কিছু কিছু সংখ্যা ইতিহাস হয়ে যায়। যেমন ১৫০ মোগলটুলী ঢাকা; ১৮ কারকুন বাড়ি লেন, ঢাকা; ১২২ আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম ৮০ স্টেশন রোড চট্টগ্রাম; তেমনি ৩০ নজির আহমদ চৌধুরী রোড, চট্টগ্রাম–এই সংখ্যাটিও ইতিহাস সৃষ্টিকারী একটি সংখ্যা। জামে মসজিদ সংলগ্ন আন্দরকিল্লা মোড়ের হাতি কোম্পানির বাড়ি ‘গণি মঞ্জিল’ থেকে দু’ আড়াইশ গজ দক্ষিণে এবং চট্টগ্রামের প্রথম যুগের তিন মুসলমান এমবি ডাক্তারের অন্যতম ও ‘সত্যবার্তা’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ডা. ওমর ও তদীয় পুত্র সাবেক রাষ্ট্রদূত ডা. এ.এফ.এম ইউসুফ এবং চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী এন জি মাহমুদ কামালের বাড়ি থেকে তিন বা সাড়ে তিনশ’ গজ উত্তরে, যেখানে জামে মসজিদের অনুচ্চ টিলার পশ্চিম দিক থেকে একটি সিঁড়ি নিচে নজির আহমদ চৌধুরী রোডে নেমেছে, তার পশ্চিম পার্শ্ববর্তী দোকান, মার্কেট ও পশ্চাৎবর্তী দু’তিনটি বহুতলা ভবন নিয়ে যে কমপ্লেক্সটি পরিদৃষ্ট হয়, সেটিই ৩০ নজির আহমদ চৌধুরী রোড, ৩০ সংখ্যাটি পৌরসভার হোল্ডিং নম্বর। এটি উনিশ শতকের শেষ ও বিশ শতকের প্রথম দিকে ‘মোহাদ্দেস ভিলা’, বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ও চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছিরের বাড়ি নামে পরিচিতি পেয়েছে।
১৫০ মোগলটুলী ছিলো কলকাতা থেকে আগত সোহরাওয়ার্দী–হাশিম গ্রুপের নেতা ও কর্মীদের ওয়ার্কার্স ক্যাম্প বা কর্মী শিবির– এই কর্মী শিবির থেকে পরবর্তীকালে অনেক বিখ্যাত জাতীয় নেতা সৃ্ষ্টি হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম এখানে উল্লেখ করা হলো– শামসুল হক, কামরুদ্দীন আহমদ, শওকত আলী, আতাউর রহমান খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, নঈমুদ্দীন আহমদ, তাজউদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, আবদুল আউয়াল, মুহম্মদ আলমাস, শামসুজ্জোহা, বাহাউদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।
১৮ কারকুন বাড়ি লেনে ছিল ইয়ার মোহাম্মদ খানের বাড়ি, এই বাড়িতে প্রথম দিকে আওয়ামী মুসলিম লীগের অফিস এবং ইত্তেফাকও প্রকাশিত হতো ঐ ঠিকানা থেকে; চট্টগ্রামে ১২২ আন্দরকিল্লা এমএ আজিজের বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের অফিস, এমএ আজিজ দেওয়ানজী পুকুর পাড়ে জায়গা কিনে বাড়ি করার পূর্বে এ অফিসে রাত্রি যাপন করতেন, তাঁর খালাতো ভাই ‘মাইক এজাহার’ও তাঁর সঙ্গে থাকতেন আওয়ামী লীগ অফিসে; স্টেশন রোডের রেস্ট হাউসের (বর্তমানে মোটেল সৈকত) ২৩নং রুম ছিলো জহুর আহমদ চৌধুরীর ট্রেড ইউনিয়ন ও শহর আওয়ামী লীগ অফিস।
মোহাদ্দেস সাহেব বলতে প্রফেসর মওলানা মোহাম্মদ হোসেনকে বুঝানো হতো। মওলানা মোহাম্মদ হোসেন সাহেব চট্টগ্রামের তৃতীয় মাদ্রাসা মোহছেনিয়া মাদ্রাসা বা ‘বুড়া মাদ্রাসা’র মোহাদ্দেস এবং সম্ভবত কিছুদিন প্রিন্সিপালও ছিলেন। তৃতীয় মাদ্রাসা এই কারণে বললাম প্রথমে কাজির দেউড়িতে মীর এহিয়া সম্ভবত আবাসিক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন; চান্দগাঁও মৌলভী পুকুর পাড়ের ‘সফিনা–ই–ইল্ম’–খ্যাত মওলানা আবুল হাসান তাঁর বাড়িতে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় মাদ্রাসাটি (আবাসিক) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বুড়া মাদ্রাসা পরে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে রূপান্তরিত হলে মোহাদ্দেস মোহাম্মদ হোসেন সাহেব সম্ভবত উক্ত কলেজের প্রফেসর ছিলেন। তিনি সেকালের আরবি, ফার্সি ভাষার অদ্বিতীয় পণ্ডিত ছিলেন। সাহিত্যিক আবুল ফজলের পিতা ফজলুর রহমান মোহাদ্দেস সাহেবের সমকালে জামে মসজিদে বহু বছর (সম্ভবত ত্রিশ বছর) ইমাম ছিলেন।
আবুল ফজল তাঁর ‘রেখাচিত্র’ গ্রন্থে লিখেছেন সেকালে মওলানা মোহাম্মদ হোসেন ও মওলানা ফজলুর রহমান ছিলেন চট্টগ্রামে ইসলামের দুই আলোকস্তম্ভ। মোহাদ্দেস সাহেবের পুত্রও কোরআনে হাফেজ হিসেবে চট্টগ্রামে এক নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি আশ্চর্য গম্ভীর উদাত্ত অথচ মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন। জামে মসজিদে তাঁর সুললিত কণ্ঠের কোরআন তেলাওয়াত শুনতে মুসল্লিরা রমজানে জামে মসজিদের তারাবির নামাজে ভিড় করতেন। মোহাদ্দেস সাহেবের নাতি সৈয়দ মঈনুদ্দিন সাহেব একদা জামে মসজিদের মোতোয়াল্লী ছিলেন।
বস্তুত মওলানা মোহাম্মদ হোসেন মোহাদ্দেস সাহেবের সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সৌজন্য, বিনয়, ধর্মানুরাগ, খোদাভীতি তাঁর বংশের মধ্যে যে আভিজাত্য সঞ্চার করেছিলো, আ.জ.ম নাছিরের ধমনীতে তার বিশুদ্ধ রক্তধারাই প্রবাহিত। মোহাদ্দেস সাহেবের নাতি ও নাছিরের পিতা সৈয়দ মঈনুদ্দিন সাহেবের আমল থেকে এই পরিবারে যুগের প্রয়োজনে ইংরেজি শিক্ষা ঢুকে পড়ে।
৩০ নজির আহমদ চৌধুরী রোডের বাসিন্দা মোহাদ্দেস পরিবারে রাজনীতি কখনো ছিলো না। তবুও পরিবারটিতে এক সময় রাজনীতি ঢুকে যায়। তবে আ.জ.ম নাছিরকে দিয়ে রাজনীতির প্রচলন হয়নি মোহাদ্দেস পরিবারে। ধর্মের বাতাবরণে মোহাদ্দেস পরিবার ছিলো কিছুটা রক্ষণশীল। তার মধ্যে উদার প্রগতিশীলতার একটি বাতায়ন খুলে দিয়েছিলেন পরিবারের আত্মীয় আজিম সাহেব (এমএ আজিম)। আজিম সাহেব চট্টগ্রাম জেলা মুসলিম লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রাম জেলা মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছিলেন আমার নানা। মুসলিম লীগ নেতা হলেও তাঁর বড় পরিচয় তিনি মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর শিষ্য ছিলেন। মোহাদ্দেস পরিবারে আরেকজন রাজনীতিবিদ ন্যাপ নেতা ও কমিউনিস্ট পার্টির সভ্য অ্যাডভোকেট শফিউল আলম রাজনীতির আমদানি করেছিলেন। শফি সাহেব আইনজীবী ছিলেন এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় সেখান থেকে একদিন শফি সাহেবকে বদর বাহিনী ধরে নিয়ে গিয়েছিলো ডালিম হোটেলে।
মুক্তিযুদ্ধে ৩০ নজির আহমদ চৌধুরী রোড ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের শেল্টার। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরু বাঙালির নানার বাড়ি। আমিও ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে এসে শহরে যুদ্ধ করার জন্য এই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখান থেকে একদিন বদর বাহিনী আমাকেও ধরে নিয়ে গিয়েছিলো ডালিম হোটেলে এবং মেরে আধমরা করে ফেলেছিলো। আমার ধারণা আ.জ.ম নাছির যে একজন প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা হয়ে উঠলেন, তার পেছনে এসব ঘটনার কোন কার্যকারণ সূত্র থাকলেও থাকতে পারে। কঠোর ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে বড় হয়ে ওঠা আ.জ.ম নাছির যে কালে একদিন চট্টগ্রাম শহরের একজন জাঁদরেল ছাত্রনেতা, পরে বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতা হয়ে উঠবেন একথা কি ঘুণাক্ষরেও কেউ ভাবতে পেরেছিলেন।
ধর্ম ও রাজনীতির কথা বলা হলো। এবার সাহিত্যের প্রসঙ্গ। ধর্ম, রাজনীতি ও সাহিত্য–এই তিনের মিশ্রণে একটি ঐতিহাসিক তীর্থস্থান হয়ে উঠেছিলো ৩০ নজির আহমদ চৌধুরী রোড। এই ঠিকানাকে কেন্দ্র করে সাহিত্য আড্ডার পত্তন করেছিলেন আমার পিতা নূর মুহাম্মদ চৌধুরী সাহিত্যরত্ন। চট্টগ্রামের শিক্ষকদেরও মিলনতীর্থ ছিলো আমার পিতার ক্ষুদ্র লাইব্রেরি। তিনি খুব সম্ভবত পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ৩০ নজির আহমদ চৌধুরী রোডে আ.জ.ম. নাছিরের পিতার কাছ থেকে একটি ছোট দোকান ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। আমার পিতা ইউনাইটেড বুক স্টল নাম দিয়ে একটি লাইব্রেরি স্থাপন করেছিলেন সেই দোকানে। তিনি রাত্রিযাপন করতেন সেখানে, কখনও কখনও কবি নজরুলের ন্যায় ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো কবি আলাদীন আলীনূর সকালে শিক্ষকতা করে দুপুরে ইউনাইটেড বুক স্টলে এসে দিনভর সাহিত্য চর্চা এবং শিক্ষক রাজনীতি করে রাতে থেকে যেতেন। দু’জনই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। আলীনূর সাহেব তাঁর শিক্ষকতা জীবনের অধিকাংশ সময় মিউনিসিপাল প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অতিবাহিত করেন। ছাত্রদের কাছে তিনি ছিলেন ‘কবি স্যার’। কবি আলাদীন আলীনূর কবিতা, গল্প–উপন্যাস, প্রবন্ধ, লোকসাহিত্য এবং গবেষণাকর্মে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তিনি পঞ্চাশের দশকে ‘প্রেমের দেশে’ নামে একটি উপন্যাস রচনা করে সাহিত্য রসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তিনি মহাকবি আলাওলের জন্মস্থান চট্টগ্রাম–এই বিষয়ে অধ্যাপক, কবি ও সমালোচক সৈয়দ আলী আহসানের সঙ্গে দীর্ঘ বিতর্কে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন চট্টগ্রাম মানব সভ্যতা ও মানব ভাষার উৎপত্তিস্থল। আমার পিতা নূর মুহাম্মদ চৌধুরী সাহিত্যরত্ন কখনো আলকরণ নূর আহমদ প্রাইমারি স্কুল, কখনো এনায়েত বাজার এবাদুল্লা পণ্ডিত প্রাইমারি স্কুল, কখনো বা বান্ডেল সুইপার প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ১৯৫০ সালে উত্তরবঙ্গের বগুড়া সাহিত্য কুটির আয়োজিত সাহিত্য সম্মেলনে নূর মুহাম্মদ চৌধুরীকে ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর রচিত অনেক কবিতা ও নাট্যাংশ ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন দৈনিকের সাহিত্য পাতা ও সাময়িকীতে প্রকাশিত হলো তাঁর অধিকাংশ রচনাই প্রকাশিত হয়নি। তাঁর রচিত নাটক সমূহ হলো-‘ন্যায়দণ্ড’, ‘বিদ্রোহীনী’, ‘তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ’, ‘প্রেমিক উল্কা’, ‘নৌশিরঙার বিচার’, ‘শান্তির দূত’। তিনি ‘দীপিকা’ নামে একটি সাময়িকী পত্রিকাও সম্পাদনা করেন (ড. সুনীতি ভূষণ কানুনগো (সম্পাদক) : চট্টগ্রাম চরিতাভিধান, পৃ. ১৬১, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম–১ম প্রকাশ : ডিসেম্বর ২০১২)।
কবি আলাদীন আলীনূর ও নূর মুহাম্মদ চৌধুরী সাহিত্যরত্ন শিক্ষক সংগঠন করতেন, তাঁরা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কর্মকর্তা ছিলেন এবং ৩০ নজির আহমদ চৌধুরী রোডে আমার পিতার লাইব্রেরিটিকে চট্টগ্রাম শহর বা কোতোয়ারী থানা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন।
পরে আমার পিতা ৩০ নজির আহমদ চৌধুরী রোডে ইউনাইটেড বুক স্টলকে কেন্দ্র করে দুটি সাহিত্য সংগঠন সৃষ্টি করেছিলেন–একটি নাম ‘গুলিস্তান সাহিত্য মজলিশ’, অপরটি ‘চট্টগ্রাম লেখক সংঘ’। যেখানে নিয়মিত সাহিত্য আড্ডা হত; দু’তিনটি সাময়িকীও বের হতো। ডা. কাজী মোহাম্মদ ইউসুফের সুরভি, মোহাম্মদ মোসলেম খানের ইসলামাবাদ, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সোলায়মানও সম্ভবত কোন একটি ম্যাগাজিন বের করতেন। ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার অনেক কবি, সাহিত্যিক লেখক সংঘের সঙ্গে যুক্ত থেকে সাহিত্য চর্চা করতেন। আমার পিতার বইয়ের দোকানে বিভিন্ন সময়ে যাঁদের আনাগোনা আমি লক্ষ্য করেছি, তাঁরা হচ্ছেন– অধ্যাপক আবু জাফর, ড. কাজী নাসিরউদ্দিন, খালেদ মাসুক রসুল, বেলাল মোহাম্মদ, ড. দেলোয়ার হোসেন, আবদুল মাবুদ খান, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান খান, মাহবুব উল আলম, আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছগীর, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, আবদুস সালাম খান, আবদুস সালাম আলকরণী, অমিতাভ বড়ুয়া (মহুয়া), অধ্যাপক আমীর খসরু, আবদুন নুর সিদ্দিকী, মোহাম্মদ ইউনুস, অ্যাড. সোলায়মান, ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ, ডা. কাজী মোহাম্মদ ইউসুফ, মেহবুবা মোখলেস, মোহাম্মদ মোসলেম খান, শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জহুর উশ শহীদ, মসউদ উশ শহীদ, মৃণাল চৌধুরী, প্রাথমিক শিক্ষা সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি সৈয়দ সুলতানের পুত্র এশিয়া, নূর মোহাম্মদ রফিক, খন্দকার আখতার আহমদ, তরুণ লেখক মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক আনন্দমোহন রক্ষিত, খালিদ আহসান, শামসুল হক হায়দরী, সুখময় চক্রবর্তী ৩০ নজির আহমদ চৌধুরী রোডের সাহিত্য আড্ডার সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত ছিলেন। চট্টগ্রাম লেখক সংঘ থেকে প্রকাশিত সাময়িকীতে কবিতা, গল্প, ছড়া ইত্যাদি প্রকাশ করে তাঁরা হাত মকশো করতেন। লেখক সংঘ থেকে প্রকাশিত ‘গল্প তেরশ সাতাত্তর’ নামে একটি বৃহদাকারের গল্প গ্রন্থে চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক গল্পকারের গল্প প্রকাশিত হয়েছিলো। এটি চট্টগ্রামের একটি উল্লেখযোগ্য সাহিত্য সংকলন।
উনবিংশ শতাব্দিতে সাহিত্য সৃষ্টির তাড়না থেকে বিভিন্ন রকম সাহিত্য সংগঠনের জন্ম হয়েছিলো। প্রধান যে সংগঠনটির কথা বলতে হয়, সেটি হলো বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, মহাকবি নবীন সেনও বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। চট্টগ্রামেও বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের শাখা গঠিত হয়েছিলো। চট্টগ্রামে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের শাখা গঠন উপলক্ষেই ১৯০৭ সালে রবীন্দ্রনাথ চট্টগ্রাম এসেছিলেন। প্রমথ চৌধুরীর সবুজপত্রকে ঘিরে গড়ে ওঠা সাহিত্য গোষ্ঠী সজনীকান্ত দাশের শনিবারের চিঠি, কল্লোল গোষ্ঠীর কথাও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে।
চট্টগ্রামে পূরবী সাহিত্য সংসদ, সাহিত্য মজলিশ ইত্যাদি সাহিত্য সংগঠনের গোষ্ঠীবদ্ধ সাহিত্য চর্চা থেকে উত্তর সাধকেরা চট্টগ্রাম লেখক সংঘ গড়ে তোলার প্রেরণা পেয়েছিলেন– একথা নিশ্চয়ই বলা যেতে পারে। এই সাহিত্য সংগঠন ও তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সাহিত্য আড্ডা ৩০ নজির আহমদ চৌধুরী রোডকে বিশিষ্টতা দান করেছে।
লেখক : সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক সংগঠক