কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম আনোয়ারা পারকি সমুদ্র সৈকতের উন্নয়ন বলতে তেমন হয়নি। যার কারণে সুযোগ–সুবিধায় পর্যটকদের প্রত্যাশার আর প্রাপ্তিতে এখনো বড় ফারাক রয়েছে। যার ফলে এই সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মাঝে হতাশা পরিলক্ষিত হচ্ছে ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চালুর পর পারকি সমুদ্র সৈকতের অনেক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধু টানেল ঘুরতে আসা পর্যটকদের মাঝে টানেল ঘুরে পারকি সৈকত দেখা যেন এক টিকিটে দুই ছবি দেখার মতোই। কিন্তু সৈকতে পর্যটকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা গড়ে না উঠায় সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হতে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ সম্ভাবনার দিক থেকে এই সৈকত দেশে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সূত্রে জানা যায়, পারকি সমুদ্র সৈকতকে দেশের আধুনিক অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে পর্যটন কমপ্লেক্স। এতে নির্মিত হচ্ছে ১৪টি আধুনিক কটেজ, তার মধ্যে ৪টি ডবল ডুপ্লেক্স কটেজ ও ১০টি সিঙ্গেল কটেজ। ৪র্থ তলাবিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস ভবন নির্মিত হচ্ছে, এর গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকবে পর্যটন অফিস, দ্বিতীয় তলায় থাকবে দুইটি দোকান, একটি রেস্টুরেন্ট, তৃতীয় ও ৪র্থ তলায় থাকবে ২টি বার, একটি ২৫০ আসনের কনভেনশন হল। তৃতীয় তলাবিশিষ্ট ১টি সার্ভিস ব্লক, যেখানে শিক্ষার্থীদের থাকার বিশেষ ব্যবস্থাসহ পর্যটকদের জন্য ৩৫টি সিঙ্গেল ব্যাচেলর সার্ভিস রুম, সার্ভিস স্টাফদের জন্য ৪৪টি রুম থাকবে। একটি ওয়াশ ব্লক, যেখানে নারী–পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া একটি লেক, একটি ঝুলন্ত ব্রিজ, দুইটি পিকনিক শেড, কুকিং শেড। একটি খেলার মাঠ, যার মধ্যে ভলিবল, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবস্থা থাকবে এবং গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধাও রাখা হয়েছে । প্রত্যেকটি ভবনের সামনে সাজানো বাগান থাকার কথা রয়েছে। কিন্তু করোনা পরবর্তী দুই দফা কাজের মেয়াদ পেছানো পর এখন ঝুলে আছে। এই প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে।
সরেজমিনে পারকি সৈকত ঘুরে দেখা যায়, যানজটে পড়ে পর্যটকদের ভোগান্তির শেষ নেই। সৈকতে নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য নির্মিত ৪টি সড়কের মধ্যে প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সড়ক ছাড়া বাকী হযরত শাহ আনল সড়ক, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মাতা নুরুন্নাহার জামান সড়ক, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নামে নির্মিত সড়কটি দিয়েও বর্তমানে কার্যত কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এমনকি পায়ে হেঁটে যাওয়ার অবস্থাও নেই। যার কারণে সৈকতের যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক। শুধু তাই নয় সৈকতের নির্ধারিত গাড়ির পার্কিং ব্যবস্থার জায়গাটিও অনেক ছোট হয়ে যাচ্ছে নানা কারণে। যার ফলে বাধ্য হয়ে পর্যটকদের গাড়ির পার্কিং করতে হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় বা মূল সড়কের উপর। সৈকতের বালু চরে পড়ে আছে ময়লা আবর্জনা। পর্যাপ্ত ওয়াশরুম, নিরাপত্তা কর্মী না থাকা, আবাসন সুবিধা, সন্ধ্যাকালীন বিদ্যুৎ না থাকাসহ নানা সমস্যা রয়েছে।
বোয়ালখালী থেকে টানেল ঘুরে পারকি সৈকতে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসে চরম হতাশা প্রকাশ করেন ইমরুল আলম। তিনি আজাদীকে বলেন, টানেল ঘুরে পারকি সৈকতে বেড়াতে এসে যানজটে পড়ে মন খারাপ হল। ৫ বছর আগে পারকিতে যা দেখেছি বর্তমানেও তা দেখলাম। কোন পরিবর্তন পাইনি। সৈকতের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আনোয়ার বলেন, দীর্ঘদিন জিমিয়ে থাকার পর বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের পর পারকি সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের আনাঘোনা বেড়েছে কয়েকগুন। সৈকত যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তবে সৈকতের সড়কগুলো সংস্কার না হওয়াসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে পর্যটকদের আগ্রহে ভাটা পড়ছে ।
বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ বলেন, ৮০ কোটি টাকায় নির্মাণাধীন পর্যটন কমপ্লেক্সের ডুপ্লেজ কটেজগুলোর ডিজাইন আধুনিক মান সম্মত মনে হয়নি, নির্মাণ কাজে নানা অনিয়ম ও কাজের কয়েক দফা মেয়াদোর্ত্তীণের পর এখন ঝুলে আছে। পার্কিং ব্যবস্থা ছোট, বীচের সড়ক গুলোর উন্নয়ন জরুরি। সব মিলিয়ে মান সম্মত সৈকত গড়তে হলে পরিকল্পিত যে উন্নয়ন দরকার তা হতে পারকি সৈকত অনেক পেছনে।
আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী জানান, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি পারকি সমুদ্র সৈকতকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে নানান পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় পারকি সৈকতে মেগা প্রকল্প পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। অতি শীঘ্রই অভ্যন্তরীণ সড়ক উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।