সীতাকুণ্ডে এবার সবজির বাম্পার ফলন হলেও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে ন্যায্য দাম পাচ্ছে না কৃষকেরা। সীতাকুণ্ডে ৫টি পাইকারী বাজারে এবার দূর–দূরান্ত থেকে সবজি নিয়ে আসা কৃষকেরা লোকসান দিয়ে সবজি বিক্রি করেছেন। তবে উপজেলা কৃষি অফিসের মতে সবজির বাজারমূল্য সহনশীল পর্যায়ে থাকায় কৃষকরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছে।
উপজেলার ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ভাটিয়ারী, কুমিরা বাজার, বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের শুকলাল হাট, পৌর সদরের মোহন্তের হাট ও বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বড়দারোগার হাট পাইকারি সবজি বাজার। বাজারগুলো সপ্তাহে তিনদিন করে হাট বসে। উপজেলার বিভিন্নস্থান থেকে কৃষকরা পাইকারি বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সবজি নিয়ে আসে হাটগুলোতে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এলাকায় দুই হাজার সাত শত হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। উৎপন্ন হয়েছে বেগুন, মুলা, টমেটো, বরবটি, শসা, লাউ, কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্ষীরাসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৪০হাজার মেট্রিক টন সবজি। এছাড়া প্রায় দুই হাজার আট শত হেক্টর জমিতে শিমের চাষ করা হয়।
বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের শুকলাল হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় অর্ধশতাধিক ভ্যান আর ১০টির মতো ভটভটি গাড়ি করে চাল কুঁমড়া, বরবটি, মিষ্টিকুঁমড়া, বেগুন, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, সীম, টমেটো, পালংশাক, লালশাকসহ বিভিন্ন শাকসবজি নিয়ে কৃষকেরা শুকলালহাট পাইকারি বাজারে ভিড় করছেন। পাইকারি ক্রেতারা ক্রয় করে মহাসড়কে দাঁড়ানো ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে উঠানোর কাজ করছেন। ওই সময় চট্টগ্রাম নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি ক্রেতা জয়নাল আবেদিন বলেন, ন্যায্যমূল্য দিয়ে সবজি কিনে নিয়ে যাই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করে বাজারে বিক্রির সময় আমাদের বেশি লাভ থাকে না। একই কথা বলেন, নুরুল ইসলাম, দিদারুল আলম সহ কয়েকজন পাইকারি ক্রেতা।
গত মঙ্গলবার সীতাকুণ্ড পৌরসভার মোহন্তহাটের সবজির পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সবজি নিয়ে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন কৃষকেরা। পাইকারদের কাছে বিক্রির জন্য উপজেলার বিভিন্নস্থান থেকে ভ্যানে করে এখানে সবজি নিয়ে আসেন কৃষকেরা। ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে সবজি কিনে ট্রাক ও মিনিট্রাকে করে নিয়ে যায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারগুলোতে।
বাজারে আসা বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের সবজিচাষি আবুল কালাম জানান, এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। দু’শ ফুলকপি প্রতিটি ২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। বেশি দামে সার ও কীটনাশক কিনেছি। সেচ দিতেও খরচ হয়েছে অনেক টাকা। ফুলকপি উৎপাদন করতে যে টাকা খরচ হয়েছে, তার অর্ধেক দামে বিক্রি করতে পারছি না। বাজারে আসলে সবাই একদাম বলে। একই ধরনের কথা বলেন পার্শ্ববর্তী মীরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের কৃষক সামসুল আলম, ইদ্রিস মিয়াসহ আরও কয়েকজন চাষি। এই বাজারে আসা সৈয়দপুরের শেখেরহাট এলাকার কৃষক জামাল উদ্দীন জানান, তিনি ৪০ শতক জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। এতে খরচ হয় ৭০ হাজার টাকা। তবে এ পর্যন্ত মাত্র ৪০হাজার টাকা বেগুন বিক্রি করতে পেরেছেন। এমন চলতে থাকলে তার উৎপাদন খরচও উঠবে না। জামাল উদ্দিন আরও জানান, গত দুই সপ্তাহ আগে ৩০কেজি ওজনের এক ভাড় বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০০ টাকায়। আর এখন বিক্রি হচ্ছে ৫/৬’শ টাকায়। জামালের মতো মাথায় হাত পড়েছে মুরাদপুর ইউনিয়নের গোলাবাড়িয়া এলাকার কৃষক আবদুর শুক্কুরেরও। তিনি জানান, ৫০শতক জমিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষ করেছেন। চাষ করতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হলেও এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার টাকার সবজি। বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন রেহান আজাদীকে জানান, সীতাকুণ্ডে এবার ভালো সবজি চাষ হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজির ন্যায্য মূল্য পায়নি। সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ আজাদীকে বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও এবার সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারমূল্য সহনশীল পর্যায়ে থাকায় কৃষকরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছে।