ফ্লোর প্রাইস তোলার সুফল দ্বিতীয় দিনেই

ফ্লোর উঠল আরও ২৩ কোম্পানির

| মঙ্গলবার , ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:২৬ পূর্বাহ্ণ

৩৫টি কোম্পানি বাদ দিয়ে বাকিগুলোর শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর দ্বিতীয় কর্মদিবসেই শেয়ারের ক্রেতার দেখা মিলল। ছয় মাসেরও বেশি সময় পর লেনদেন ছাড়াল হাজার কোটির ঘর।

প্রথম দিন উদ্বেগ আতঙ্কের মধ্যে যেসব কোম্পানি ১০ শতাংশ বা কাছাকাছি দর হারিয়ে ফেলেছিল, সেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু কোম্পানি হারিয়ে ফেলা দর ফিরে পেয়েছে। তবে টানা দ্বিতীয় দিন সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে দরপতন হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। খবর বিডিনিউজের।

গত বৃহস্পতিবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তার সিদ্ধান্ত জানানোর পর দরপতনের সীমা ছাড়া লেনদেন শুরু হয় রোববার। ছয় মিনিটের মধ্যেই সূচক পড়ে যায় ২১৬ পয়েন্ট। তবে এই ধাক্কা সামলে নিয়ে পরের সোয়া চার ঘণ্টায় সেখান থেকে পুনরুদ্ধার হয় ১২০ পয়েন্ট।

গতকাল সোমবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে সূচক পড়ে যায় ৫১ পয়েন্ট। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। ১০টা ১৭ থেকে বাকি সময় ইতিবাচক প্রবণতা দিয়েই শেষ হয় লেনদেন। শেষ পর্যন্ত সার্বিক সূচক ডিএসইএঙে ১৪ পয়েন্ট যোগ হয়ে অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৫৪ পয়েন্ট। আগের দিন ৯৬ পয়েন্ট কমে যাওয়ার পর এটি বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস যোগাবে বলেই বিশ্বাস করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

শেষ পর্যন্ত ২০৭টি কোম্পানির দর বৃদ্ধি, ১৪৫টির দরপতন এবং ৪০টির দর আগের দিনের সমান থেকে শেষ হয় লেনদেন। সকালে ১০ শতাংশের কাছাকাছি দর হারিয়ে ফেলা বেশ কিছু কোম্পানির দর দিন শেষে ১০ শতাংশ বেড়েছে, বিপুল সংখ্যক ক্রেতার দেখাও মিলেছে। এই হিসাবে প্রথম এসব কোম্পানির দর তার আগের ফ্লোর প্রাইসে ফিরে এসেছে, কিন্তু এতদিন ক্রেতা না থাকলেও এখন তা আছে। আবার ফ্লোর উঠার পর শেয়ারের ক্রেতার দেখা মিলেছে, দামও বেড়েছে, এমন কোম্পানিও আছে। দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণই বলে দিচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সক্রিয় হয়েছেন ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীরাও। সারা দিনে হাতবদল হয়েছে এক হাজার ৪২ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার, যা ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই এক হাজার ৪৪ কোটি টাকা ৫৬ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।

সিভিসি ব্রোকারেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যেমন বিনিয়োগ বাড়িয়েছে, তেমনি অনেক ব্যক্তিও শেয়ার কিনেছেন। তবে এখনও বাজার পর্যবেক্ষণে আছেন সাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, বাজারকে কোনো পক্ষ কৃত্রিমভাবে সাপোর্ট দিচ্ছে। সূচকের পতন হওয়ার পরপরই আবার উঠে পড়া মানেই হচ্ছে কেউ টেনে তুলছে। তারা যদি বাজার থেকে হঠাৎ করে বেরিয়ে যায় তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কী অবস্থা হবে? তাই আরো কয়েকদিন দেখে নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেব।

সূচকে সবচেয়ে বেশি ১.০১ পয়েন্ট যোগ করেছে স্কয়ার ফার্মা। এর বাইরে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন, ইউনিলিভার, ট্রাস্ট ব্যাংক, বার্জার পেইন্টস, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট, মেরিকো, নাভানা ফার্মা ও বসুন্ধরা পেপারও সূচকে কিছু পয়েন্ট যোগ করেছে। বিপরীতে ৭.৪৯ শতাংশ দর হারানো ওয়ালটন হাইটেক কোম্পানি একাই সূচক কমিয়েছে ৭.৪৪ পয়েন্ট। তিতাস গ্যাসের শেয়ারদর ৯.৭৬ শতাংশ কমায় সূচক পড়েছে আরো ১.১৯ পয়েন্ট। আইসিবি, আইপিডিসি, জিপিএইচ ইস্পাত, এসিআই, বিকন ফার্মা, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও পাওয়ার গ্রিডও সূচক টেনে ধরার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকায় ছিল।

উঠল ২৩ কোম্পানির ফ্লোর : শেয়ারের সর্বনিম্ন দর তুলে দেওয়া হলো আরো ২৩টি কোম্পানির। ফলে এখন কেবল ১২টি কোম্পানির দর ‘কৃত্রিমভাবে’ ধরে রাখা হবে। সাড়ে তিনশরও বেশি কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য তুলে দেওয়ার পর দুই দিন বাজারের আচরণ দেখে গতকাল সোমবার এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। আজ মঙ্গলবার থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

যেসব কোম্পানির ফ্লোর নতুন করে তুলে দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে ছয়টি বস্ত্র খাতের। এগুলো হল এনভয় টেঙটাইল, এইচআর টেঙটাইল, কাট্টলি টেঙটাইল, মালেক স্পিনিং, সায়হাম কটন ও শাশা ডেনিমস। এর ফলে এই খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে কোনোটির ফ্লোর প্রাইস থাকছে না। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচটি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এগুলো হল বারাকা পাওয়ার, ডরিন পাওয়ার, পদ্মা অয়েল, সামিট পাওয়ার ও ইউনাইটেড পাওয়ার। ফলে এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ২০টির শেয়ারদরে কোনো নিম্ন সীমা নেই। তৃতীয় সর্বোচ্চ তিনটি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তোলা হয়েছে আর্থিক খাতে। এগুলো হল ডিবিএইচ, আইডিএলসি ও ন্যাশনাল হাউজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স। এই খাতেরও ২৩টি কোম্পানির কোনোটিতে এখন আর ফ্লোর প্রাইস নেই। তিনটি কোম্পানির ফ্লোর তোলা হয়েছে প্রকৌশল খাতেও। এগুলো হল বিএসআরএম স্টিল, কেডিএস এঙেসরিজ ও ন্যাশনাল পলিমার। এই খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে এখন ৪০টির শেয়ারের কোনো সর্বনিম্ন দর নেই। এছাড়া টেলিযোগাযোগ খাতের বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি এবং বিবিধ খাতের ইনডেঙ অ্যাগ্রোর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়েছে। বীমা খাতের সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্স, সিমেন্ট খাতের কনফিডেন্স সিমেন্ট, সিরামিকস খাতের শাইনপুকুর সিরামিকস এবং কাগজ ও প্রকাশনা খাতের সোনালী পেপারের ফ্লোর প্রাইসও তুলে দেওয়া হয়েছে। এসব খাতে কোনো কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন দর আর রইল না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই লাখ ৬০ হাজার টন সার ও এলএনজি কেনার প্রস্তাব আসছে
পরবর্তী নিবন্ধআহত ছেলেকে সাথে নিয়ে স্ত্রীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিল স্বামী