দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামীকাল। চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের নির্বাচনে কারা হাসবেন বিজয়ীর হাসি, এই নিয়ে শেষ মুহূর্তে চলছে নানা জল্পনা–কল্পনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অংশ না নিলেও নির্বাচনকে ঘিরে সর্বত্র রয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। তবে চট্টগ্রামের মোট ১৬ আসনের মধ্যে অন্তত ১২টি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম–১ (মীরসরাই) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পূত্র মাহবুব রহমান রুহেল। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মীরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম–২ (ফটিকছড়ি) আসনে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের কন্যা খদিজাতুল আনোয়ার সনি। নির্বাচনী মাঠে তাকে শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব। তিনি লড়ছেন তরমুজ প্রতীক নিয়ে। এছাড়া চট্টগ্রাম–৩ (সন্দ্বীপ) আসনে নৌকার প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতার সাথে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী। তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। চট্টগ্রাম–৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে নৌকার প্রার্থী এসএম আল মামুনের সাথে ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী লায়ন মোহাম্মদ ইমরান। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম–৫ (হাটহাজারী–বায়েজিদ একাংশ) আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তার বিপক্ষে ঈগল প্রতীক নিয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী। চট্টগ্রাম–৬ (রাউজান) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। তবে এই আসনে তেমন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই। চট্টগ্রাম–৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এই আসনেও তেমন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
চট্টগ্রাম–৮ (বোয়ালখালী–চান্দগাঁও একাংশ) আসনে নৌকার প্রার্থী না থাকায় দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই আসনে কেটলি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এবং ফুলকপি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন নগরীর জামালখান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর প্রকৌশলী বিজয় কুমার চৌধুরী কিষান। চট্টগ্রাম–৯ (কোতোয়ালী–বাকলিয়া) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এই আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নওফেল অনেকটা সহজে নির্বাচনী বৈতরণী পার হবেন বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
অপরদিকে চট্টগ্রাম–১০ (হালিশহর, পাহাড়তলী, ডবলমুরিং, খুলশী) আসনে নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিপক্ষে ফুলকপি প্রতীক নিয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মনজুর আলম। এছাড়া চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনে নৌকার প্রার্থী এম এ লতিফের বিপক্ষে কেটলি প্রতীক নিয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন।
চট্টগ্রাম–১২ (পটিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর বিপক্ষে ঈগল প্রতীক নিয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় সংসদের বর্তমান হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। চট্টগ্রাম–১৩ (আনোয়ারা) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। এই আসনেও তেমন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এছাড়া চট্টগ্রাম–১৪ (চন্দনাইশ–সাতকানিয়া আংশিক) আসনে নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরী বিপক্ষে ট্রাক প্রতীক নিয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী। চট্টগ্রাম–১৫ (সাতকানিয়া–লোহাগাড়া) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভী। তার বিপক্ষে ঈগল প্রতীক নিয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব। চট্টগ্রাম–১৬ (বাঁশখালী) আসনে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিপক্ষে ঈগল প্রতীক নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৬৩ লাখ ৯৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩২ লাখ ৭৯ হাজার ৬২ জন এবং নারী ভোটার ৩০ লাখ ২১ হাজার ৯০২ জন।