সংলাপের সময় পার হয়ে গেছে

ওবায়দুল কাদের

আজাদী অনলাইন | বুধবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২৩ at ১:৩২ অপরাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপের চিঠি পাওয়ার পর এখন আর আলোচনায় বসার সুযোগ দেখছেন না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আজ বুধবার(১৫ নভেম্বর) সকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কাছ থেকে সংলাপের চিঠি গ্রহণ করার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, “সংলাপের সময় পার হয়ে গেছে।”

একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু ইতোমধ্যে বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন। বুধবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাতে সেই চিঠি পৌঁছে দেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

তাদের মধ্যে বৈঠক চলে প্রায় আধা ঘণ্টা। এরপর সাংবাদিকদের ‍মুখোমুখি হয়ে সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, ওই চিঠির বিষয়ে তিনি দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সম্ভব হলে বুধবারই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন।

পিটার হাসের সঙ্গে আলোচনার সূত্র ধরে তিনি বলেন, “তিনি যেটা বলেছেন সেটা হলো এ ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড পিসফুল নির্বাচন এবং উইদাউট প্রিকন্ডিশন টু হোল্ড এ ডায়ালগ। এটা হলো মূল কথা। এই চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে আমার পার্টির প্রেসিডেন্ট এবং পার্টির নির্বাহী কমিটির সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। আমাকে যদি এটা রেসপন্ড করতে হয়, তাহলে আমার পার্টির চিন্তা ভাবনার দৃষ্টিকোণ থেকেই জবাব দেব।”

আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র সঙ্গে সংলাপ করবে কি-না, সেই কথা সরাসরিই জানতে চান সাংবাদিকরা।

উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, “সেটা এখন আর চিন্তা নেই। সেটা আগে ছিল। সেই সময় চলে গেছে।”

তাহলে সংলাপ কি আর হচ্ছে না? এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সেই কথা আমি কীভাবে বলব? কোনো পলিটিক্যাল পার্টি কোনোদিনও এভাবে… কোনো ডেমোক্রেটিক পার্টি যারা এভাবে ডেমোক্রেসি প্র্যাকটিস করে, তারা সংলাপ চায় না- এমন কথা বলতে পারে না। কিন্তু একটা সময় আছে। আজকে ইলেকশনের ডেট ডিক্লেয়ার হচ্ছে, আপনি সংলাপ করবেন কবে? আমি সেই কথা বলেছি। এখন আর সংলাপের সুযোগ নেই।”

ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠরের পর পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেন, “সব রাজনৈতিক দলকে আমরা একই বার্তা দিয়েছি, সেটা হচ্ছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ থাকবে। আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে নেই।”

যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় জানিয়ে পিটার হাস বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশের জন্য সহিংসতা হ্রাসের পাশাপাশি কোনো পূর্বশর্ত ছাড়া সংলাপের সুযোগ খুঁজতে সব রাজনৈতিক দলকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।”

বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এমন এক সময়ে তিনি এই তফসিল দিতে যাচ্ছেন যখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকে সারা দেশে অবরোধ চলছে।

অন্যদিকে, ক্ষমতাসীনদের অবস্থান হলো উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হওয়া ওই ব্যবস্থা ফেরানোর সুযোগ নেই।

দুই পক্ষের এমন অবস্থানে দেশ আবার এক দশক আগের মতো টানা অবরোধের বৃত্তে ঢুকে পড়েছে; আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের আগে জনমনে বাড়ছে শঙ্কা।

এমন প্রেক্ষাপটে ডনাল্ড লু’র চিঠি সোমবার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কার্যালয়ে গিয়ে তার হাতে পৌঁছে দেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

একই দিন বিকালে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধের মীমাংসা বা সমঝোতার চেষ্টায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস দূতিয়ালি করার আগ্রহ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “বন্ধু দেশ কোনো পরামর্শ দিলে আওয়ামী লীগ সরকার সেটা গুরুত্বের সঙ্গেই পর্যালোচনা করে।”

এ বিষয়ে সরকার ‘খুব বাস্তববাদী’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমাদের সংলাপ আপত্তি নাই কিন্তু কার সঙ্গে করব সেটা নিয়ে আমাদের নিশ্চয়ই প্রশ্ন আছে।”

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন, প্রস্তুত আরও ৮ প্লাটুন
পরবর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় দুর্ঘটনায় আহত ছাত্রের সাত মাস পর মৃত্যু