গ্যাসের প্রি পেইড মিটার সংযোজনে আয় কমেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল)। প্রতি মাসে আড়াই কোটি টাকার বেশি মুনাফা কমেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির। ক্ষতি পোষাতে কেজিডিসিএল প্রি–পেইড মিটারের ভাড়া এক লাফে দ্বিগুণ করে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হলেও কেজিডিসিএল বলেছে, মিটার ভাড়া বাড়লেও তুলনামূলকভাবে বহু কম খরচে গ্যাসের ব্যবহার করা যাচ্ছে। সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে এলএনজি আমদানি করে গ্রাহকদের সস্তায় সরবরাহ দিচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে ৬ লাখ আবাসিক গ্রাহক, সাড়ে তিন হাজার বাণিজ্যিক গ্রাহক এবং ৬৮টি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনসহ ২৮শ’ শিল্প গ্রাহককে গ্যাসের যোগান দেয় কেজিডিসিএল। এই বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের মাঝে ৬২ হাজারের মতো আবাসিক গ্রাহক প্রি পেইড মিটারে গ্যাস ব্যবহার করে। দুই বার্নারের একটি চুলার জন্য প্রতি মাসে বিল পরিশোধ করতে হয় ১০৮০ টাকা। অথচ প্রি পেইড মিটারে একটি পরিবার গড়ে ৬/৭শ’ টাকায় গ্যাস ব্যবহার সারতে পারে। প্রি পেইড মিটারে গ্যাস সাশ্রয় হওয়ায় আবাসিক খাতে কেজিডিসিএল–এর আয় প্রতি মাসে আড়াই কোটিরও বেশি টাকা কমে গেছে। নগরীতে নতুন করে এক লাখ প্রি পেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতোপূর্বের ৬০ হাজার গ্রাহকের প্রি পেইড মিটারের সাথে নতুন প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে দুই হাজারের বেশি মিটার সংযোজন করা হয়েছে। নগরীতে ৬২ হাজার প্রি পেইড মিটারের আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি গ্যাস সাশ্রয় হওয়াটাকে বড় বিষয় হিসেবে দেখছে পেট্রোবাংলা।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রি পেইড মিটারে গ্যাস ব্যবহার যথেষ্ট কমেছে। এতে আয় কমেছে। তবে এই আয় কমাটা কেজিডিসিএলের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কোনো বড় ব্যাপার নয়। এর সাথে গ্যাসের মিটার ভাড়া বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই। সরকার মিটার ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর কেজিডিসিএল সিদ্ধান্তটি কার্যকর করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে ৬টি কোম্পানি গ্যাস বিপণন করে থাকে। এরমধ্যে বাখরাবাদ আগে থেকেই মিটার ভাড়া দুইশ’ টাকা করে নিচ্ছিল। এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পেট্রোবাংলার নিয়ন্ত্রণাধীন ৬টি কোম্পানির মিটার ভাড়া ২০০ টাকা করা হয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকে এই ভাড়া কার্যকর হচ্ছে। এতে গ্যাস ব্যবহারে খরচ ১০০ টাকা বাড়লেও তা দেশের অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় অনেক কম বলে মন্তব্য করে ওই কর্মকর্তা বলেন, এই ১০০ টাকা বাড়ানোর পরও মানুষ রান্নার গ্যাস ব্যবহারে প্রতি মাসে ২/৩ শ’ টাকা সাশ্রয় করতে পারবে। আবার যেসব বাসা বাড়িতে খালি ঘরে বা কোনো কারণে বাসা ভাড়া না হলে ১০৮০ টাকা করে গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে হতো তাদেরকে এই বাড়তি বোঝা টানতে হবে না। শুধু মিটার ভাড়া দিয়েই গ্যাসের সংযোগ রক্ষা করতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার এলএনজি আমদানিতে বিপুল অর্থ ভর্তুকি দিচ্ছে। প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে খরচ পড়ে গড়ে প্রায় ৬৫ টাকা। অথচ সেই গ্যাস আবাসিকে সরকার যোগান দিচ্ছে প্রতি ঘনমিটার মাত্র ১৯ টাকায়। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসে
সরকারের ভর্তুকি গড়ে ৪৫ টাকা। বছর শেষে এই অংক কয়েক হাজার কোটিতে গিয়ে ঠেকে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।