বাঁশখালীতে ভরাট হচ্ছে শতবর্ষী দারোগা পুকুর

পরিদর্শনে এসিল্যান্ড, কাজ বন্ধের নির্দেশ

বাঁশখালী প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালী পৌরসভার উত্তর জলদী মিয়ার বাজার সংলগ্ন এলাকায় শতবর্ষী দারোগা পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। পাহাড়ি মাটি ও কৃষিজমির টপ সয়েল কেটে পাঁচ, ছয়টি ট্রাকে করে মাটি ফেলে পাঁচ একর আয়তনের পুকুরটির ভরাট কাজ চলছে। এ বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার সকালে বাঁশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল খালেক পাটোয়ারী পুকুরটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি উপস্থিত জনগণকে যারা ট্রাক করে মাটি নিয়ে আসে তাদের অবরুদ্ধ করে প্রশাসনকে খবর দেওয়ার আহ্বান জানান। কোনো অবস্থাতেই পুকুর ভরাট প্রশাসন সমর্থন করে না বলে তিনি জানান। সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাঁশখালী পৌরসভার উত্তর জলদী মিয়ার বাজার এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী দারোগা পুকুরটি বর্তমানে খরিদাসূত্রে এক তৃতীয়াংশ ভরাট করে ফেলা হয়েছে। ত্রিপুরা চরণের মালিকানাধীন পুকুরটি স্থানীয় হাজারও মানুষ নিত্যদিনের কাজে ব্যবহার করে আসছে। সমপ্রতি ত্রিপুরা চরণের ছেলেরা পুকুরের মালিকানা মো. হুমায়ূন নামে অন্য ব্যক্তির কাছে বিক্রি করলে নতুন মালিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য পুকুরটি ভরাট করে ফেলছেন।

এদিকে হুমায়ুন এলাকায় না থাকলেও তার পক্ষে করিম নামে এক ব্যক্তি বলেন, অনেক টাকা দিয়ে এটা ক্রয় করা হয়েছে দোকান ও ভিটাবাড়ির জন্য। তাই ভরাট না করা হচ্ছে। এদিকে অগ্নি দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে এই পুকুরটিই এই এলাকার একমাত্র ভরসা। পৌরসভার কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইসহাকের কাছে পুকুরটি ভরাটের ব্যাপারে জানতে চাইলে তার পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানান।

বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার আযাদুল ইসলাম বলেন, পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষেধ। আগুন লাগলে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য একমাত্র ভরসা পুকুরের পানি। তাই পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট তোফাইল বিন হোসাইন বলেন, দারোগা পুকুর ভরাটের বিষয়টি আমি গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি। খবর পাওয়ার সাথে সাথে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কেউ যদি করার সাহস দেখায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে।

চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর দক্ষিণের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাঁশখালীতে যেসব এলাকায় পুকুর ভরাটে পাহাড়ি মাটি কাটা হচ্ছে, গোপনে আমাদের সোর্সের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। অচিরেই এ নিয়ে অভিযান ও মামলা করা হবে।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, পুকুর ভরাটের বিষয়টি জানার পর লোকজন পাঠিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পুলিশ প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে এসিল্যান্ডের মাধ্যমে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা ট্রাকে করে মাটি নিয়ে আসবে তাদের আটক করে জেলে পাঠানো হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও অনুমতি ব্যতীত, পুকুর ভরাট, পাহাড় কাটা, ধানি জমির টপ সয়েল কাটা, খাল বিল নদী নালা ইত্যাদি ভরাট করা যাবে না। এ ধরনের কাজের সঠিক তথ্য দিয়ে প্রশাসনকের সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবু সুফিয়ানসহ বিএনপির ৫১ নেতাকর্মীর আগাম জামিন
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে বজল হত্যা মামলায় খুনের দায় স্বীকার