ব্যাংক গ্রাহকের উত্তোলন করা টাকা ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের ১৪ জনকে দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করেছে রাউজান নোয়াপাড়া পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা। গতকাল সকাল ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন।
সংবাদ সম্মেলনে ওসি জানান, ইসলামী ব্যাংক নজুমিয়াহাট (হাটহাজারী) শাখায় রাউজানের গ্রাহক ইদ্রিস মিয়া নিয়মিত লেনদেন করেন। ওই ব্যাংকের কর্মচারী তারেক (বাবুর্চি) অসৎ উদেশ্যে তার উপর প্রায় সময় নজরদারি করে আসছিল। ব্যাংকের সাবেক পিয়ন পটিয়ার বাসিন্দা সায়েমের সাথে তারেকের যোগাযোগ ছিল প্রতিনিয়ত। দুজন কৌশল আটতে থাকে ইদ্রিস মিয়া ব্যাংক থেকে টাকা উঠাতে আসলে যেকোনো কৌশলে পথে আটকিয়ে ওই টাকা ছিনতাই করতে হবে। এমন পরিকল্পনায় দুজন একমত হয়ে এ কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় পটিয়ার একটি চিহ্নিত অপরাধী চক্রের সাথে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয় ব্যাংকের সাবেক পিয়ন সায়েম। গ্রাহক ইদ্রিস গত বৃহস্পতিবার সকালে ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা তোলে মোটরসাইকেলে নোয়াপাড়ার বাড়ির দিকে ফিরছিলেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাংকে অবস্থানকারী বাবুর্চি তারেক মোবাইলে যোগাযোগ রাখে সড়কে ওঁৎ পেতে থাকা ছিনতাইকারীদের সাথে। তারা ওঁৎ পেতে বসেছিল কাপ্তাই সড়কের কমলার দিঘির পশ্চিম পার্শ্বের অনেকটা ফাঁকা জায়গায় একটি হাইস ও নম্বারবিহীন মোটরসাইকেল নিয়ে। ইদ্রিস টাকা নিয়ে ব্যাংক থেকে বের হলে তারেকের সংকেত পেয়ে অপরাধীরা তৎপর হয়ে উঠে। তাদের একজন নম্বারবিহীন মোটরসাইকেল নিয়ে সড়কে সতর্ক অবস্থা নেয়। এক সময় ইদ্রিসের মোটরসাইকেলটি আসতে দেখলে আটকানোর চেষ্টাকালে হাইস থেকে সহযোগিরাও নেমে ইদ্রি কে অনুসরণ করে ছুটতে থাকে। এমন সময় সেদিকে নজরে পড়ে নোয়াপাড়া পুলিশ ক্যাম্পের টহল পুলিশ দলের। পুলিশ দেখে চক্রটির সদস্যরা দিকবিদিক ছোটাছোটির চেষ্টাকালে পুলিশ তাদেরকে আটকায়। একে একে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সকলেই। পুলিশ তাদের ব্যবহৃত হাইস গাড়ি তল্লাশি করে পাঁচটি ছুরি ও দা জ্বদ করে। থানায় আনার পর তারা জিজ্ঞাসাবাদে টাকা ছিনতাই পরিকল্পনার কথা জানায়।
ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, মোবাইল রেকর্ডের সূত্রে আটক করা হয় পরিকল্পনাকারী ব্যাংকের বাবুর্চিকে। অন্যদের আটক করা হয় কাপ্তাই সড়কে ওৎ পেতে বসে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে। গ্রেপ্তার ১৪ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নামে বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, চুরি, অস্ত্র মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হল ব্যাংকের সাবেক পিয়ন সোহল (২৫), মোসলিম উদ্দিন খান ওরফে সায়েম (২৫), মো. আলী ওরফে হায়দার আলী (৩২), বাবুর্চি মো. তারেক (২২), মো. মহিউদ্দিন (২৪), আবু সিদ্দিক (৩৬), মো. ইমন (২২), মো. আল কাদের শরীফ (২১), শহিদুল ইসলাম সাকিব (২৩), সাইফুল ইসলাম সাকিব (২১), সজিবুর রহমান খান (২০), মো. সোহেল (২৪), মো. মোরশেদ (২৫), মো. শওকত আলম (২১)। তারা সবাই পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা। একমাত্র সোহেলের বাড়ি আনোয়ারা থানায়। তাদের কাছ থেকে ১টি ধারালো টিপ ছুরি, ১টি লম্বা রামদা, ১টি লম্বা কিরিচ, ২টি ধারালো ধামা দা ও কসপেট উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা হয়েছে ব্যবহৃত হাইস ও মোটরসাইকেলটি। আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর পর গতকাল শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।