বঙ্গোপসাগর থেকে ইলিশ ধরে ফিরছে কক্সবাজারের জেলেরা। গত বৃহস্পতিবার শহরের ফিশারীঘাটস্থ প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৮ মেট্রিক ইলিশসহ ১২ মে. টন মাছ রাজধানী ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র কারণে সাগরে কয়েকদিন মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর গত রোববার থেকে ফের সাগরে রওয়ানা দেয় জেলেরা।
বঙ্গোপসাগরে বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। এরমধ্যে ইলিশ জাল বা ভাসা জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। আর ফইল্যা জালের বোটগুলো সাগরে মাছ ধরতে যায় ৫/৬ দিনের রসদ নিয়ে। এই বোটগুলো রূপচান্দা জাতীয় মাছ ধরে। আবার চাউপ্পা জাল, ডোবা জাল, চামিলা জাল ও চোখফোলা জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে যায় এবং মাছ ধরে দিনে দিনেই ফিরে আসে। এই ধরনের জালের বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। বোটগুলোতে একেক মৌসুমে একেক প্রজাতির মাছ বেশি ধরা পড়ে। এই ধরনের জালের বোটগুলো গত পাঁচদিন ধরে সাগরে আসা–যাওয়া করলেও বৃহস্পতিবার থেকে ইলিশ জাল বা ভাসা জালের বোটগুলো এবং ফইল্যা জালের বোটগুলো ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে বলে জানান জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
তিনি জানান, গভীর বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণে গত ১৬ নভেম্বর আবহাওয়া দপ্তর সতর্কতা সংকেত জারি করলে ট্রলারগুলো মাছ ধরা বন্ধ করে ঘাটে ফিরে আসে। পরদিন শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি কঙবাজার উপকূল অতিক্রম করলে আবহাওয়ার অবস্থা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে। শনিবার সকালে আবহাওয়া দপ্তর সমুদ্র বন্দরগুলোর উপর সকল সতর্কতা সংকেত প্রত্যাহার করলে গত রোববার থেকে ফের সাগরে রওয়ানা দেয় জেলেরা। এরপর গভীর সাগর থেকে ইলিশ ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ঘাটে ফিরতে শুরু করে জেলেরা।
শহরের ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, বঙ্গোপসাগর থেকে ইলিশ ধরে বৃহস্পতিবার থেকে ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে কঙবাজারের জেলেরা। প্রথম দিন শহরের ফিশারীঘাটস্থ প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৮ মেট্রিক ইলিশসহ ১২ মে. টন মাছ রাজধানী ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র কারণে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে খা খা প্রান্তরে পরিণত হয়েছিল শহরের ফিশারীঘাটস্থ প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার থেকে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে ঘাটে ফিরতে শুরু করায় ফিশারীঘাট আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে।
কঙবাজারের ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির মতে, কঙবাজারে ছোট বড় ৭ সহস্রাধিক যান্ত্রিক বোট রয়েছে। এরমধ্যে বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কঙবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। গত রোববার থেকে সকল ধরনের নৌযানই সাগরে মাছ ধরছে।
তবে আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কতা সংকেত প্রত্যাহারের পর গত শনিবার সকাল থেকেই টেকনাফ–সেন্টমার্টিন নৌ রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে।