দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে প্রশাসনের বিশেষ নজর রয়েছে ৬টি সংসদীয় আসনে। ৬টি আসনের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। আসনগুলো হচ্ছে মীরসরাই, সন্দ্বীপ, পটিয়া, বাঁশখালী, সাতকানিয়া–লোহাগাড়া এবং ফটিকছড়ি। এসব আসনে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামের ১৬ আসনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এসব আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, সুপ্রিম পার্টি, তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট, কল্যাণ পার্টিসহ বিভিন্ন দল এবং স্বতন্ত্র মিলে ১২৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কোনো কোনো আসনে প্রার্থীদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ দেখা গেলেও কয়েকটি আসনে উত্তাপ রয়েছে। এসব আসন নিয়ে প্রশাসনেরও উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সাথে স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগ নেতা নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন এমন আসনগুলোতে উত্তেজনা বেশি। ইতোমধ্যে এসব আসনে বিচ্ছিন্ন নানা ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ১০টি নিয়ে বেশি উদ্বেগ নেই। এসব আসনে বিচ্ছিন্ন অঘটন ঘটলেও বড় ধরনের শঙ্কা নেই। তবে সন্দ্বীপ, পটিয়া, বাঁশখালী, সাতকানিয়া–লোহাগাড়া এবং ফটিকছড়ি আসনের ব্যাপারে আমরা বিশেষভাবে সতর্ক রয়েছি। এসব আসনে পরস্পর বিরোধী প্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা কর্মী–সমর্থকদের মাঝেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে রয়েছে।
এসব আসনে বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছি। যেকোনো ধরনের অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা প্রতিহত করে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠানের যাবতীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে উৎসবমুখর করার ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা কঠোরভাবে দমন করা হবে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আজাদীকে বলেন, ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন। এ ব্যাপারে আমরা কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। একাধিক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে সন্দ্বীপ, পটিয়া, বাঁশখালী, সাতকানিয়া–লোহাগাড়া এবং ফটিকছড়ি আসনকে আমরা বিশেষ নজরদারিতে রেখেছি।
তিনি বলেন, সন্দ্বীপে প্রথমে বিজিবি মোতায়েন করিনি। কিন্তু পরে ৬ প্লুাটুন বিজিবি মোতায়েন করেছি। এছাড়া কোস্টগার্ড ও র্যাব সদস্যরাও পুরো সন্দ্বীপকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলবে।
তিনি জানান, পটিয়ায় ৮ প্লাটুন, বাঁশখালীতে ৮ প্লাটুন, সাতকানিয়া–লোহাগাড়ায় ৮ প্লাটুন এবং ফটিকছড়িতে ৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ৮২ জন এঙিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩২ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় সাড়ে ৪ হাজার পুলিশ সদস্য নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পটিয়া, বাঁশখালী, সাতকানিয়া–লোহাগাড়া, মীরসরাই, জোরারগঞ্জ, ফটিকছড়ি–ভূজপুরকে আমরা বিশেষ নজরদারিতে রেখেছি। নির্বাচনের দিন প্রতিটি উপজেলায় নিজে পরিদর্শনে যাবেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকে যেটা বলেছি, এখনো সেটা বলছি, নির্বাচন হবে শতভাগ সুষ্ঠু। কেউ এদিক–ওদিক করার সুযোগের কথা দূরে থাক, চিন্তাও করতে পারবে না। কোনো কেন্দ্রে যদি কেউ বিন্দুমাত্র প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে, সাথে সাথে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। কাউকে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামের ১৬ আসনে প্রায় ৭২ শতাংশ ভোট কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ চিহ্নিত করেছে পুলিশ প্রশাসন। চট্টগ্রামে ১৬ সংসদীয় আসনে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২০২৩টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৫৯টি কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ চিহ্নিত করা হয়েছে। সিএমপি ও জেলা পুলিশ মাঠ পর্যায়ে সরেজমিনে তথ্য যাচাই করে নগরীর ৬টি সংসদীয় আসনের ৬৬০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৪৬টি কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এবং ২১৪টি কেন্দ্রকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার ১০টি সংসদীয় আসনের ১৩৬৩টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে জেলা পুলিশের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ১০১৩টি ভোটকেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ এবং ৩৫০টি ভোটকেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মো. ইউনুচ আলী বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর ৬টি আসনের ৬৬০টি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। উপজেলার ১০টি আসনের ১ হাজার ৩৬৩টি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ।