নগর ও জেলার ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে আহূত প্রায় শত কোটি টাকার দরপত্রের ‘ই–জিপি সার্ভারে ত্রুটি’ এবং ‘ধীরগতির নেটওয়ার্ক’–এর কারণে অংশ নিতে না পারার অভিযোগ করেছেন ঠিকাদাররা। চট্টগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এ দরপত্র আহ্বান করে। আজ দুপুর ১২টায় ই–জিপি পদ্ধতিতে দরপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হবে। ঠিকাদাররা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে চেষ্টা করেও তারা দরপত্র দাখিল করতে পারছেন না। তাই সময় বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর গতকাল তারা আবেদন করেছেন। ই–জিপি কার্যক্রমের সার্ভার নিয়ন্ত্রণ করে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)। এর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, সার্ভারে কোনো সমস্যা হয়নি। নেট একটু স্লো (ধীরগতি) থাকতে পারে। একই কথা বলেছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিপ্তরের কর্মকর্তারাও।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া পরিশোধ না করায় গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর দেশের ১৯টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) কোম্পানির ব্যান্ডউইথ সেবা সীমিত করা হয়েছে। এ কারণে গ্রাহকদের ইন্টারনেট সেবা ধীরগতির হচ্ছে। দেশে আইআইজি প্রতিষ্ঠান আছে ৩৪টি।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আহূত দরপত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়নের তালিকায় থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে নগরের নাসিরাবাদ বালক উচ্চ বিদ্যালয়, বাকলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বাকলিয়া সরকারি কলেজ, পূর্ব বাকলিয়া সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, বাকলিয়া হাসনাহেনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মধ্যম হালিশহর বেগমজান উচ্চ বিদ্যালয়, হালিশহরের হাউজিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট পাবলিক স্কুল, ডবলমুরিংয়ের আলহাজ্ব এম এ সালাম উচ্চ বিদ্যালয়, পাহাড়তলী হযরত শাহ সূফি মঈনুদ্দিন শাহ দাখিল মাদ্রাসা, সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ, সন্দ্বীপের মোমেনা সিকান্দর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হাটহাজারীর মীর নাওয়াবুল হক মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, সীতাকুণ্েডর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চন্দনাইশের জোয়ারা বিশ্বেম্বর চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়, সীতাকুণ্ডের বড় দারোগাহাট এ আর মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, সীতাকুণ্ডের লতিফা সিদ্দিকী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আনোয়ারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মীরসরাই বারিয়া খালী মাওলানা লিয়াকত উল্লাহ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, পটিয়ার পূর্ব ক্ষিরাম সাবেরিয়া খলিলিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাঙ্গুনিয়ার দক্ষিণ শিলক তৈয়্যবিয়া নূরীয়া সাত্তারিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও বঁাঁশখালীর কদম রসুল হামেদিয়া দাখিল মাদ্রাসা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নে গত ২৫ ও ২৬ অক্টোবর দুই ধাপে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২৬ নভেম্বর ছিল শিডিউল ক্রয়ের শেষ দিন। আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত জমা দেওয়ার সময় রয়েছে।
এদিকে ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছেন, শিডিউল ক্রয় করলেও সার্ভারে ত্রুটির কারণে তারা জমা দিতে পারছেন না। এ বিষয়ে গতকাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লিখিত অভিযোগ করেন বলে আজাদীকে জানান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এস ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ গোলাম মর্তুজা টুটুল। তিনি বলেন, ই–জিপির সার্ভারে ত্রুটিজনিত কারণে ৪–৫ দিন ধরে অধিকাংশ সময় নেটওয়ার্ক থাকে না। থাকলেও অত্যধিক ধীরগতির কারণে দরপত্র ক্রয় করেও টেন্ডার সিকিউরিটি এবং টেন্ডার দাখিলের অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কার্যাবলী, দর দাখিল সম্পাদন করতে পারছি না। তাই সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছি।
এদিকে সময় বৃদ্ধির দাবি করা ১১টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদন আজাদীর হাতে এসেছে। এসব আবেদনে ই–জিপি সার্ভারে ত্রুটি এবং ধীরগতির অভিযোগ করা হয়।
এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সরকার আজাদীকে বলেন, ই–জিপির সার্ভার নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই। এটা নিয়ন্ত্রণ করে সিপিটিইউ। ঠিকাদারদের অভিযোগ পেয়ে সেখানে যোগাযোগ করেছি। তারা পরিষ্কার জানিয়েছে, সার্ভারে কোনো সমস্যা নেই। কাল সারা দেশের অনেকগুলো দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। শেষ মুহর্তে সবাই চেষ্টা করায় কিছুটা স্লো হতে পারে। তিনি বলেন, যদি সারা দেশের জন্য সময় বৃদ্ধি করা হয় তাহলে আমরাও বৃদ্ধি করব। দরপত্র প্রক্রিয়া তো চলছে এক মাস ধরে। ঠিকাদাররা এতদিন চেষ্টা করেননি কেন?
সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর মো. হারুনুর রশীদ আজাদীকে বলেন, সার্ভারে কোনো সমস্যা নেই। ব্র্যান্ডইউথ সীমিত থাকায় নেট স্লো হতে পারে।