গলার স্বর শুনে ডায়াবেটিস চিহ্নিত করা যাবে

অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরী | মঙ্গলবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ভূমিকা : জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশ সহ জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের ৬২টি জেলার সাথে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতিও দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এই দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অনুধাবনের প্রেক্ষিতে দেশের সরকার প্রধান ও রাষ্ট্র প্রধান বিভিন্ন পত্রিকায় বাণী দিয়ে থাকেন। বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’এ এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ঃ ”ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানুন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন”।

ডায়াবেটিসের বিশ্বায়ন : বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস মহামারী আকার ধারন করেছে। রোগের ব্যাপকতা উপলব্ধি করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯৭ সালে ডায়াবেটিস রোগটিকে মহামারী হিসাবে ঘোষনা করে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আই.ডি.এফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে সারা পৃথিবীতে মোট ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৪ কোটি। এই সংখ্যা ২০৪৫ সালে ৭৮ কোটিতে পৌঁছাবে বলে আশংকা করা হয়েছে। আশংকার বিষয়, মোট রোগীর অর্ধেকই তার শরীরে যে ডায়াবেটিস আছে তা জানে না। এখানে উল্লেখ্য যে, উন্নত বিশ্বের দেশগুলির তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশেও ডায়াবেটিস বৃদ্ধির হার অনেক বেশী। বর্তমানে ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীই বসবাস করে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। দ্রুত নগরায়ন ও জীবনযাপনে পরিবর্তন এর অন্যতম কারন হিসাবে দেখা হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস মহামারী প্রতিরোধে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ২০০৬ সালের ২০শে ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ‘ইউনাইটস ফর ডায়াবেটিস‘ নামে একটি ঘোষনা গৃহীত হওয়ার পাশাপাশি ১৪ই নভেম্বরকে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

ডায়াবেটিস ও বাংলাদেশ : পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ডায়াবেটিস ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগসমূহ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আই.ডি.এফ তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে মোট ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩১ লক্ষ। ধারনা করা হচ্ছে ২০৪৫ সালে রোগীর সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডি স্টেপ সার্ভে ২০২২২৩ এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতি দশজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস সমিতির তথ্য মতে, এই সংখ্যা প্রতি পাঁচজনে একজন। সমিতির গবেষনা বলছে, চারজন নারীর মধ্যে একজন গর্ভকালিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে, পনের শতাংশ নারী এক বছরের মধ্যেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক মানুষরাই না, শিশুদের মধ্যেও বাড়ছে ডায়াবেটিস। ১৫২০ বয়সি শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার ৪.৪ শতাংশ আশংকার কথা, আক্রান্তদের অর্ধেকের বেশি তাদের রোগ সর্ম্পকে অবগত নন। উপসর্গ না থাকায় বেশিরভাগ মানুষ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করান না ফলে দেরিতে ডায়াবেটিস সনাক্ত হওয়ায় ৫০৬০ শতাংশের ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা নিয়ে সনাক্ত হন। গবেষণা বলছে, ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে শুধুমাত্র ২০ শতাংশের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যার ফলে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা বিশেষ করে চোখ, কিডনি, হার্ট, স্নায়ুর রোগ দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশের স্বাস্থ্যখাতে। উদ্বেগের বিষয় হলো, বাংলাদেশের সীমিত স্বাস্থ্যবাজেট দিয়ে ভবিষ্যতে এই বিপুল পরিমাণ ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়া সত্যিকার অর্থে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

দেশীয় গবেষণালব্ধ ফল : ডায়াবেটিস যেহেতু সারা জীবনের রোগ তাই সারা জীবন একজন ডায়াবেটিস রোগীকে বিভিন্নভাবে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সনাক্তের ১০১২ বৎসর পূর্বেই শরীরে ডায়াবেটিস, মূলত টাইপ২ ডায়াবেটিস রোগ সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে থাকে এবং ঝুঁিকপূর্ণ অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে ৬০৭০ ভাগ ক্ষেত্রে টাইপ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। ফিনল্যান্ড, চীন, ভারত ও আমেরিকায় পরিচালিত গবেষণার মত বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি পরিচালিত ডায়াবেটিস প্রতিরোধ বিষয়ক গবেষণায় প্রিডায়াবেটিস সনাক্ত মানুষদের শুধুমাত্র জীবনযাপনে শৃঙ্খলা ও পরিবর্তনের মাধ্যমে ৬০ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।

ডায়াবেটিস ও শেখ হাসিনা : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিন ও বাংলাদেশের ৫০ বছর উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ননকমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি যৌথভাবে “কান্ট্রি চেঞ্জিং ডায়াবেটিস” নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন, জাইকা ও আইএফআইসি ব্যাংক এর পাশাপাশি বেশ কিছু দেশী ও আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগীতা করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন কর্তৃক ১ম গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর ফর ডায়াবেটিস মনোনীত হওয়ায় প্রকল্পটির গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। ফলশ্রুতিতে ডায়াবেটিস ও এর জটিলতা হ্রাস বিষয়ক নাগরিক সচেতনতা তৈরীতে যেমন ভূমিকা রাখবে তেমনি সরকারের এসডিজি (৩ ও ১১) লক্ষ্য পূরণে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখবে। অতি সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সদাশয় সরকার, স্বাস্থ্যবান্ধব সরকার বিধায় গরীব রোগীদের বিনামূল্যে ইনসুলিন দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছেন কম্যুনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার এই মহতী উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

ডায়াবেটিস ও বাংলাদেশ সরকার : জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে সমন্বিত প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে। যাতে মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, গীর্জার পাদ্রী, নিকাহ রেজিষ্ট্রার তথা বিবাহের কাজীদের সমন্বয়ে, সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সমন্বিত সচেতনতা মূলক প্রোগ্রাম চলমান আছে। পাশাপাশি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিবাহের নিকাহ রেজিষ্ট্রার বা কাজীদের মাধ্যমে বর ও কনের ডায়াবেটিক পরীক্ষাসহ সচেতনতা মূলক প্রোগ্রাম। এছাড়া গর্ভবতী মা ও নবজাতক শিশুদের ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গর্ভধারণ পূর্ব সেবা (Pre-Conception Care) গ্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে ।

সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক আবিষ্কার : দিন দিন ডায়াবেটিক রোগ এবং রোগী যেমন বাড়ছে তেমনি দিন দিন পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (IDF) তত্ত্বাবধানে অনেক বিজ্ঞানী অক্লান্ত পরিম্রমের ফল হিসাবে ঔষধ এবং ইনসুলিনের উন্নয়নের বিভিন্ন টেষ্ট বা পরীক্ষার বেলায়ও গবেষণা চলমান আছে। সম্প্রতি একটি গবেষণা জানাচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা A.I (Artificial Intelligence) টাইপ ২ ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে পারে। গলার স্বর শুনেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে বলে দেওয়া সম্ভব যে, শরীরে ডায়াবেটিস বাসা বেঁধেছে কি না। মায়ো ক্লিনিকের “ডিজিটাল হেলথ” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই সমীক্ষা। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এত সহজে ডায়াবেটিস নির্ণয়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে চর্চা। এই সমীক্ষার আয়োজক কমিটিতে থাকা গবেষক ইয়ান ফোসাট জানাচ্ছেন, স্বর শুনে ডায়াবেটিস চিহ্নিত করার এই প্রযুক্তি নবজাগরণের মতো। ফলশ্রুতিতে রক্ত পরীক্ষার জন্য ফোঁড়াফুঁড়ির কষ্ট থেকে রোগীরা পরিত্রাণ পাবে।

ডায়াবেটিস ও চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল ঃ ডায়াবেটিসকে বলা হয় নীরব ঘাতক এবং সর্ব রোগের আহবায়ক। যেহেতু ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ বিধায় নিরাময়যোগ্যও নয়। সেজন্য ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের প্রত্যেক অঙ্গকে আস্তে আস্তে আক্রমণ করতে শুরু করে ফলশ্রুতিতে বহুমুখী প্রাণঘাতী রোগের সংযোগ ঘটে ডায়াবেটিসের সমন্বয়ে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস যেহেতু সর্বরোগের আহবায়কের ভূমিকা পালন করে সেহেতু হার্ট, কিডনী, চোখ, দাঁত, চর্ম, যৌন, লিভার সহ প্রায় প্রতিটি অর্গান ডায়াবেটিসের আহবানে সাড়া দিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে ত্বরান্বিত করে। অতএব ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে এবং তার বিপরীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে অকালেই অন্যান্য রোগের মাধ্যমে জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে অনেকখানি সহজ হবে। এরই প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সাহায্য করার জন্য আপনার পাশে দাঁড়াতে সদা প্রস্তুত। আগেই বলেছি যেহেতু ডায়াবেটিস সব রোগের আহবায়ক সেহেতু ডায়াবেটিসের পাশাপাশি অন্যান্য রোগের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য একই ছাদের নীচে ১৯টি বিশেষায়িত বিভাগ তথা কিডনি, হার্ট, মেডিসিন, গাইনি, চর্ম, ফিজিক্যল মেডিসিন, চক্ষু, দন্ত, হরমোন, শিশু, ফিজিওথেরাপি, অর্থোপেডিক ও ফুটকেয়ার, নাক, কান, গলা, সার্জারী বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে সমন্বিত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গতা দিতে আইসিইউ, সিসিইউ এবং কিডনী ডায়ালাইসিস সহ যাবতীয় সেবাও চলমান রয়েছে। ইদানীং শিশু ডায়াবেটিক রোগীও বেড়ে গেছে। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ৭৫০ জন শিশু ডায়াবেটিক রোগী নিবন্ধিত আছে। শিশু ডায়াবেটিক এবং বয়ষ্ক ডায়াবেটিক এর মধ্যে পার্থক্যটা হচ্ছে শিশুদের ডায়াবেটিস ধরা পড়লে অবশ্যই অবশ্যই ইনসুলিন প্রয়োগ করতে হয়। নাহলে সেই শিশুর মৃত্যু অনিবার্য। যে দায়িত্ব চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল নিয়েছে।

এছাড়া রোগীদের ল্যাবরেটরি সাপোর্টের জন্য রয়েছে স্বয়ংসম্পূর্ন অত্যাধুনিক বিশ্বমানের ডায়াগনষ্টিক সেটআপ যেখানে রয়েছে সকল পরীক্ষা নিরীক্ষার সুবিধা। চক্ষু বিভাগে ফান্ডাস মেশিনের সাহায্যে ডায়াবেটিক রোগীদের গ্লুকোমা সনাক্ত করে চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি চোখের ছানি অপারেশনের জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা। অত্র হাসপাতালে ৫টা সেন্টারের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১ হাজারের অধিক রোগী এবং ইনডোরে প্রায় ১০০এর মতো রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে থাকে। খুলশীস্থ হাসপাতালের পাশাপাশি রোগীদেরকে স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার নিমিত্তে শহরের বন্দরটিলা, এনায়েত বাজার, বহদ্দারহাট এবং অক্সিজেনেও বহির্বিভাগ সেবা চালু রয়েছে যেন ঐ এলাকার রোগী সাধারণকে কষ্ট করে সময় এবং অর্থ অপচয় করে খুলশীতে আসতে না হয়। একারণে উক্ত এলাকার রোগীদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে এবং স্বল্প সময়ে যথাযথ সেবা পাচ্ছে। হাসপাতালের ইনডোর বিভাগে ১০০ বেড এবং ৩৫টা কেবিনের মাধ্যমে রোগীসেবা কার্যক্রম চলমান আছে যেখানে প্রত্যেক রোগীকে ৫ বেলা খাবার হাসপাতালের খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের তত্ত্বাবধানে সরবরাহের পাশাপাশি যথাযথ চিকিৎসা সেবাও দেওয়া হয় একঝাঁক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে। এছাড়াও ফুট কেয়ার বিভাগে অর্থোপেডিক সার্জনের তত্ত্বাবধানে প্রত্যহ অসংখ্য রোগীদের চিকিৎসা সেবা ও সার্জারী সেবা দিয়ে যাচ্ছে ফলে গ্যাংগ্রিন থেকে বাঁচাতে পায়ের আঙ্গুল বা পা কাটার মাধ্যমে চট্টগ্রামের রোগীরা ঢাকা যাওয়ার বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাচ্ছে ফলশ্রুতিতে সময় ও খরচ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে।

এছাড়াও শহরের বাইরে গ্রাম পর্যায়ে ডায়াবেটিস চিকিৎসা সেবাকে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে বিস্তৃতি ঘটিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় ফটিকছড়ি, সীতাকুন্ড, হাটহাজারী, পটিয়া, কর্ণফুলী, আনোয়ারা, দোহাজারী, রাঙ্গুনীয়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, রাউজান সহ বিভিন্ন উপজেলায় ডায়াবেটিক সমিতির মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা চলমান রয়েছে।

উপসংহার : যেহেতু ডায়াবেটিস অনিরাময়যোগ্য ও আমৃত্যু এই রোগের চিকিৎসা সেবা একজন রোগীকে গ্রহণ করতে হয়, সেহেতু চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল তুলনামূলক কম খরচে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাতে ডায়াবেটিস চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগীদের জীবন জীবিকায় কোন প্রভাব না পড়ে। আসুন এবারের বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়কে ধারণ করে আমরা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে সদা সচেষ্ট থাকি পাশাপাশি প্রতিকার ও প্রতিরোধে সবাই মিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে ডায়াবেটিক ও ননডায়াবেটিক সকল রোগীদের জন্য সমানভাবে চিকিৎসা সেবা চলমান রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে সুলভমূল্যে সকল চিকিৎসা সেবা পেতে ডায়াবেটিক হাসপাতালে আসুন, চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন।

লেখক : সভাপতি, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাবা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন খান: আমার আবেগ আমার অনুভূতি
পরবর্তী নিবন্ধভূগোলের গোল