দেড় মাস আগে চট্টগ্রাম থেকে আত্মপ্রকাশ করে রাজনৈতিক দল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম। দলটির চেয়ারম্যানের বাড়িও চট্টগ্রাম। এরপরও আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে প্রার্থী থাকছে না প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের। চট্টগ্রামের মাত্র ৫ আসনে দলটির প্রার্থী দিচ্ছে দলটি। অবশ্য ‘তৃণমূল বিএনপি’র সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম। ফোরামকে ছাড় দেয়া পাঁচ আসনসহ চট্টগ্রামের ১৬ আসনের জন্য দলের প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে তৃণমূল বিএনপি।
জানা গেছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পায় তৃণমূল বিএনপি। দলটির প্রতীক ‘সোনালী আঁশ’। অবশ্য ২০১৫ সালে সাবেক বিএনপি নেতা নাজমুল হুদা দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিএনপির সাবেক দুই নেতা শমসের মবিন চৌধুরীকে চেয়ারম্যান ও তৈমূর আলম খন্দকারকে মহাসচিব করার পর আলোচনায় আসে দলটি। রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন উঠে, বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা ধীরে ধীরে দলটিতে যোগ দিবেন। এ ছাড়া নির্বাচনে প্রার্থীতার ক্ষেত্রেও ‘চমক’ সৃষ্টি করবে এমনটাই ভাবা হয়েছিল। তবে গতকাল বুধবার সারা দেশে ২৩০ আসনে প্রার্থী তালিকায় সাবেক পাঁচ সংসদ সদস্যের নাম ছাড়া বড় কোনো চমক ছিল না। এদিকে তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে ‘প্রগতিশীল ইসলামী জোট’ নামে ১৫ দলের একটি রাজনৈতিক মোর্চা। এই জোটের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব লক্ষ্মীপুর–১ আসনে ময়মনসিংহ–২ আসন থেকে তৃণমূল বিএনপির প্রতীকে নির্বাচন করবেন।
তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী যারা : চট্টগ্রাম–২ (ফটিকছড়ি উপজেলা) আসনে ডা. মোহাম্মদ জানে আলম, চট্টগ্রাম–৩ (সন্দ্বীপ উপজেলা) মো. নাঈম হাসান, চট্টগ্রাম–৪ (সীতাকুণ্ড উপজেলা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড) আসনে খোকন চৌধুরী, চট্টগ্রাম–৫ (হাটহাজারী উপজেলা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ড) আসনে মাসুদুর রহমান, চট্টগ্রাম–৬ (রাউজান উপজেলা) আসনে ফয়জুল্লাহ, চট্টগ্রাম–৭ (রাঙ্গুনিয়া উপজেলা এবং বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর–খরণদ্বীপ ইউনিয়ন) আসনে খোরশেদ আলম, চট্টগ্রাম–৮ (শ্রীপুর–খরনদ্বীপ ইউনিয়ন ব্যতীত বোয়ালখালী উপজেলা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড) আসনে সন্তোষ শর্মা, চট্টগ্রাম–৯ (কোতোয়ালী ও বাকলিয়া থানা) আসনে সুজিত সরকার, চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনে দীপক কুমার পালিত, চট্টগ্রাম–১৩ (আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা) আসনে মকবুল আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম–১৪ (চন্দনাইশ উপজেলা ও সাতকানিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন) আসনে রাজীব দাস, চট্টগ্রাম–১৫ (লোহাগাড়া ও ৬টি ইউনিয়ন ব্যতীত সাতকানিয়া উপজেলা) আসনে মোস্তাক আহমেদ সবুজ এবং চট্টগ্রাম–১৬ (বাঁশখালী) মমতাজুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছে তৃণমূল বিএনপি।
চট্টগ্রাম–১১ আসন থেকে তৃণর্মূল বিএনপির নামে রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে গত ২৮ নভেম্বর মো. আবদুল্লাহ মনোনয়নপত্র নিলেও তাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়নি তৃণমূল বিএনপি।
প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামকে ছাড় ৫ আসনে : তৃণমূল বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় চট্টগ্রামের ৫ আসনে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের পাঁচ নেতাও রয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম–৫ (হাটহাজারী উপজেলা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ড) আসনে আছেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন।
এছাড়া চট্টগ্রাম–১ (মীরসরাই উপজেলা) আসনে ফোরামের সদস্য আহাদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম–৬ (রাউজান উপজেলা) আসনে ফোরামের সদস্য ও উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা ইয়াহিয়া জিয়া চৌধুরী, চট্টগ্রাম–১০ (পাহাড়তলী–ডবলমুরিং) আসনে ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ফেরদাওস বশির, চট্টগ্রাম–১২ (পটিয়া উপজেলা) আসনে ফোরামের সদস্য রাজিব চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম–১৬ (বাঁশখালী উপজেলা) আসনে আছেন ওসমান গণি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, আমাদের দল এখনো নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়নি। তাই আমাদের প্রতীকও নেই। আমরা তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।
জানা গেছে, গত ১৫ অক্টোবর আত্মপ্রকাশ ঘটে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের। গত ২০ নভেম্বর তূণমূল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে ফোরামের নেতৃবৃন্দ। এতে জোটদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর কারণ হিসেব বলা হয়, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত না হওয়ায় অন্য কোনো নিবন্ধিত দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিবে। উল্লেখ্য প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন চাকসুর সাবেক নির্বাচিত ভিপি। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহ–সভাপতি।