ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় লাভের স্বপ্ন নিয়ে লবণ চাষে মাঠে নেমেছেন চাষিরা। কক্সবাজারে ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে ২০২৩–২৪ মৌসুমে প্রায় ২৫.২৮ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের চাহিদার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এবারে মাঠে নেমেছে প্রায় ৩৯ হাজার ৪৮৭ জন লবণ চাষি। তবে সব চাষিদের ভয় এক জায়গায়, যদি বিদেশ থেকে লবণ আমদানী করা হয় তাহলে তারা উৎপাদিত লবণের দাম পাবে না। এতে সব আশা মাঠে মারা পড়বে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে কক্সবাজারের একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ খাত লবণ শিল্প। সংশ্লিষ্টদের দাবি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একটি মধ্যস্বত্বভোগী ভুল বুঝিয়ে লবণ আমদানী করে দেশের চরম ক্ষতি করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধান কাটা শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে লবণ চাষের কর্মযজ্ঞ। এবার ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে মনে একধরনের শঙ্কা নিয়ে মাঠে নেমেছে হাজারো লবণ চাষি। ইতোমধ্যে অনেক এলাকা থেকে শ্রমিক প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক সামগ্রীসহ মাঠে আসছে। এবারের প্রথম লবণ উৎপাদন হয়েছে কুতুবদিয়া উপজেলায়। ঘূর্ণিঝড় হামুন ও মিধিলির প্রভাবে দ্বীপে ৪০–১০৬ মি.মি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় লবণ উৎপাদন ও মাঠ প্রস্তুতিতে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। তবে এর আগে কয়েকটি এলাকায় পলিথিনে উৎপাদিত লবণ বিক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে কক্সবাজার সদরের চৌফলদণ্ডী ও টেকনাফের হ্নীলায় দেখা গেছে, চাষিরা মাঠে নেমেছেন। এছাড়া টেকনাফের কাটাখালী, লম্বাবিল, উনছিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া, নয়াপাড়া, নয়াবাজার, মিনাবাজার, ওয়াব্রাং, সিকদার পাড়া, নাটমুরা পাড়া, চৌধুরী পাড়া, রঙ্গিখালী, লেদা, মোছনী পাড়া, সাবরাং ইউনিয়নের মন্ডল পাড়া, সিকদার পাড়া, নয়াপাড়া, কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ও চৌফলদণ্ডীসহ উপকূলীয় এলাকায় লবণ চাষিরা পুরোদমে মাঠে কাজ করছে।
চৌফলদণ্ডী সিকদারপাড়া এলাকায় কথা হয় চাষি শাহেদ উল্লাহর সাথে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আগে মাঠে নেমেছিলাম কিন্তু পানির কারণে মাঠ উপযোগি করতে পারিনি। এরপর ১০ দিন হচ্ছে মাঠে নেমেছি। মাঠ প্রস্তুত প্রায়, তবে খালে ও মাঠে লবণ পানি উপযোগি না হওয়ায় লবণ উঠতে আরো এক সপ্তাহ লাগবে। আরেক চাষি শরীফ জানান, তিনি ৪ জন চাষি নিয়ে ৭ কানি জমিতে মাঠ প্রস্তুত করতে মাঠে নেমেছেন ১৫ দিন আগে। এসব মাঠে লবণ উৎপাদন করতে আরো ৭ দিন লাগবে বলে জানান তিনি। তাদের দাবি, লবণ চাষিদের সরকারিভাবে ঋণের পৃষ্ঠপোষকতা করলে ও ন্যায্য মূল্য দিলে এ খাতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে। সঠিক মূল্য নির্ধারণ করে কৃষকের মুখে হাসি ফোটানোর দাবি সংশ্লিষ্টদের।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩–২৪ মৌসুমে দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে ২৫.২৮ লাখ মেট্রিক টন। মৌসুম শুরুতে মাঠ পর্যায়ে লবণ মজুদ রয়েছে ১.৬০ লাখ মেট্রিক টন। ২০২২–২৩ মৌসুমে মোট লবণ উৎপাদন হয় ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন।
লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় (বিসিক) কক্সবাজারের পরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. ইদ্রিস আলী জানান, নভেম্বর মাসের শুরু থেকে ধানের চাষ প্রায় শেষ। চাষিরা এখন লবণ উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। বৃষ্টি না হলে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লবণ চাষিরা বেশ উপকৃত হবে। এ বছর লবণের ন্যায্যমূল্য পেয়ে প্রান্তিকের চাষিরা রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। গত বছরের চেয়ে এ বছর লবণের গড়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২৬ টাকা।