বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কায় দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন খাতে মন্দাভাব চলছে। পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় দেশব্যাপী পণ্য পরিবহন কমে গেছে। দিনের পর দিন শত শত লাইটারেজ জাহাজ অলস ভাসছে নদীতে, সাগরে। গতকাল চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য অপেক্ষমাণ ৩৮৭টি লাইটারেজ জাহাজের মধ্যে মাত্র ১৬টি জাহাজ ভাড়া পেয়েছে। বাকি ৩৭১টি জাহাজ কর্ণফুলী নদীতে অলস ভাসছে। দিনের পর দিন অলস থাকতে গিয়ে পুরো সেক্টরে একটি অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লাখ লাখ টন পণ্য দেশের নানা স্থানে পরিবহন করা হয় লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে। দেড় হাজারেরও বেশি লাইটারেজ জাহাজ চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত। কিন্তু বৈশ্বিক সংকটে আমদানি কমে যাওয়ায় লাইটারেজ জাহাজ সেক্টরেও ভাড়া কমে যায়। দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও এক ট্রিপ ভাড়া পাচ্ছে না বহু জাহাজ। কোনো কোনো জাহাজ দুই মাস অপেক্ষা করে এক ট্রিপ ভাড়া পাচ্ছে। ভাড়া না থাকায় লাইটারেজ জাহাজের অপারেটিং কস্টের যোগান দেয়া কঠিন হয়ে উঠছে। অনেকেই ব্যাংক ঋণ নিয়ে জাহাজ তৈরি করলেও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনেকেই ঋণখেলাপী হয়ে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, একেকটি জাহাজের পরিচালনা ব্যয় মাসে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। অথচ দুই মাসে এক ট্রিপ ভাড়া পেলে তাতে তিন চার লাখ টাকার বেশি আসে না। জ্বালানি তেল এবং শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য খরচ সামাল দিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠেছে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এখাতে বড় ধরণের সংকট তৈরি করছে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
একাধিক জাহাজ মালিক দৈনিক আজাদীকে বলেন, পরিস্থিতি খুবই নাজুক। বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কা এতো ব্যাপকভাবে আঘাত হানবে তা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। চট্টগ্রামে যত জাহাজ অলস বসে আছে তার থেকে ঢের বেশি জাহাজ দেশের বিভিন্ন নদ–নদীতে অলস ভাসছে। ভাড়া না থাকায় জ্বালানি তেল পুড়িয়ে ওগুলো চট্টগ্রামের দিকে আসারই সাহস করছে না। লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বহির্নোঙরে আমদানি পণ্য বোঝাই জাহাজের সংখ্যা কমেছে। যেখানে গড়ে ৩০/৪০টি জাহাজ থাকতো গত কিছুদিন ধরে তা ৮/১০টিতে নেমে এসেছে। এতে করে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌরুটে পণ্য পরিবহনের কোনো চাহিদা নেই। জাহাজে পরিবহনের মতো পর্যাপ্ত মালামালও নেই। ফলে জাহাজগুলো সব অলস ভাসছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, আজ (গতকাল) চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য নিয়ে অবস্থানকারী জাহাজের সংখ্যা মাত্র ৮টি। এই ৮টি জাহাজ ১৬টি লাইটারেজ জাহাজ ভাড়া নিয়েছে। অথচ ভাড়া পরিবহনে প্রস্তুত ছিল ৩৮৭টি জাহাজ। ১৬টি জাহাজ বহির্নোঙরে যাত্রা করলেও বাকি সবগুলো জাহাজই অলস ভাসছে।