পাহাড়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। রাঙামাটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বিগত ১৫ বছরে রাঙামাটির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এর মধ্যে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি কলেজ, মাদ্রাসা, সরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১৮৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। এতে রাঙামাটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ব্যয় হয়েছে ২২৫ কোটি ৫৪ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা। দুর্গম পাহাড়ে বর্তমান সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে সরকার যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাঙামাটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯–১০, ২০১০–২০১১ অর্থবছরে নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে একাডেমিক ভবন নির্মাণে প্রকল্পের আওতায় রাঙামাটি জেলায় ৫ কোটি ৬২ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে মোট ১৭টি বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়। শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা সদরে অবস্থিত সরকারি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজসমূহের উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০১২–১৩ থেকে ২০২২–২৩ অর্থবছরে ২১ কোটি ৯৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা হয়। এর মধ্যে বর্তমানে ৫ টি প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রাঙামাটিতে ৯ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে টেকনিক্যাল কলেজ। ২০১০–২০১১ ও ২০১৬–২০১৭ অর্থবছরে রাঙামাটি ১২ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাঙামাটিতে নির্মাণ করা হয়েছে ৬ টি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন। ২০১–২০১৫ এবং ২০২২–২০২৩ অর্থবছরে ২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মনোন্নয়নের লক্ষে রাঙামাটির বেসরকারি ৮টি কলেজের উন্নয়ন করা হয়েছে। ২০১১–২০১২ ও ২০১৭–২০১৮ সালে বেসরকারি মাদ্রাসাসমূহের উন্নয়নে ৩ কোটি ৬৫ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ৭ টি মাদ্রাসার উন্নয়ন করা হয়। ২০১৯–২০২০ এবং ২০২২–২০২৩ অর্থবছরে ৭ কোটি ১৯ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬ টি মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন। ২০১০–২০১১ এবং ২০২২–২০২৩ অর্থ সালে ৪৪ কোটি ৪৫ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা ব্যয়ে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়েরসমূহের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাঙামাটির ৩২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আরো ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজ চলমান রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে, রাঙামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙা ইউনিয়নের খারিক্ষং উচ্চ বিদ্যালয়ের (সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক সুকুমার বড়ুয়া বলেন, পাহাড়ের এই বিদ্যালয়টি এক সময়ে খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। বর্তমান সরকারের আমলে ২০১৯–২০ অর্থ বছরে বিদ্যালয়টি দ্বিতল করে দেয়। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৫০ জন ছাত্র–ছাত্রী অধ্যায়ন করছে। খারিক্ষং উচ্চ বিদ্যালয়টি অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে ছাত্র–ছাত্রীরা সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে তারা পড়ালেখায় মনোনিবেশ করতে পারছেন।
রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের বরাদম স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক অরুণ কান্তি চাকমা বলেন, বর্তমানে সরকারের বিগত ১৫ বছরে মাধ্যমিক শিক্ষার অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, আমার এই বিদ্যালয়টি এক সময় পরিত্যক্ত ভবন ছিল। পরবর্তীতে রাঙামাটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর নতুন করে ভবনটি তৈরি করে দেন।
রাঙামাটির লংগদু সরকারি মডেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আজগর আলী বলেন, আমাদের লংগদু মডেল কলেজটি সরকারিকরণ ও চারতলা বিশিষ্ট ভবনটি করে দেয়ার জন্য আমাদের সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার ও সাবেক পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুরকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, এই কলেজে বর্তমানে ১৪০০ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী বিজক চাকমা বলেন, বিগত ১৫ বছরে বেশকিছু প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। রাঙামাটির প্রত্যন্ত অঞ্চলে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত এই উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন সরকার। তিনি বলেন, রাঙামাটির দুর্গম বিলাইছড়ির ফারুয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ভারত সীমান্তবর্তী বরকলের ঠেগামুখ খুব্বাং উচ্চ বিদ্যালয়গুলোও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছেন সরকার। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় পাহাড়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন সরকারের জন্য একটি মাইলফলক।