চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ২০০ জনের অধিক গবেষকদের নিয়ে চবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) যৌথ উদ্যোগে প্রথম আন্তর্জাতিক জীবপ্রযুক্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের অডিটোরিয়ামে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে শেষ হয়। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে এবং তা সনাক্তকরণে কিভাবে জীবপ্রযুক্তিকে কাজে লাগানো যায়, বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের কারণ অনুসন্ধানে জিনোম সিকোয়েন্স বা জিন এডিটিং প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা যেতে পারে, বন্যা এবং খরায় কিভাবে শত শত কোটি টাকার ক্ষতি কমানো যেতে পারে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিভাবে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধে কাজ করতে পারে এ রকম অনেক দেশি–বিদেশি জীবপ্রযুক্তিবিদদের গবেষণা উঠে এসেছে এ আন্তর্জাতিক বায়োটেকনোলজি সম্মেলনে।
চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো আয়োজিত জীবপ্রযুক্তি বিষয়ক এই সম্মেলনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র শিক্ষকসহ ৫২০ এর অধিক দেশি–বিদেশি গবেষক মিলিত হন। এবং তাদের গবেষণা গুলোকে অন্যদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে আয়োজন করেন একাধিক সেমিনার। পাঁচটি বিষয়বস্তুকে সামনে রেখে গবেষকগণ আলোচনা করেন। সেগুলো হলো– প্রাণী, মৎস্য ও সামুদ্রিক জৈবপ্রযুক্তি। বায়োইনফরমেটিক্স সিস্টেম এবং কম্পিউটেশনাল বায়োটেকনোলজি। শিল্প, ফার্মাসিউটিক্যাল এবং খাদ্য জৈবপ্রযুক্তি। চিকিৎসা, স্বাস্থ্য এবং মাইক্রোবিয়াল জৈবপ্রযুক্তি। উদ্ভিদ, কৃষি এবং পরিবেশ জৈবপ্রযুক্তি। এদিন সম্মেলন উদ্বোধন করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতি ড. একে আজাদ চৌধুরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপ–উপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষক প্রফেসর ড. উৎপল বোরা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, আইসিডিডিআরবি’র সিনিয়র সাইন্টিস্ট ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক ড. মো. সলিমুল্লাহ, আইসিডিডিআরবির সিনিয়র সাইন্টিস্ট (ইমিরেটাস) ড. রুভানা রাকিব, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তৌহিদ হোসেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল–ফোরকান, অধ্যাপক ড. লুলু ওয়াল মরজান, অধ্যাপক ড. নাজনীন নাহার ইসলাম, অধ্যাপক ড. আদনান মান্নানসহ পৃথিবী খ্যাত ২০০ জন গবেষক।
আগামী দিনের জন্য জীবপ্রযুক্তি, অসাধারণত্বের পথে স্লোগানে শনিবার দিনব্যাপী নানা আয়োজনে অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ভারতসহ পৃথিবীর ৮টি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং শিল্প উদ্যোক্তারা তাদের জীবপ্রযুক্তির দক্ষতা এক টেবিলে নিয়ে আসেন। এতে উল্লেখযোগ্য একটি পর্ব ছিল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করা অনূর্ধ্ব ৪০ বছরের তরুণদের নিয়ে, যারা তাদের বিখ্যাত জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা গুলো নিয়ে প্রদর্শন করেন। এই পর্বের নামকরণ করা হয় ‘ইয়ং ইমাজিন বায়োটেকনোলজিস্ট’। এই পর্বের উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল অটিজম প্রতিরোধে কিভাবে জিনকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি এবং প্রজনন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কিভাবে জিন ও জিনোমকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিভাবে উদ্ভিদের নির্যাস থেকে সনাক্তকৃত ক্যান্সার প্রতিরোধ ড্রাগ আগামী দিনের মানুষের ক্যান্সার প্রতিরোধে ব্যবহার হতে পারে। কিভাবে হাড়ের ক্ষয় ও বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ‘মাইক্রো আর এন এ’ নামে একটি প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা যায়। সমাপনী অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি দেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের জীব প্রযুক্তি গবেষণায় বিনিয়োগের আহ্বান জানান। বিশেষভাবে তিনি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি গুলোকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে আহ্বান জানিয়েছেন।