখ ৮৪ হাজার ডলার ঋণ দশমিক ১ শতাংশ সুদ হারে পাবে চসিক।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম ও তৎকালীন প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি। ওইসময় চসিককে একটি প্রজেক্ট কন্সেপ্ট প্রপোজল (পিসিপি) এর ড্রাফট হস্তান্তর করে কেইআইটিআই। বিষয়টি একই বছরের ২৫ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জানায় চসিক। তবে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় প্রকল্পটি গ্রহণ করতে পারছে না চসিক।

গতকাল সোমবার প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুর্গম এলাকার জনগোষ্ঠীর শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছে সেনাবাহিনী
পরবর্তী নিবন্ধইরা হয়ে আসছেন সাফা