দীর্ঘদিন ধরে চাহিদা অনুযায়ী চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ করা হয় না। ফলে প্রায় সময় এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ কম থাকে। তাই ওসব এলাকায় রান্নার চুলা সারা দিন জ্বলে মিটমিট করে। অনেক এলাকায় রাতে জ্বলে তো সকালে জ্বলে না। সব মিলিয়ে গ্যাস সংকটে সৃষ্ট দুর্ভোগ চট্টগ্রামবাসীর জন্য অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ আছে চট্টগ্রামে আবাসিক এলাকায় গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) গ্রাহকদের মাঝে। বিভিন্ন সময়ে তারা গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না রাখার প্রতিবাদ জানান। কোনো কোনো সংগঠন মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচিও পালন করে। তবে সাধারণ গ্রাহকরা প্রতিবাদের ঝড় তুলেন ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সর্বশেষ মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনালে কারিগরি সমস্যা দেখা দিয়েছে। এতে গতকাল ভোর থেকে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। যথারীতি আবারও গ্রাহকরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশে বেছে নেন ফেসবুককে।
নাগরিক জীবন শিরোনামে মিহির কে চক্রবর্তী পোস্ট করেন– ‘গ্যাস নেই, রান্না–বান্না নেই, আর তাই খাবারো নেই। আহারে! নাগরিক জীবন’। অনুপম পার্থ লিখেন, ‘ঘরে গ্যাস নাই, রাস্তায় গাড়ি নাই– এসব কোনো ব্যাপারই না। আগে জায়গা মতো হাতড়াই দেখেন। জিনিস জায়গা মত আছে কিনা…! আপনারা আবার অন্য কিছু মনে করিয়েন না। আমি পকেটের টাকার কথা বলছি’।
গ্যাস সংকটের কারণে বিভিন্ন হোটেল–রেস্টুরেন্টে চাপ বেড়েছে। এই চাপ সামলাতে অনেক রেস্টুরেন্ট অনলাইনে খাবার সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। বিষয়টি উঠে আসে শাহনেওয়াজ রকির পোস্টে। তিনি লিখেন, ‘চট্টগ্রামে রেস্টুরেন্টগুলোও অনলাইনে অর্ডার অফ করে রেখেছে। কারণ বাসায় গ্যাস নাই বলে রেস্টুরেন্টের ডাইনিংয়ে কাস্টমারের চাপ। কিন্তু ওই রেস্টুরেন্টে যেতেও আপনাকে বাড়তি ভাড়া দিতে হবে। কারণ গ্যাস পাচ্ছে না, এ অযুহাতে সিএনজি চালিত অটোরিকশাগুলোও প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। অল্প একটু গ্যাস যারা পাচ্ছে তারা দ্বিগুণ–তিনগুণ ভাড়া হাঁকাচ্ছে। এটাকে কি একটা দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলা যায়?’
ব্যঙ্গ করে সোহরাব শাহীন নামে একজন পোস্ট দেন– ‘গ্যাস নামক পদার্থ আজ ভোর থেকে নিখোঁজ। কোনো ব্যক্তি তার সন্ধান দিতে পারলে উপযুক্ত পুরস্কার প্রদান করা হবে’। মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী লিখেন– ‘দইজ্জ্যার তলে গাড়ি চলে, চট্টগ্রামত গ্যাস ন জ্বলে’।
হৃদয় হাসান বাবু লিখেন– ‘গ্যাসের জেয়াফত চলছে। চট্টগ্রামের গ্যাস নাকি মারা গেছে! গতরাত থেকে বাসাবাড়িতে গ্যাস নেই। চরম দুর্ভোগে জনগণ। বিশেষ করে ফ্ল্যাট বাড়িতে অবস্থা খারাপ। কেউ কেউ প্রেশার কুকার, কেউ রান্না করছে গ্যারেজে লাকড়ির চুলা বানিয়ে। কেউবা মনের দুঃখে বিল্ডিংয়ের সবার কাছ থেকে চাঁদা তুলে পিকনিক করে পেট তাজা করছে। এভাবেই চলছে মৃত গ্যাসের জেয়াফত।’
ইনতেশার নামে একজন লিখেন– ‘বিগত দুই মাস যাবত চট্টগ্রামে লাইনের গ্যাস প্রতিদিন ২–৩ ঘন্টার বেশি থাকে না। ঠিকই মাস শেষে বিল ধরিয়ে দেয়, এইসব দেখার কেউ নেই। তাদের এই ২–৩ ঘন্টার গ্যাস সরবরাহ করে রাত ১২টার পরে, মানে কি এক আজিব কিছিমের অথোরিটি! আমাদের সাধারণ জনগণকে কি মনে করে সেটাই ভাবছি! চট্টগ্রাম ইউরোপ হওয়ার সাথে সাথে ইউরোপের মতোন গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে, অথচ কারো কোন জবাবদিহিতা নেই, কোন নোটিশ নেই।’