একটা মানুষ সবসময় তার নিজের জন্য বাঁচে না। হোক সে নারী কিংবা পুরুষ। হোক মেয়ে বা ছেলে কিংবা ছোট্ট ছেলে, মেয়ে। যদি সে সত্যি মানুষ হয়ে থাকে।
হ্যাঁ মানুষ, সত্যিকারের মানুষ। যার বিবেচনা বোধ জাগ্রত। যিনি বুকে হাত দিয়ে নির্দ্বিধায় বলতে পারবেন যে তিনি সত্যিই মানুষ। এ কথাটি বলতে গিয়ে যার একবারও বুক কেঁপে উঠবে না। সত্যি এমন মানুষের বড্ড বেশি অভাব।
ছোট বেলায় আমরা যখন খেলতাম, দেখা যেতো যে ছেলেটি বা মেয়েটি খেলতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে খেলায় হেরে যেতো তখন কেউ না কেউ আবার খেলাটি শুরু করার আবেদন করতো। কারণ সে চাইতো না, তার কোনো বন্ধু হেরে যাক। সে ছাড়া সবাই জিতুক। এটাই তার পরম তৃপ্তি। একটু বড় হতেই একটা মেয়ে বা ছেলে পরিবারের সদস্যদের দুঃখ কষ্ট উপলব্ধি করতে গিয়ে নিজে থেকেই আয়ের পথ খুঁজে নেয়। দিন শেষে সবাইকে একটু ভালো থাকার বা ভালো রাখার চেষ্টা। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মুখে এক টুকরো হাসি উপহার দেয়া যেনে তার নৈতিক দায়িত্ব। যে মানুষ টি এটা ভাবে সে সত্যি একজন পরিপূর্ণ মানুষ। কিন্তু এ মানুষ টিরও যে একটু ভালো থাকা প্রয়োজন সেটা অন্যরা ভাবে কি! আমরা প্রতিটি সত্যিকার মানুষ অন্যের জন্য ভাবতে গিয়ে নিজের ভালো লাগা মন্দ লাগা বিষয়গুলো বেমালুম ভুলে যাই। ভুলে যাই, আমাদের ভালো থাকার ওপর নির্ভর করে পুরো একটি পরিবারের ভালো থাকা। যুবক ছেলেটি উপার্জন করা শুরু করলে কোনো কোনো পরিবারের সেই যুবকটি তার কাঁধে তুলে নেয় পুরো পরিবারের দায়িত্ব। কার কী প্রয়োজন, কার কী সমস্যা, কখন কী লাগবে কার ইত্যাদি বিষয়গুলো পূরণ করাই যেনো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। অথচ সেই মানুষ টিই কোন কারনে যদি কখনো সখনো ভুলে যায় কোনো একটি অপূরণীয় অভাব বা প্রয়োজন তখনই নানা প্রশ্নের সম্মুখীন। অবস্থা এমন যে, তার যেনো কোনো সমস্যা হতেই পারে না। সকলের চাহিদা পূরণ সে একটি মেশিন মাত্র। আর কিছু নয়তো বটে। একজন যুবক নারী তিনিও তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যান বাবা– মা, ভা –বোনকে ভালো রাখার। বিয়ের পর সেই যুবক নারীটি প্রাণপন চেষ্টায় মত্ত থাকেন কীভাবে, কোন উপায়ে পরিবারটিকে ভালো রাখা যায়। আর যদি বিবাহিত হোন, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। ঘরের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে কাজের উদ্দেশ্য বের হন। ফিরে এসে আবার সেই পরিবার। কার কী অবস্থা, কে কী খাবে, কখন খাবে ইত্যাদি ইত্যাদি খোঁজ নেয়া এবং পূরণ করাই তার দৈনন্দিন কাজ। এ ক্ষেত্রে কোন ব্যত্যয় ঘটলেও যাবতীয় সমস্যার সূত্রপাত। যতক্ষণ পর্যন্ত দেয়া যায় ততক্ষণ পর্যন্ত দিয়েও শান্তি যেনো তার ভাগ্যে ধুমকেতুর মতো দেখা যায়। যার জন্য করলেন, যার জন্য ভাবলেন, যার জন্য সমস্ত আনন্দ – সুখ বিসর্জন দিলেন। দিনশেষে সেই মানুষ গুলোই আপনাকে অপবাদ দিবে, ভৎসনা করবে। যে ভালোবাসা পাবার জন্য ভালোবাসাটাই ত্যাগ করা সেই ভালোবাসা আর কখনো ভুলেও ফিরে তাকাবে না। তাই যতটুকু দেয়া ততটুকুই যথেষ্ট। তার থেকে কিছুটা সময়, কিছুটা নিজের জন্য রাখা বড্ড প্রয়োজন। নিজেকে ভালো রাখতে গেলে নিজেকে তো ভালোবাসতেই হবে। নিজেকে ভালোবাসার কোনো বিকল্প চলে না।
আসুন, সবার প্রয়োজন মিটিয়ে নিজেকে একটু সময় দেই। নিজেকে নিয়ে একটু ভাবি। নিজের ভালোলাগা মন্দ লাগা নিয়ে নিজের সঙ্গেই মিতালি করি। দেখবেন, জীবন অনেক সুন্দর, পরিপাটি, নিঁখুত। দিনশেষ নিজেকে ভালোবাসি পরিপূর্ণরূপে।