বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। সাগরের করাল গ্রাসে তলিয়ে যাচ্ছে সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি। ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ঝাউবাগানের বিরাট অংশ। গত সোমবার সকাল ১১টার দিকে সৈকতের কবিতা চত্বর ও ডায়াবেটিক পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, জোয়ারে সাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়ে উত্তাল ঢেউ আকারে তীরে আছড়ে পড়ছে। এতে ভেঙে যাচ্ছে সৈকতের ব্যাপক এলাকা। স্থানীয় লোকজন জানান, গত এক মাসে সৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে উত্তর নুনিয়াছড়া ও নাজিরারটেক পর্যন্ত এলাকার অনেক জায়গা পানিতে তলিয়ে গেছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সরওয়ার আলম জানান, সাগরের গ্রাস থেকে সৈকতের দৃষ্টিনন্দন ঝাউবাগান কিছুতেই রক্ষা করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে নাজিরারটেক অংশে প্রায় ৫০ হেক্টর ঝাউবাগান উপড়ে পড়েছে। সৈকতের সমিতিপাড়া, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্টে ভাঙন সবচেয়ে বেশি। কবিতা চত্বরে বন বিভাগের কর্মী আবদুল জলিলের সঙ্গে কথা হয়। দলেবলে তারা তখন উপড়ে পড়া ঝাউগাছ সরাতে ব্যস্ত। কাজের ফাঁকে নাজিরারটেকের এই বাসিন্দা জানান, ২০ বছর ধরে তিনি বন বিভাগে কাজ করছেন। চার বছর ধরেই ঝাউবন কিছু কিছু ভাঙছে, কিন্তু এবার ভাঙন আগের চেয়ে তীব্র।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে কক্সবাজার সৈকতে ৬৯০ হেক্টর ঝাউবাগান করা হয়েছিল। দৃষ্টিনন্দন এই ঝাউবন স্থানীয়দের জন্য যেমন সুরক্ষা প্রাচীর, তেমনি পর্যটকের জন্য অন্যতম আকর্ষণ। তিন বছর ধরে সাগরের আগ্রাসনে অর্ধেক ঝাউবন সমুদ্রে তলিয়ে গেছে। অথচ এই ঝাউবন রক্ষায় কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।
সমিতিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আকতার কামাল জানান, জোয়ারে চলতি মৌসুমে সৈকতের নয়নাভিরাম ঝাউবনের প্রায় পাঁচ হাজার গাছ সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। কয়েক বছর ধরে অব্যাহত ভাঙনে দৃষ্টিনন্দন এই ঝাউবনের এখন এক তৃতীয়াংশ মাত্র অবশিষ্ট রয়েছে। এগুলোও আগামী বর্ষায় রক্ষা হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
কলাতলী এলাকার বাসিন্দা মোর্শেদুল আলম বলেন, কক্সবাজার সৈকতের ঝাউবন শুধু সৌন্দর্য্য রক্ষা করছে না, এই ঝাউবন শহর রক্ষার কাজও করছে। ১৯৯১ সালের এপ্রিলে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের সময় সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল সৈকতের এই ঝাউবন। তিনি জানান, সামপ্রতিক সময়ে সাগরের ভাঙনের হার দেখে লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান আজাদীকে বলেন, ঝাউবীথি রক্ষায় জিও ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ জেলা প্রশাসন কাজ করছে।