অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসার মাধ্যমেই রচিত হোক মানবিক সেতুবন্ধন কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ। শীত মানেই কারো জীবনে কুয়াশার ভোরে শীতের পিঠা খাওয়া, গল্পের আসরে বসে ধুমায়িত চা–কফির উষ্ণ স্বাদ বা দীর্ঘ রাতে লেপ–কম্বলের ওম লাভের আনন্দ। সমাজের সংগতিসম্পন্ন ও সচ্ছল মানুষের জন্য শীত ঋতু হিসেবে আনন্দ ও খুশির বার্তাবহ হলেও দেশের বৃহত্তর জনজীবনে শীত বিভীষিকা ও কষ্টের বার্তাবাহক। কিছু সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জীবনে শীত মানে ভয়াবহ দুঃসংবাদ। শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক টুকরো শীতের কাপড় তাদের জন্য যেন আরাধনার ধন। হাড়কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত জনজীবনে শৈত্যপ্রবাহ থেকে বাঁচার জন্য অসহায় দরিদ্র মানুষের প্রয়োজন শীতবস্ত্রের। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক মানুষের প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র নেই শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। আমাদের আশপাশেও এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়।
কথায় আছে মাঘের শীতে বাঘ পালায়। দেশে এখন শীতের তীব্রতা বাড়ছে। শীতের তীব্রতা উত্তরাঞ্চলে খুবই ব্যাপক আকারে বেড়েছে এবং চট্টগ্রামে ও শীতের তীব্রতা যথেষ্ট অনুভূত হচ্ছে। ঠাণ্ডার প্রভাব থাকবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কয়েক দিন পর কুয়াশা আর হালকা বৃষ্টিপাত দেখা যাবে। তখন শীতের তীব্রতা আরো বাড়তে দেখা যাবে। কনকনে শীতে ঠকঠক করে কাঁপা মানুষের গায়ে শীতবস্ত্র জড়িয়ে তার মুখে হাসি ফোটানোর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে এই মুহূর্তে। এর মাধ্যমে প্রকাশ পায় মানুষের প্রতি আমাদের মমত্ব ও ভালোবাসার। আমরা চাইলেই এসকল দুঃখী মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ানো শুধু সামজিক দায়িত্বই নয় এটা মানুষের ধর্মীয় দায়িত্বও বটে। শীতের এই সময়ে নিঃস্বার্থভাবে শীতার্ত মানুষের সাহায্য ও সেবা করাই মানবতার সেবা। এমন মহৎ ও পুণ্যময় কাজই সর্বোত্তম ইবাদত।
মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অপরের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ–দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৬)। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘তাদের (বিত্তশালী) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত : ১৯)। হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (বোখারি, হাদিস : ১৭৩২)।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়ায় মানুষকে বস্ত্র দান করেছে, সেদিন (রোজ কিয়ামতের দিন) তাকে জান্নাতের পোশাক দান করা হবে।’ (আবু দাউদ), শীত বস্ত্র বিতরণ হল একটি মানবিক ও ধর্মীয় কাজ। শীতের কারণে অনেক দরিদ্র ও অসহায় মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে পড়ে। তাদের পাশে দাঁড়ানো ও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হল মানবতার সেবা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছেন।
যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তাদের দুরবস্থা এই শীতে যেন সর্বাধিক। এখনই জরুরি দুঃস্থ অসহায় মানুষের জন্য মানবতার হাতটা প্রসারিত করার। শীতবস্ত্র ও গরম কাপড়ের অভাবে যে অবর্ণনীয় দুঃখ–কষ্টের মধ্য দিয়ে শীতার্ত ব্যক্তিদের দিন কাটছে এ অবস্থার শিগগিরই অবসান ঘটাতে হবে। শীতে অনেক মানুষ ফ্লু, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, জ্বর, কাশি ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়। শীতবস্ত্র পরিধান করে এই রোগগুলো থেকে বাঁচা যায়। যারা শীতজনিত রোগব্যাধিতে ভুগছে, তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ওষুধপথ্য ও সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা একান্ত প্রয়োজন। শীতবস্ত্র বিতরণ করে আমরা শীতজনিত রোগের প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারি। শীতবস্ত্র বিতরণ করে আমরা মানুষের জীবন বাঁচাতে পারি। শীতবস্ত্র বিতরণ করে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। আমরা মানুষের দুঃখ–কষ্ট কমিয়ে দিতে পারি।
বাংলাদেশে অনেক সরকারি, বেসরকারি, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন শীতবস্ত্র বিতরণ করে থাকে। এদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখ করা যায় লায়ন্স, রোটারী, বিডিআরএফ, বিআরএসি, আনন্দ, বিদ্যানন্দ, বিশ্ব শান্তি মিশন, ইসলামিক রিলিফ, বিশ্ব যুগ্ম সমাজ কল্যাণ সংস্থা, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি, বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় জামিয়াতুল উলামা, বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় হিন্দু মহাসভা, বাংলাদেশ বৌদ্ধ খ্রিস্টান ও সমপ্রদায় সংঘ, বাংলাদেশ ক্রিস্টান সমাজ সেবা সংস্থা, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমাজ সেবা সংস্থা ইত্যাদি। এছাড়াও ব্যক্তিগত ভিত্তিতে অনেক মানুষ শীতবস্ত্র বিতরণ করে থাকে। কিন্তু দেশের বিশাল দুঃস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য এই দান অনেক সময় যথেষ্ট হয়ে উঠে না। দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির কাছে অসহায় হয়ে উঠা নিম্ন বৃত্তের মানুষের কাছে শীতবস্ত ক্রয় এখন সোনার হরিণ! অর্থনীতির কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের মানবিক সহযোগিতা আরো বাড়াতে হবে।
দেশের সর্বস্তরের হৃদয়বান, মহৎ, পরোপকারী, দানশীল ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, শীত মৌসুমে শীতার্ত গরীব, অসহায়, দুঃখী মানুষগুলোকে সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার জন্য।