এক মৌসুম আগে নিউজিল্যান্ড ছিল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন দল। তাও ভারতের মত দলকে হারিয়ে। সে দলটিকেই এবার নিজেদের মাটিতে হারাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টেস্ট জয় আছে বাংলাদেশের। সেটি অবশ্য তাদের মাটিতে। ঘরের মাঠে কিউইদের বিপক্ষে কোন টেস্ট ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সে আক্ষেপ ঘুচতে যাচ্ছে এবার টাইগারদের। সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের জয় এখন কেবলই সময়ের ব্যাপার। বলা যায় জয়ের একেবারে দোরগোড়ায় বাংলাদেশ। এবারের সিরিজে বাংলাদেশ দল যখন নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছিল তখন স্বাগতিক দলটি একেবারেই তারুণ্য নির্ভর। দলে নেই তামিম ইকবাল, লিটন দাসের মত ব্যাটার এবং এবাদত হোসেন, তাসকিন আহমেদের মত পেসার। নেই অল রাউন্ডার সাকিবও। নাজমুল হোসেন শান্তর অধীনে বলা যায় ভাঙাচোরা একটি দল খেলতে নেমেছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সে দলটিই কিনা এখন হারিয়ে দিচ্ছে নিউজিল্যান্ডকে। প্রতিপক্ষ হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা দল নিউজিল্যান্ড। এই দলটিতে কে নেই। টম ল্যাথাম, ডেভন কনওয়ে, কেন উইলিয়ামসন, হেনরি নিকোলস, টিম সাউদির মত বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার রয়েছে এই দলে। এমন একটি দলের বিপক্ষে জয়ের স্বপ্ন দেখাটাও মনে হতে পারে দুঃস্বপ্ন। কিন্তু সেই অসম্ভব স্বপ্নকেই সম্ভব করার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। আর মাত্র ৩টি উইকেট। তাইজুল, মিরাজ, নাঈম হাসানরা যদি দ্রুত এই ৩টি উইকেট তুলে নিতে পারে, তাহলেই আজ সকালেই অসাধারণ এক জয় তুলে নেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আর ঐতিহাসিক জয়ের আশায় পুরো বাংলাদেশ। আর সে জয়ের আনুষ্ঠাানিকতাটাই এখন কেবল বাকি। কারণ জিততে হলে বাংলাদেশকে নিতে হবে ৩ উইকেট। আর নিউজিল্যান্ডকে তুলতে হবে আরও ২১৯ রান। যা বাস্তবতার নিরিখে একেবারে অনেকটা অসম্ভব। বাংলাদেশ দলের ব্যাটার এবং স্পিনাররা দুর্দান্ত খেলেছে এাই টেস্টে। নিজেদের ১৩৯ টেস্টের ক্যারিয়ারে পাঁচবার দুই ইনিংসে তিনশ বা তার বেশি রান করার কৃতিত্ব দেখিয়েছে বাংলাদেশ। আর বল হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। আর সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে জয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ।
ম্যাচের তৃতীয় দিনে ২০৫ রানে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। হাতে ছিল ৭ উইকেট। অপরাজিত ছিলেন শান্ত ১০৪ রান নিয়ে আর মুশফিক ৪৩ রান নিয়ে। কিন্তু চতুর্থ দিনের সকালটা ভালো কাটেনি বাংলাদেশের। দিনের শুরুতেই সাজঘরে ফিরেছেন শান্ত। আগের দিনের ১০৪ রানের সঙ্গে গতকাল মাত্র ১ রান যোগ করতে পেরেছেন এই বাঁহাতি। শান্তকে ফিরিয়েছেন কিউই পেসার টিম সাউদি। এরপর শাহাদাত দিপুও পারেননি মুশফিককে সঙ্গ দিতে। ইশ সোধির বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন শাহাদাত হোসেন। ১৯ বলে ১৮ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটার। আগের দিনের ৪৩ রানকে হাফ সেঞ্চুরিতে পরিণত করেন মুশফিক। কিন্তু পারেননি সেঞ্চুরির দিকে নিয়ে যেতে। ১১৬ বলে ৬৭ রান করে অ্যাজাজ প্যাটেলের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন মুশফিক। এরপর দলকে টেনেছেন মেহেদী হাসান মরিাজ। একপ্রান্ত তিনি আগলে রাখলেও অপর প্রান্তে কেবলই আসা যাওয়া করছিলেন সোহান, নাঈম, তাইজুলরা। তাই একরকম মারমুখি হয়ে পড়েছিলেন মিরাজ। কারণ তিনি চেয়েছিলেন হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিতে। সেটা তিনি পেরেছেন। ৭৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মিরাজ। কিন্তু অপর প্রান্তে শরীফুল স্টাম্পিং হয়ে গেলে বাংলাদেশ থামে ৩৩৮ রানে। ৫০ রানে অপরাজিত ছিলেন মিরাজ। আর তাতে নিউজিল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য দাড়ায় ৩৩২ রানের।
বিশাল সে লক্ষ্য তাড়া করতে নামা কিউইদের শুরু থেকেই চেপে ধরেন তাইজুল ইসলাম, মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাইম হাসান। যদিও প্রথম ধাক্কাটা শরীফুলই দিয়েছেন। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে রানের খাতা খোলার আগেই টম ল্যাথামকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। এই বাঁহাতি পেসারের ফুল লেন্থের বলে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ল্যাথাম। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ দলের কাঁটা হয়ে থাকা কেন উইলিয়ামসনকে এবার সে পথে হাটতে দেয়নি তাইজুল। এই বিগ ফিশ দিয়েই শুরু তাইজুলের ধ্বংসযজ্ঞ। ইনিংসের দশম ওভারে প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ানকে এলবিডব্লিউ কলে ফেরান তাইজুল। ২৪ বলে ১১ রান করেন তিনি। এরপর কিউই ব্যাটারদের নাচিয়ে ছেড়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। মিরাজকে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ২ রান করা নিকোলস। এরপর নিজের দ্বিতীয় শিকার করে কনওয়েকে ফেরান তাইজুল। ২২ রান করেন তিনি। তবে পথের কাটা হয়ে দাড়িয়েছিলেন ড্যারিল মিচেল। তাকে ফেরানো যায়নি। তবে অপর প্রান্তে অণ্য কাউকে দাড়াতে দেয়নি বাংলাদেশের স্পিনাররা। তাইজুলের আরকেটি দুর্দান্ত ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে সোহানকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ব্লান্ডেল। গ্লেন ফিলিপস খানিকটা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাকে সফল হতে দেননি নাঈম হাসান। রিভিউ নিয়ে ফেরান ব্লান্ডেলকে। দিনের শেষ উইকেট হিসেবে জেমিসনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফেরান তাইজুল। সেটি ছিল তার চতুর্থ উইকেট। ততক্ষনে নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে জমা হয়েছে ১১৩ রান। মিচেল এর ৪৪ রান না হলে হয়তো লজ্জাটা আরো বড় হতে পারতো কিউইদের। এখন ইশ সোদি, এজাজ প্যাটেল আর টিম সাউদিকে নিয়ে কতক্ষন লড়তে পারেন মিচেল সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। বাংলাদেশ নিশ্চিভাবেই চাইবে দিনের শুরুতেই ম্যাচটা শেষ করে দিতে। কারন তাতে বড় একটা জয় লেখা হয়ে যাবে বাংলাদেশের সাফল্য তালিকায়। ৪০ রানে ৪ উইকেট নেওয়া তাইজুল আছেন আরো শিকারের আশায়।