সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক ২৩ জন

ইতিহাস বিভাগে নেই একজন শিক্ষকও খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | শনিবার , ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ। জেলার প্রাচীন ও প্রধান বিদ্যাপীঠ হলেও নানামুখী সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, শিক্ষক সংকট, আবাসনসহ রয়েছে আরও নানানমুখী সমস্যা। কলেজটির প্রতিষ্ঠা ১৯৭৪ সাল। মাত্র ৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চালু হওয়া এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজারের বেশি। কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে সংকটও। এই নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে চরম অসন্তোষ।

জানা যায়, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক মিলিয়ে মোট সৃজিত শিক্ষক পদের সংখ্যা ৪৬টি। কিন্তু সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২৩ জন শিক্ষক। ৬ জন গেস্ট টিচার দিয়েও শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। চার জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও ইতিহাস বিভাগে পদায়নকৃত কোনো শিক্ষকই নেই। কোনো শিক্ষক ছাড়াই চলছে স্নাতক পর্যায়ের ইতিহাস বিভাগ। রসায়নে দুইজন আর তিনজন করে শিক্ষক রয়েছে অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। এছাড়া বাংলা, ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন বিষয়ের শিক্ষক আছেন মাত্র একজন করে। ৯ বছর আগে একটি পদ সৃষ্টি করা হলেও এখন অব্দি কোনো তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের শিক্ষককে পদায়ন করা হয়নি কলেজটিতে। গণিতের শিক্ষক দিয়েই পরিচালনা করা হয় তথ্যপ্রযুক্তির ক্লাস।

এইসএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বর্ষা চাকমা ও স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আমিনুর রহমান জানান, শিক্ষকের অভাবে তাদের শ্রেণি কার্যক্রম একেবারেই অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। কাঙ্ক্ষিত পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় ভবিষ্যত শিক্ষা জীবন নিয়েও বেশ উদ্বিগ্ন তারা।

অভিভাবক সুরেশ ত্রিপুরা বলেন, গত এইচএসসির ফলাফলে দেখেছি চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে খারাপ করেছে খাগড়াছড়ি জেলা। অথচ এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথা ব্যথাই নেই। সহসাই সরকারি কলেজগুলোর যাবতীয় সংকট নিরসন করা না গেলে দিনদিন আরও অবনতি হবে এখানকার শিক্ষার মান।

এদিকে কলেজ ল্যাবরেটরিতেও নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক কম্পিউটার, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বই নেই লাইব্রেরিতেও। বইয়ের অভাবে বিভিন্ন রেফারেন্স কিনতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর এই কলেজে নেই কোনো ক্যান্টিন ও অডিটোরিয়াম। শ্রেণি কক্ষের সংখ্যাও অপর্যাপ্ত। এর মধ্যে কলেজের কোনো অনুষ্ঠান হলে পাঠদান বন্ধ রেখে শ্রেণি কক্ষেই করতে হয় আয়োজন। এছাড়া অন্য কোনো শ্রেণির পরীক্ষা থাকলেও বন্ধ রাখতে হয় আরেক শ্রেণির পাঠদান। কলেজে কর্মচারীর সংকটও কম নয়। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীর দুটি পদের মধ্যে কর্মরত নেই একজনও, তৃতীয় আর চতুর্থ শ্রেণির ষোলটি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র চারজন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ছাড়া আর কোনো বিভাগে স্নাতকোত্তর পড়ারও সুযোগ নেই এই কলেজে। অনেক শিক্ষার্থীকে বাধ্য হয়ে পাশের জেলা রাঙামাটি ও চট্টগ্রামে যেতে হচ্ছে। আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে স্নাতক বিভাগের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

শিক্ষকরা জানান, কলেজের শিক্ষকদের জন্য নেই মানসম্মত আবাসন ব্যবস্থা। রয়েছে জরাজীর্ণ ছোট্ট একটি টিনশেড ডরমেটরি। নারী শিক্ষকদের আবাসনের পৃথক কোনো বন্দোবস্ত না থাকায় তাদের ভাড়ায় থাকতে হয় অন্যত্র। এছাড়া কলেজ অধ্যক্ষের জন্যেও নেই পৃথক কোনো আবাসিক ভবন।

কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অপরাপর দুই জেলায় সরকারি কলেজের শিক্ষকদের জন্য আধুনিক মানের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ আমাদের আবাসনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে তা বলাই বাহুল্য। আবাসন সংকটের কারণে বেশিরভাগ শিক্ষক এখানে পদায়ন পাওয়ার পর পর অন্যত্র বদলির জন্য তদবির শুরু করে দেন।

কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মিছবাহুদ্দীন আহমদ বলেন, কলেজে নানামুখী সংকট রয়েছে। বেশিরভাগই পুরনো। বিষয়গুলো নিয়ে মাস দুয়েক আগেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অথচ ঢাকা ও চট্টগ্রামের সরকারি কলেজগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক শিক্ষক পদায়ন রয়েছে। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে অনেক শিক্ষক আসতে চান না। ফলে এখানে শিক্ষকের তীব্র সংকট রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘ডাকাতি’র দেড় মাস পর চুরির মামলা নিল পুলিশ
পরবর্তী নিবন্ধরেডিসনে ওয়েডিং অ্যান্ড লাইফ স্টাইল এক্সপোতে ব্যাপক সাড়া