বিমল মিত্র (১৯১২–১৯৯১)। বাঙালি ঔপন্যাসিক। তিনি বাংলা ও হিন্দি উভয় ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছেন। তার প্রথম উপন্যাস ‘চাই’। ‘সাহেব বিবি গোলাম‘ উপন্যাস তার অন্যতম গ্রন্থ। ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ গ্রন্থের জন্য ১৯৬৪ সালে রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পর এত জনপ্রিয়তা সম্ভবত আর কোনো সাহিত্যিক অর্জন করতে পারেননি। বিমল মিত্র ১৯১২ সালের ১৮ মার্চ কলকাতায় জন্মহগ্রহণ করেন। কর্মজীবনে তিনি রেলে চাকুরি করতেন। একসময় তিনি রেলের চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি সাহিত্যসৃষ্টিতে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর লেখার মাধ্যম ছিলো ছোটগল্প, উপন্যাস। উপন্যাস রচনায় তিনি এতোাঁ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ঈর্ষান্বিত হয়ে আরো বেশ ক’জন নকল লেখক বিমল নামে উপন্যাস রচনা করতে থাকে। তাঁর নামে অন্তত ২০০টি বই বেরিয়েছিল যে বইগুলোর লেখক আদৌ তিনি নন। বাধ্য হয়ে তাঁকে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঘোষণা করতে হয়েছিল যে একমাত্র ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ ছাড়া সব উপন্যাসে তাঁর নিজের সই আছে। এই উপন্যাসের জন্যই তিনি পেয়েছিলেন রবীন্দ্র পুরস্কার। ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ যখন ধারাবাহিক হিসেবে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছিল তখন বইয়ের স্টলে দাঁড়িয়ে মানুষ সেই উপন্যাস পড়ে নিত, এমনই ছিল এর জনপ্রিয়তা। তাঁর গল্প বা উপন্যাস ভারতের যতগুলি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল একমাত্র শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছাড়া আর কোনো লেখকেরই সৃষ্টি অতগুলি ভাষায় অনূদিত হয় নি।
তাঁর রচিত উপন্যাসগুলো হচ্ছে -‘চাই’, ‘একক দশক শতক’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’,‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’, ‘বেগম মেরী বিশ্বাস’, ‘চলো কলকাতা’, ‘পতি পরম গুরু’, ‘এই নরদেহ’, ‘এরই নাম সংসার’, ‘মালা ‘দেওয়া নেওয়া’, ‘তোমরা দুজনে মিলে’, ‘গুলমোহর’, ‘যা দেবী’, ‘আসামী হাজির’ নিজের সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন ‘….সত্যিই আমার কিছু হয়নি। অবশ্য তা নিয়ে আমি দুঃখও করি না। কারণ জীবনে যে কিছু হতেই হবে তারই বা কী মানে আছে। আকাশের আকাশ হওয়া কিংবা সমুদ্রের সমুদ্র হওয়াটাই তো যথেষ্ট। লেখক আমি হতে না–ই বা পারলাম, মূলত: আমি একজন মানুষ। মানুষ হওয়াটাই তো আমার কাছে যথেষ্ট ছিল’। রবীন্দ্র পুরস্কার এছাড়াও তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মান লাভ করেন। তার রচনা ভারতের বিভিন্ন চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসাবে তিনি ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯১ সালের ২ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।