২০ মিনিটে পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী ‘আরেকটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন হলো’

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

কয়েকদিন আগে উদ্বোধন করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু টানেল। এবার উদ্বোধন করা হলো সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এতে করে চট্টগ্রামে আরেকটি বড় স্বপ্নের বাস্তবায়ন হলো।

পতেঙ্গার টানেল এলাকা থেকে শুরু হয়ে লালখানবাজারে নেমেছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এর নামকরণ করা হয়েছে মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরী সিডিএ ফ্লাইওভার। লালখান বাজার থেকে মাত্র ২০ মিনিটে বিমানবন্দর ও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যাবে। চালু হওয়ার পর এতে যান চলাচলে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এক্সপ্রেসওয়েটি গতকাল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তিনি এই প্রকল্প উদ্বোধন করেন। পতেঙ্গার যে স্থান থেকে এক্সপ্রেসওয়ের শুরু সেখান থেকে সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পিয়ারুল ইসলাম, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আব্দুচ ছালাম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, চসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আব্দুস সবুর লিটন, প্রধান নির্বাহী শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ও নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনসহ আওয়ামী লীগ ও সিডিএর প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা কনফারেন্সে যুক্ত হন।

এদিন চট্টগ্রামের ১৭টিসহ সারা দেশে ১৫৭টি প্রকল্পের অধীনে ৪ হাজার ৬৪৪টি অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং জমিসহ ৫৩৯৭টি ঘর হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় গণভবনের সাথে চট্টগ্রামসহ ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সারা দেশে ১০১টি প্রান্ত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিল।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে যুক্ত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. ইসমাইল খান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা, জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার একেএম সরোয়ার কামাল দুলু, মহানগর ইউনিট কমান্ডের পক্ষে মো. নুর উদ্দিনসহ বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে পৌঁছানোর জন্য পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পাশাপাশি চট্টগ্রামের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তরকৃত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল, বে টার্মিনালের পিপিপি প্রকল্প, আগ্রাবাদের সিজিএস কলোনিতে জরাজীর্ণ ১১টি ভবনের স্থলে ৯টি বহুতল আবাসিক ভবনে সরকারি কর্মকর্তাকর্মচারীদের জন্য ৬৮৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ, নগরে পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি আবাসিক ফ্ল্যাট ও ডরমিটরি ভবন নির্মাণ (বিভিন্ন সংখ্যক তলা বিশিষ্ট ১৫টি ভবন) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৪টি ভবনে ১৬০টি ফ্ল্যাট ও ৬৪টি ডরমিটরি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের বহিঃসীমানা দিয়ে লুপ রোড নির্মাণসহ ঢাকা ট্রাংক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী রোড পর্যন্ত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব সড়ক নির্মাণ, সিরাজুদ্দৌলা রোড থেকে শাহ আমানত ব্রিজ সংযোগ সড়ক পর্যন্ত জানে আলম দোভাষ সড়ক নির্মাণ, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, আনোয়ারাফৌজদারহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ, চট্টগ্রামফেনী বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণ, মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ ও কেজিডিসিএল গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক আপগ্রেডেশন, চট্টগ্রামকক্সবাজার জাতীয় মহাসড়ক (এন০১) এর ২৫২তম কিলোমিটারে মুরালী খালের উপর ১২১ মিটার দীর্ঘ ভেল্লাপাড়া সেতু নির্মাণ, সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ, নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন, নির্বাচিত মাদ্রাসাসমূহের উন্নয়ন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ এবং মীরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নে আমান উল্লাহ ভূঁইয়া কমিউনিটি ক্লিনিক (ওয়ার্ড নং) নির্মাণ কাজ।

মনে হচ্ছে স্বপ্ন : এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যুগে প্রবেশ করেছে চট্টগ্রাম। নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় ঠিক থাকলে বিজয় দিবসের দিন সকালে বা ইংরেজি নববর্ষের দিন থেকে এর উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হবে। মাত্র ২০ মিনিটে নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর বা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে পৌঁছানো যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা এটাকে বলছেন ‘বৈপ্লবিক পরিবর্তন’। আর সাধারণ মানুষ বলছেন, আরেকটা স্বপ্নের বাস্তবায়ন মতো।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ কর্মী সালেহ আহমদ কালের সাক্ষী হতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, দেশে আসলেই উন্নতি হচ্ছে। সেটি আমরা বেশ কিছুদিন ধরে দেখে আসছি। টানেল হয়েছে। এবার হলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এটি শুধু একটি ফ্লাইওভার নয়, এটি পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজারের দূরত্ব ঘুচিয়েছে। মাত্র ২০ মিনিটে সহজে যাতায়াত করা যাবে। টানেলের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের স্বপ্নও সত্যি হলো। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওদের সুমতি হোক, অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করুক
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬