মানব কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের জ্ঞানকে যে প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন আবিষ্কার ও উৎপাদনে রূপ দেয়া হয় তাকে বলে প্রযুক্তিবিদ্যা। আধুনিককালে মানব জীবনের সাথে প্রযুক্তি ওতপ্রাতভাবে জড়িত। তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতি মুহূর্তে আমাদের কাজে লাগে। মানুষ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে তথ্যপ্রযুক্তির সেবা গ্রহণ করে আসছে। যেমন– মোবাইল, টেলিফোন, কম্পিউটার, সফ্টওয়্যার, নেটওয়ার্ক, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি। তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে যেমন অভাবনীয় পরিবর্তন এনেছে, তেমনি দেশ ও জাতির অগ্রগতিতে অপরিহার্য অবদান রাখছে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে বেকার মানুষ কর্মসংস্থানের সন্ধান পেয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে, জনশক্তি ও ব্যবসা–বাণিজ্যের প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
আধুনিককালে বিশ্বজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তির জয়জয়কার ধ্বনিত হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির হাত ধরে বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। বাংলাদেশও এ প্রযুক্তি থেকে পিছিয়ে নেই। গত দশ বছর ধরে বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে। স্কুল–কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ দেশব্যাপী তরুণ প্রজন্ম তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। বাংলাদেশের বিভিন্ন জরিপ সংস্থার তথ্যসূত্রে জানা যায়–গত দশ বছরে আমাদের দেশ তথ্যপ্রযুক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে। জাতীয় উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা প্রশংসনীয়।
দেশ ও জাতির উন্নয়ন অগ্রগতিে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশেই দিন দিন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও এখন অসংখ্য তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, ক্রয়–বিক্রয়, ব্যবসায়–বাণিজ্য, ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। কম্পিউটার হার্ডওয়ার, সফ্টওয়ার, ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির দোকান দিয়ে মানুষ খুব ভালো ব্যবসাও করছে। তাছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির নানা প্রোগ্রামের ওপর মেলা প্রদর্শনী, প্রতিযোগিতা, সেমিনার ইত্যাদির আয়োজনে করা হয়। আর এই জন্যই তথ্যপ্রযুক্তি দ্রুত দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে এবং দেশ ও জাতির উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে।
বর্তমান যুগে বৈজ্ঞানিকদের সবচেয়ে বিষ্ময়কর আবিষ্কার তথ্যপ্রযুক্তি। মানুষ ঘরে বসে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দূরের মানুষের সাথে যোগাযোগ থেকে শুরু করে কেনা–বেচার কাজও করছে। তথ্যপ্রযুক্তি–বিদ্যা কাজে লাগিয়ে মানুষ বেকারত্ব দূর করতে পারছে। অনেকে ঘরে বসেই উপার্জন করতে পারছে। প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া এক মুহূর্তও চলা সম্ভব নয়। তাই বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকেও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে অর্থনীতিক উন্নতিতে অবদান রাখতে হবে। বাংলাদেশের জনগণকে প্রযুক্তিসমৃদ্ধ দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে। ইতিমধ্যেই দেশের প্রতিটি জেলায় উপজেলায় ইন্টারনেট পৌঁছে দিয়েছে সরকার।
তথ্য প্রযুক্তি দ্রুত প্রসারের লক্ষ্যে সরকার ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা’ অনুমোদন করেছে। এই নীতিমালার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের প্রয়াসে সরকার ঢাকার প্রাণকেন্দ্র কারওয়ান বাজারে ৭০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ফ্লোরে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি আইসিটি ইনকিউবেটর স্থাপন করেছে। স্কুল পর্যায় থেকে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সংযুক্ত করেছে সরকার।
তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলছে প্রতিনিয়ত যা দেশের উন্নতিতে ব্যাপক ভুমিকা রাখবে।
তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নজিরবিহীন উন্নতির ফলে গোটাবিশ্ব আজ গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি দুরকে এনেছে চোখের সামনে, পরকে করেছে আপন আর অসাধ্যকে সাধন করেছে।
বর্তমানে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ ও চর্চার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে।
একবিংশ শতাব্দীর সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ দুই আবর্তিত হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তিকে ঘিরে। তাই একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুুত হতে এবং জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় ও উজ্জ্বল করতে হলে তথ্য প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই।
ভবিষ্যতের বৈশ্বিক অগ্রগতিকে এ খাতই নেতৃত্ব দেবে আর্থসামাজিক কাঠামোকে শক্ত ভিত্তি প্রদান করবে। বিশ্বায়নের সুবিশাল আঙিনায় তথ্য প্রযুক্তির বিশাল অবদানের ফলে সম্ভাবনার যে জগৎ সৃষ্টি হয়েছে সেখানে বাংলাদেশ এখনো শিশু হলেও ধীরে ধীরে অগ্রগতি সাধন করছে। আমরা গর্বিত, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে অভূতপূর্ব উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
লেখক : কবি ও গল্পকার