তিন সন্তানের সাফল্য এবং একজন শান্তিমালা তঞ্চঙ্গা

কাজী মোশাররফ হোসেন, কাপ্তাই | বুধবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ

শান্তিমালা তঞ্চঙ্গা কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্‌গা ইউনিয়নের ত্রিপুরাছড়া গ্রামের বাসিন্দা। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর অর্থাভাবে আর লেখাপড়া হয়নি। অভাবের সংসারে নিজে লেখাপড়া শিখতে না পরলেও ৩ সন্তানকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করিয়েছেন তিনি। তারা এখন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলায় শান্তিমালাকে কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্মানিত ও পুরষ্কৃত করা হয়। পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শান্তিমালা তঞ্চঙ্গা তার কষ্টের জীবনের কথা তুলে ধরেন।

অর্থাভাবে বেশি দূর লেখাপড়া করতে না পারলেও শান্তিমালা প্রতিজ্ঞা করেন, সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন। তিনি প্রতিজ্ঞা পূরণ করেছেন। ১৯৮০ সালে ত্রিপুরাছড়ার বাসিন্দা স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অবিরত তঞ্চঙ্গার সঙ্গে শান্তিমালার বিয়ে হয়। বিয়ের ১৫ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে অবিরত চাকরি থেকে অবসর নেন। তখন তাদের বড় ছেলে তপন বিকাশ তঞ্চঙ্গা ৫ম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। তপন ছাড়াও এই দম্পতির আরো ৩ সন্তান রয়েছে। তারা হলেন স্বপন বিকাশ তঞ্চঙ্গা, তুহিন তঞ্চঙ্গা ও পপি তঞ্চঙ্গা। নানা কষ্টের মাঝেও ৩ ছেলে এবং ১ মেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে লাগলেন তারা।

ছোটবেলা থেকেই সন্তানরা মাবাবার মনের কথা বুঝতে পারে। তারাও মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, লেখাপড়া শিখতে হবে এবং মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।

দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। শান্তিমালা ও অবিরত তঞ্চঙ্গার সন্তানরাও উপরের ক্লাসে উঠতে থাকে। এখন সরকার বিনামূল্যে পাঠ্যবই দিচ্ছে। শান্তিমালা দম্পতির সন্তানরা তখন সেই সুবিধা পায়নি। লেখাপড়া শিখতে হলে টাকা খরচ করতে হবে। ৪ সন্তানের লেখাপড়ার খরচ অনেক। এত টাকা তারা কোথায় পাবেন?

শান্তিমালা আয়ের পথ খুঁজতে লাগলেন। তিনি হাঁসমুরগি, গরুছাগল পালন করতে লাগলেন। নিজেরা না খেয়ে, সন্তানদের না দিয়ে হাঁস ও মুরগির ডিম এবং হাঁসমুরগি বিক্রি করেন। গরুছাগল বিক্রি করেন। এরই মাঝে পাহাড়ে কলার চাষ শুরু করেন। কলা বিক্রি করেন। এভাবে শান্তিমালার হাতে কিছু টাকা আসতে থাকে। সেই টাকা তিনি সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য খরচ করতে লাগলেন। সন্তানরা আস্তে আস্তে স্কুলকলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। তাদের তিন ছেলে তপন বিকাশ তঞ্চঙ্গা, স্বপন বিকাশ তঞ্চঙ্গা ও তুহিন তঞ্চঙ্গা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেন।

তপন বিকাশ সমাজবিজ্ঞানে এমএসএস পাস করেন। তিনি ৩৩তম ব্যাচে বিসিএস পাস করে ২০১৪ সালে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ওই মন্ত্রণালয়ে সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত আছেন। স্বপন বিকাশ তঞ্চঙ্গা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে এমএসএস পাস করেন। ৩২তম ব্যাচে বিসিএস পাস করে ২০১৩ সালে তিনি বান্দরবান সরকারি কলেজে লেকচারার পদে যোগ দেন। তুহিন জিওগ্রাফি বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এসএস পাস করে অফিসার পদে জনতা ব্যাংকে যোগ দেন। তিনি বর্তমানে জনতা ব্যাংক বান্দরবান জেলায় কর্মরত আছেন। তাদের ৪র্থ সন্তান পপি তঞ্চঙ্গা রাঙ্গুনিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে পাস করে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত আছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে ধরা পড়েছে একমণ ওজনের অজগর
পরবর্তী নিবন্ধবডি ম্যাসাজের আড়ালে চুরি, কক্সবাজার সৈকতে ৩৮ শিশু-কিশোর আটক