মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি, নাইক্ষ্যংছড়ির ৫ স্কুল একদিন বন্ধ

বান্দরবান প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৩৬ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লাগাতার গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে সীমান্তের ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা বিভাগ। গতকাল সোমবার নাইক্ষ্যংছড়ি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘুমধুম ইউনিয়নের নিরাপত্তা বিবেচনায় ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। স্কুলগুলো হচ্ছে বাইশপারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রেজু গর্জন বুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রাথমিক ত্রিরতন চাকমা বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনায় স্কুলগুলো একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগকে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে যা সিদ্ধান্ত আসে সেটাই করা হবে।

এদিকে মিয়ানমারনাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত ঘেঁষে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও মিয়ানমার জান্তা সরকারের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সেখানে কামানের গোলা নিক্ষেপের পাশাপাশি বিমান থেকে গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে বলে সীমান্তবর্তী প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

মিয়ানমারনাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে মিয়ানমার অংশে ৩ দিনে অর্ধশতাধিক মর্টার শেলের প্রকট শব্দে ৪৭ ও ৪৮ নম্বর সীমান্ত পিলারের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসব গোলার আওয়াজে কেঁপে উঠেছে। আর এ কাঁপুনিতে আতঙ্কিত হচ্ছেন সীমান্তবাসী।

ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সোমবার সকালেও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এতে কেউ হতাহত না হলেও আতঙ্কে রয়েছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো বলেন, আমরা যারা এপারে বসবাস করছি সবাই আতঙ্কে আছি। কখন কী হয় জানি না। বিনা প্রয়োজনে বাইরে না যাওয়ার জন্য স্থানীয় জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে। গত ৮১০ দিন থেকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর গোলাগুলি হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘাত বর্তমানে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ক’দিন ধরেই সীমান্ত এলাকায় ভারী অস্ত্র থেকে ছোড়া গুলি এবং মর্টার শেলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে আগুনের ধোঁয়া। এর আগেও মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলা বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পড়ে।

তুমব্রু সীমান্তের স্থায়ী বাসিন্দা সংবাদকর্মী মাহমুদুল হাসান বলেন, কিছুদিন ধরে সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। আমরা যারা স্থায়ী বাসিন্দা আছি, সবাই আতঙ্কে রয়েছি। সীমান্তে বসবাসকারী অনেকেই ভয়ে নিরাপদে চলে গেছেন। এর আগে শনিবার সারা রাত গোলাগুলি হয়।

গত ২৩ জানুয়ারি সকাল থেকে তুমব্রু সীমান্তের ওপারে ২ বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে; যা থেকে গুলির খোসা এসে পড়ে এপারের কয়েকটি গ্রামে। সেই সময় এসব গ্রামের লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যান।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যার প্রভাব বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাখাইন রাজ্যেও এসে পড়েছে। এ অবস্থায় মিয়ানমারবাংলাদেশ সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান। তিনি রোববার বিজিবির কঙবাজার ব্যাটালিয়নের (৩৪ বিজিবি) অধীন উখিয়ার পালংখালী বিওপি এবং নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু বিওপি ও ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা এবং টেকনাফ ব্যাটালিয়নের (২ বিজিবি) অধীন হোয়াইক্যং বিওপি ও তৎসংলগ্ন সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে এ নির্দেশনা দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে টেকনাফ সীমান্তের দুই গ্রামের মানুষ
পরবর্তী নিবন্ধপিঠা উৎসবে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে মারামারি