পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচনে সমঝোতা হলেও সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবার নিজের শক্তিতে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানাবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল রোববার দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির আসনগুলোতে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো তালিকা পাইনি। তারা যদি নিজেদের শক্তির উপর দাঁড়িয়ে নির্বাচন করেন, এ মুহূর্তে এটাই হবে তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো খবর।
এবার ভোটে আসার শর্ত হিসেবে জাতীয় পার্টিকে নিজের মতো চালানোর শর্ত জি এম কাদের দিয়েছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর। যদিও এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য আসেনি। রওশন ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোয় আওয়ামী লীগের জাতীয় পার্টি ভাবনায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে বলে নেতারা বলছেন।
তিনটি নির্বাচনে ছাড় দিলেও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর আসনে এবার আওয়ামী লীগ নেতা নাসিরুল ইসলাম খানকে মাঠে থাকতে বলা হয়েছে। দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে অবলীলায় জিতে আসা ফখরুল ইমামের ময়মনসিংহ–৮ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এভাবে ২৩ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২২ জনকেই চাপে রেখেছে আওয়ামী লীগ। কেবল নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনে সেলিম ওসমানকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার চিন্তা করছে না। বিএনপির বর্জনের কারণে আওয়ামী লীগবিরোধী ভোট তাদের বাঙে পড়বে বলেই বিশ্বাস সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সত্যিকারের অপজিশন হিসেবে নিজেদেরকে দাঁড় করানোর এটা মোক্ষম সুযোগ। তারা নিজেরাই নির্বাচন করতে পারলে আমরা স্বাগত জানাই। আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
তিনি বলেন, ১৪ দলের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের জোট, তাদের সঙ্গে আমাদের সিদ্ধান্ত হবে। সেই জোটকে বাইরে রেখে নির্বাচন করব সেই কথা আমরা ভাবিনি। যারা জিতে আসতে পারবেন, আগেও নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন, এ রকম গ্রহণযোগ্য নেতা অবশ্যই বাদ পড়বেন না।
তবে আগের তিন নির্বাচনে শরিকদেরকে যেসব আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছিল, সেখানে পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দেন তিনি। বলেন, এখানে অ্যাটজাস্টমেন্টের ব্যাপার আছে। এসব বিষয় ভেবে দেখা দরকার। মানুষ চায় না, এমন কোনো নাম জোট থেকে আমরা সমর্থন করতে পারব না।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়নি : দলের মনোনয়ন না পেয়েও আওয়ামী লীগের যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদের বহিষ্কারের কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কি দলের পক্ষ থেকে বলেছি যে, যারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন, তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে? এই সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগে এখনো হয়নি।
ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মোট ২৮টি নিবন্ধিত দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বিএনপি একটা দল, এখন ৩২ দল, ৫৪ দল, সেইসব দলও তাদের সঙ্গে নেই। অনেকে তাদের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। বিএনপি না হলে নির্বাচন অশুদ্ধ হয়ে যাবে, এক তরফা হয়ে যাবে কেন? বিএনপির যে ভুয়া আন্দোলন, এ আন্দোলনের কারণ অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছে।
বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গ ধরে রিজভীকে কটাক্ষ করে কাদের বলেন, আজকে তাদের ঝটিকা মিছিল করতে হয় অন্ধকারে। কুয়াশার মধ্যে হঠাৎ করে গুহা থেকে বেরিয়ে শুরু করে দেয় মিছিল, কিছুক্ষণ পর আর নাই। পুলিশ দেখলে আবার চলে যায়। এদের বুকে সাহস নেই।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি তারেক রহমানকে বলব, সাহস থাকলে, রাজনীতি করতে চাইলে, সৎ সাহস থাকলে, আসুন মাঠে। আমার একটা রাজনৈতিক দল, আপনারা আমাদের প্রতিপক্ষ। কিন্তু আপনাদের আমরা শত্রু কখনো ভাবিনি। ষড়যন্ত্র করিনি। খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে যাইনি, জিয়াউর রহমানকে হত্যা করতে যাইনি। আমরা হত্যা রাজনীতি করি না। ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। সৎ সাহস থাকলে কেন আসেন না? লন্ডনে বসে বাংলাদেশে আন্দোলন করবেন, এ ভুলের রাজনৈতিক কারণে আপনারা কিছুদিন পর দলের নেতাকর্মীদেরকে হারাবেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, আজকে বিএনপির এক নেতা, অন্যদের তো খবর নেই, প্রকাশ্যে আসে না। বিএনপির একজন লোক, পেছনে দশ–বারো জন লোক নিয়ে ঝটিকা মিছিল করে। এটা কি আন্দোলন? এতে কি জনগণের সমর্থন আছে? বিএনপির অনেকেই নেতিবাচক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। তার প্রমাণ তাদের দলে অনেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। শুধু সমশের মবিন, তৈমুর আলম খন্দকার নয়, জেনারেল ইবরাহিম বীর প্রতীক সাহেব তাদের বলে ধারণা ছিল।
কাদের বলেন, আজকে অনেকেরই শুভ বুদ্ধি উদয় হয়েছে। অনেকে বিএনপির এই নেতিবাচক রাজনীতিতে জড়িয়ে নিজেদের রাজনৈতিক জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায় না। সুস্থ এবং স্বাভাবিক রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসতে তারা শুরু করেছে। যারা এসেছেন তাদের মধ্যে অনেক বড় বড় নেতাও আছে। শুধু শাহাজান ওমর নয়, অনেকে এসেছেন। তারা বিএনপির রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। আজকে বিএনপির রাজনীতিকে তারা প্রত্যাখ্যান করে রাজনীতির সুস্থ ধারায় ফিরে আসতে শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সামনে বিএনপির অনেক নেতা এবং কর্মী এই অসুস্থ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে সুস্থ ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসবে।
বিএনপির হরতাল–অবরোধে নাশকতার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, চোরাগোপ্ত হামলার জন্য বিএনপি নেতাকর্মী পাচ্ছে না। তাই ভাড়া করা টোকাই দিয়ে তারা হামলা করছে। তাদেরকে দিয়ে বোমা হামলা, পেট্রোল বোমা মারছে, এসব অপর্কম করছে।
ভোটের আগে পুলিশ ও মাঠ প্রশাসনে রদবদলের প্রসঙ্গ ধরে কাদের বলেন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। শৃঙ্খলাজনিত তাদের কোনো ব্যবস্থা বা অন্য কোনো ব্যবস্থা, সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ট্রান্সফার, এগুলো আওয়ামী লীগ করছে না, প্রধানমন্ত্রী করছেন না, সবই নির্বাচন কমিশন করছে।