খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পানছড়ি বাজার। এই বাজারে ছোট–বড় ৫ শতাধিক দোকান রয়েছে। বাজারের উপর অন্তত ৩০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল।
সংগঠনের চার নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে বাজার বয়কটের মেয়াদ আরো এক মাস বাড়িয়েছে আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ। এতে ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ায় আর্থিক লোকসানের পাশাপাশি ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হয় ইউপিডিএফের চার নেতা। হত্যার ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ১২ ডিসেম্বর থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত এক মাস পানছড়ি উপজেলার প্রধান বাজার বয়কটের কর্মসূচি দিয়েছে আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ। গতকাল শুক্রবার পুনরায় প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে বাজার বয়কটের কর্মসূচি আরো এক মাস বাড়িয়েছে সংগঠনটি।
এমনিতেই ক্রেতা সমাগম না থাকায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। অনেক ব্যবসায়ী কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছেন না।
পানছড়ি বাজারের প্রাণকেন্দ্রের হোটেল ব্যবসায়ী সুকুমার দত্ত বলেন, ‘আমি ২৮ বছর ধরে হোটেল ব্যবসা করছি। কোনোদিন এই অবস্থার সম্মুখীন হই নাই। গত এক মাস যাবত বেচাকেনা নাই। ক্রেতারা বাজারে আসছেন না। কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারছি না। আমরা দোকান না খুলে পারছি না আবার খুললেও সমস্যা হচ্ছে। দোকান খুললেই ৮ হাজার টাকা কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়। কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে।’
বাজারের জননী স্টোরের মালিক অমর চন্দ্র দে বলেন, বাজারের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ব্যবসা–বাণিজ্য নাই। এমন পরিস্থিতিতে কর্মচারী ও দোকানের ভাড়া দিতে কষ্ট হচ্ছে। সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছি সেগুলো কীভাবে পরিশোধ করব? আগে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হত। এখন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা হয়। সমস্যা সমাধানে আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই।’
বাজারের মা ফার্মেসির মালিক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আগে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতাম। অথচ এখন তিনশ টাকাও বিক্রি করতে পারি না। আমরা পরিকল্পনা করছি বাজারের দোকানপাট বন্ধ করে দিব।’ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজার বয়কটের কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান তারা। ব্যবসায়ীদের দাবি, সবাই বাজারে আসুক। বেচাকেনা করুক। তাদের পার্টির মধ্যে দ্বন্দ্ব তারা মিটিয়ে নিক। বাজার যাতে চলে।’
পানছড়ির বাজার পরিচালনা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয় প্রসাদ দেব বলেন, ‘এক মাসের বাজার বর্জন কর্মসূচি দিয়েছিল আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ। কর্মসূচি এখন আবার আরো একমাস বাড়িয়েছে। আমরা ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা করছি। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছি না। আগে আমাদের হাটের দিন ৯ কোটি টাকার মতো লেনদেন হতো। এখন এক কোটি টাকাও হয় না।’
দোষীদের গ্রেপ্তার না করায় বাজার বয়কটের কর্মসূচি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপিডিএফের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা। তিনি বলেন, ‘এতো বড় একটা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা হলো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাই আমরা বাজার বয়কটের কর্মসূচি দিয়েছি।’
সমস্যা সমাধানে সমন্বিতভাবে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মুক্তা ধর। তিনি বলেন, বয়কটের কারণে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা তো চাইব না জনসাধারণের ক্ষতি হোক। সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অজ্ঞাত ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে মামলা হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।