সিএমপি অফিসার্স মেসে ‘অনশ্বর পিতা’ শীর্ষক মুজিব কর্নার উদ্বোধন করে নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের আবেগ, আমাদের ভালোবাসা। বছরের পর বছর নির্যাতিত, নিপীড়িত, পরাধীন একটি জাতিকে স্বাধীনতার স্বাদ দিয়ে তিনি অনশ্বর হয়েছেন। সেই বঙ্গবন্ধুকে ভুলে যেতে আমাদের বেশিদিন লাগেনি। ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে তাঁকে হত্যা করতেও কিছু লোকের বুক কাঁপেনি। এই কিছু লোক মাঝেমধ্যে অনেক বেশি লোক হয়ে যায়। সেই লোকদের জন্য, এমনকি আমাদের নিজেদের জন্যও যাতে আমরা ইতিহাস ভুলে না যাই, বঙ্গবন্ধুকে ভুলে না যাই, সেজন্যই এই মুজিব কর্নার।
নগরীর নাসিরাবাদ সিএমপি অফিসার্স মেসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকে স্মরণীয় করার লক্ষ্যে জাতির পিতার বর্ণাঢ্য জীবন ও দর্শন নিয়ে ‘অনশ্বর পিতা’ স্থাপন করা হয়। গতকাল এটি উদ্বোধন করা হয়।
সিএমপি কমিশনার বলেন, আপনি অনেক বড় বড় কথা বলছেন। আপনি বাংলাদেশকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সেই বাংলাদেশ কী বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশ? বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশ? সেটা কী বাংলাদেশ? নাকি অন্য কোনো দেশ চাচ্ছেন? মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ চাচ্ছেন না? বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশ কোনো বাংলাদেশ হতে পারে না। সেটা অন্য কোনো দেশ হতে পারে। আপনি এদেশ চাইলে বঙ্গবন্ধুকে মানতে হবে। শেখ মুজিবকে পিতা মেনেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ এই দেশটা তিনিই সৃষ্টি করেছেন।
রাজাকার, আলবদর ছাড়া এই দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ শেখ মুজিবের পেছনে দাঁড়িয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ শেখ মুজিবের পেছনে দাঁড়িয়ে প্রথম বুলেট ছুড়েছিল। সেদিন পুলিশ নিজের যে বুলেট ছুড়েছিল সেটি তেমন শক্তিশালী বুলেট ছিল না। তবে সেটি অহংকারের বুলেট ছিল। ছিল আবেগ ও ভালোবাসার বুলেট। তিনি আরো বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বারবার মনে করিয়ে দিতে চাই যে, এই লোকটি না হলে এই দেশটি হতো না। আর এই দেশটি যদি না হতো তাহলে তুমি আজ যা হয়েছ সেটা হতে পারতে না। বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করে, বঙ্গবন্ধুকে স্বীকৃতি দিয়ে সোনার বাংলা গড়তে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অহর্নিশ যে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সেই স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী একটি স্মার্ট পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলব। বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অব্যাহত থাকবে। সেই শ্রদ্ধা থেকেই সিএমপির পুলিশ মেসে আজকের এই মুজিব কর্নারের যাত্রা।
সিএমপির উপ–পুলিশ কমিশনার (সদর) মোহাম্মদ আব্দুল ওয়ারীশের (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মহানগর ইউনিট কমান্ডর মোজাফ্ফর আহম্মদ ও জেলা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার এ কে এম সরোয়ার কামাল।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা ২৫ শে মার্চের কালরাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, ওইদিন বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রথম বুলেট ছুড়েছিল পুলিশ বাহিনী। আমরা সেই বাহিনীরই সদস্য, সেই গৌরবের গর্বিত অংশীদার। বঙ্গবন্ধু না হলে কোনোদিনই বাংলাদেশ হতো না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নন, তিনি যুগ যুগান্তরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই নেতাকে কোনো সময়ের ফ্রেমে বাঁধা সম্ভব নয়। তিনি আমাদের মহান নেতা, এই জাতি সৃষ্টির প্রধান কারিগর।
বঙ্গবন্ধু না হলে বাংলাদেশ হতো না মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেই মহান নেতার কীর্তি আগামী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে সিএমপি অফিসার্স মেসে যে মুজিব কর্নারের যাত্রা আজ শুরু হলো তা এক অনন্য উদ্যোগ। এই উদ্যোগ নিশ্চয় সেই মহান নেতার আদর্শ এই প্রজন্মের সবার মাঝে ছড়িয়ে দেবে। তার আদর্শের প্রকৃত বাস্তবায়নই কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলা গড়তে সহায়তা করবে।
সিএমপির এডিসি (মিডিয়া) স্পিনা রাণী প্রমানিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সিএমপি প্রান্তে যুক্ত হয়েছিলেন সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) এম এ মাসুদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আ স ম মাহতাব উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আবদুল মান্নান মিয়া প্রমুখ।