চট্টগ্রামের ১৬ বাঁশখালী আসনে নির্বাচনকালীন বিভিন্ন স্থানে পৃথক পৃথক হামলার ঘটনায় প্রায় অর্ধশত আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ২০ জন বাঁশখালী হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছে। গুরুতর আহত ২জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত এমপি প্রার্থী ও সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী নিজ ইউনিয়নের সরল উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এলাকা পরিদর্শনকালে হামলার শিকার হয়ে বাঁশখালী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, নির্বাচনকালীন বিচ্ছিন্ন ঘটনায় রোববার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সরল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড এলাকার দিদারুল ইসলাম (২৩), মো. হাবিব (২০), মো. ইদ্রিস (২৫), শামসুল ইসলাম (৩৬), শফি আলম (৪০), মো. আলমগীর (৩২), মো. নাছির (৪০), পশ্চিম চাম্বল এলাকার মো. রাসেল (২৭), মো. তারেক (২২), সরলের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদের স্ত্রী সৈয়দা জেবু নাহার বেগম (৫৫), ফরিদ আলম (৩৫), কাথারিয়া এলাকার আরফা বেগম (৩৫), মো. ফারুক (৩৫), মো. ফরিদ (৫২), আবদুল হাফিজ (২৯), মো. বেলাল (৩০), মো. শাহাদৎ (৪২), কাথারিয়ার নুরুল ইসলাম (৫২), কালীপুরের পালেগ্রামের মো. ফরহাদ (২৬), নিফা আক্তার (৪৫) বাঁশখালী হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. হীরক কুমার পাল, ডা. দিদারুল হক সাকিব ও ডা. মঈনুল হক। রাত ৯ টা পর্যন্ত বাঁশখালীতে নির্বাচন নিয়ে সংঘটিত বিচ্ছিন্ন ঘটনায় কোনো মামলা কিংবা অভিযোগ হয়নি বলে জানান বাঁশখালী থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মো. কায়কোবাদ।
এদিকে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী নিজ ইউনিয়নের উত্তর সরল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে হামলা করে। এসময় তার ব্যবহৃত গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এসময় তিনি মাথা ও কানে আঘাত পান। গতকাল বিকাল ৩ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে একটি কেন্দ্রে অবরুদ্ধ করে রাখার পাশাপাশি তার গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে মুক্ত করেন। বিকেল চারটা ১৫ মিনিটের দিকে তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসেন। এসময় তার সাথে কয়েক’শ নেতাকর্মী ছিল।
এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের মুজিবুর রহমানের সমর্থকরা সংসদ সদস্যের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে বলে অভিযোগ করেন মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী একেএম মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল। রাসেল বলেন, উত্তর সরল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাইয়ের খবর পেয়ে এমপি মহোদয় সেখানে যান। এসময় ঈগল প্রতীকের লোকজন তার ওপর হামলা চালিয়েছে। উনার মাথা ফেটেছে। সংসদ সদস্যের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। উনাকে উদ্ধারে বিজিবি সদস্যরা এসেছেন।
ঘটনাস্থলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে।
তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমানের ঈগল প্রতীকের কেন্দ্র তত্ত্বাধায়ক মানিক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চলছিল। সংসদ সদস্য নিজে এসে কেন্দ্র দখল করার চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজন বাধা দেয়। তিনি লোকজনকে ধমকালে উত্তেজিত লোকজন তার গাড়ি ভাঙচুর করে। এখানে ঈগল প্রতীকের কোনো সমর্থক ছিল না।
এক কেন্দ্রে মারামারি : চট্টগ্রাম–১৬ (বাঁশখালী) আসনের এক কেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে
উত্তেজনা তৈরি হলে ভোটারদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়। এসময় অনেকে ভোট কেন্দ্র ছেড়ে দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করতে থাকেন। পরে পুলিশ এসে দুই পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নের চূড়ান্ত মুড়া আহমদিয়া পাড়া এবতেদায়ী মাদ্রাসা কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে।
সেখানে চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জসিম উদ্দিন তার সমর্থকদের নিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট দিতে ভোটারদের প্রলুব্ধ করছিলেন। পরে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ঈগলের সমর্থকেরা। এসময় দুইপক্ষের সমর্থকেরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তা মারামারিতে রূপ নেয়।