প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করা হবে আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে ভার্চুয়ালি প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যে দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের যুগে প্রবেশ করছে চট্টগ্রাম। আশা করা হচ্ছে, নগরীর যান চলাচলের ক্ষেত্রে এই এক্সপ্রেসওয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন সম্পন্ন হলেও আজ থেকে এটির উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে না।
সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে সিডিএ। চার লেনের এই ফ্লাইওভারটির নামকরণ করা হয়েছে ‘মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরী–সিডিএ ফ্লাইওভার’। এটি নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গার কাঠগড় পর্যন্ত বিস্তৃত।
জানা গেছে, ফ্লাইওভারের কাঠগড় থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারেরও বেশি অংশের চার লেনের পিচ ঢালাই প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়গুলো ঠিকঠাক করে মহান বিজয় দিবসের দিন সকালে এই অংশ যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। তবে কোনো কারণে সেটি সম্ভব না হলে ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিনই এটি খুলে দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। প্রাথমিকভাবে এখান থেকে কোনো টোল নেয়া হবে না। সবগুলো লুপ এবং র্যাম্প নির্মিত হয়ে ফ্লাইওভার পুরোদমে চালু হওয়ার পর টোল আরোপ করা হবে।
সূত্র জানিয়েছে, উল্লেখিত ১৫ কিলোমিটার অংশে তৈরি হয়ে গেছে গাড়ি চলাচলের রাস্তা। তবে ডিভাইডার এবং সাইডওয়ালসহ কিছু কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এসব কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য রাতে দিনে শত শত শ্রমিক কর্মচারী এবং প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। আগামী দিনকয়েকের মধ্যে এসব কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বলা হয়েছে, সিভিল কাজ খুবই টেকনিক্যাল। একেবারে দিনক্ষণ ঠিকঠাক করে এগুলো আগাম বলা কঠিন। তবে সবমিলিয়ে মাস খানেকের মধ্যে কাজগুলো শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি।
অপরদিকে পুরো ফ্লাইওভার সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হবে বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তার দিকটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এগুলো শেষ করার পর প্রাথমিকভাবে টাইগারপাস থেকে কাঠগড় পর্যন্ত ফ্লাইওভার চালু করে দেয়া হবে। অর্থাৎ টাইগারপাস–কাঠগড় যাতায়ত করা যাবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেওসয়েতে সর্বমোট ১৪টি র্যাম্প এবং লুপ থাকবে। যেগুলো নির্মিত হতে আরো বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। এর আগে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে লালখান বাজারে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত করে দেয়া হবে। জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের পাশে দুইটি ফ্লাইওভারকে যুক্ত করার কাজ চলছে।
সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেন, সবগুলো র্যাম্প এবং লুপ নির্মাণের পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পুরোদমে চালু হলেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে টোল আরোপ করা হবে। এর উপর দিয়ে ঠিক কখন যান চলাচল শুরু হবে তার দিনক্ষণ ঠিক হয়নি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। অচিরেই এসব কাজ শেষ হয়ে যাবে। প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে বলেও তিনি জানান।
সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নগরীর যান চলাচলের ক্ষেত্রে শুধু বিপ্লবই নয়, বড় ধরণের একটি পরিবর্তন নিয়ে আসবে। দুচার বছর আগে স্বপ্নেও কেউ ভাবে নি এমন গতিশীলতা তৈরি হবে। শহরের যে কোনো স্থান থেকে মাত্র বিশ মিনিটে এয়ারপোর্টসহ সন্নিহিত অঞ্চলে যাতায়ত করার এক স্বর্ণ দুয়ার এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দিচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত বলা হলেও মূলত এটি শুরু হচ্ছে বহদ্দারহাট থেকে। বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার থেকে নেমে মুরাদপুর–লালখান বাজারের বিদ্যমান আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার হয়ে মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী–সিডিএ ফ্লাইওভারে উঠা যাবে। ফলে মুরাদপুর থেকে ফ্লাইওভারে উঠা কোনো গাড়ি আর মাটি স্পর্শ না করেই পতেঙ্গা বিচ বা টানেলের মুখ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। পতেঙ্গা থেকে শহরে আসা গাড়িগুলো টাইগার পাস হয়ে লালখান বাজারে ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির সামনে নিচে নামবে এবং যাদের মুরাদপুর বা বহদ্দারহাট কিংবা ওই রোড ধরে অন্য কোথাও যাওয়া দরকার তারা লালখান বাজার থেকে আবারো ফ্লাইওভারে চড়তে পারবে। টাইগার পাসে পাহাড় না কাটার জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চার লেনের মধ্যে দুই লাইন নিচে নামিয়ে দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। মূল ফ্লাইওভার থেকে পরবর্তীতে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ১৪টি লুপ এবং র্যাম্প নামানো হলে চট্টগ্রাম মহানগরীর কানেক্টিভিটি ভিন্ন মাত্রা পাবে বলেও কাজী হাসান বিন শামস মন্তব্য করেন।