সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
স্থানীয় সময় আজ সোমবার (১৩ নভেম্বর) সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সুয়েলা ব্রাভারম্যানকে বরখাস্ত করার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সুনাক তার মন্ত্রিসভায় রদবদলের সূচনা করেন।
ব্রাভারম্যানকে বরখাস্তের আনুষ্ঠানিক কোনো কারণ জানানো হয়নি। তবে গত শনিবার লন্ডনে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল পুলিশ যেভাবে সামাল দিয়েছে তার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন তিনি। তার ওই সমালোচনা সরকার ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সুনাকের কর্তৃত্বকেই প্রশ্নে মুখে ফেলে দিয়েছিল বলে মত অনেকের।
যুক্তরাজ্যে আগামী বছর পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগে নানা জনমত জরিপে বিরোধী লেবার পার্টির কাছে সুনাকের দল কনজারভেটিভ পার্টির খুব খারাপ ভাবে পিছিয়ে থাকার চিত্র উঠে আসছে। সরকার ব্যবস্থায় বড় রদবদল এনে সুনাক হয়তো সেই অবস্থার পরিবর্তন করতে চাইছেন।
এ কারণেই হয়তো তিনি দলের চরম ডানপন্থিদের খুশি রাখার পরিবর্তে (যারা ব্রাভারম্যানকে সমর্থন করেছিলেন) ক্যামেরনের মত মধ্যপন্থি এবং অভিজ্ঞ নেতাকে সরকার ব্যবস্থায় ফিরিয়ে এনেছেন।
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলের হামলা বন্ধের দাবি জানিয়ে গত শনিবার প্রায় তিন লাখ মানুষ লন্ডনের রাস্তায় বিক্ষোভ করে। যুক্তরাজ্য সরকার থেকে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে ওই বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করতে না দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ সেই অনুরোধ নাকচ করে বলেছিল, বিক্ষোভে বড় ধরনের সহিংসতা হওয়ার কোনো ইঙ্গিত বা আশঙ্কা নেই। তাই সরকারি অনুরোধে এ বিক্ষোভ বন্ধ করার সুযোগ নেই।
এদিকে, ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে হওয়া বিক্ষোভ মিছিলের পাল্টা হিসেবে ওই দিনই চরম ডানপন্থিরা আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিল। যাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয় এবং পুলিশ ওই দিন প্রায় ১৫০ জনকে আটক করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে যুক্তরাজ্য সরকারে ফিরলেন ডেভিড ক্যামেরন
বরখাস্ত সুয়েলা ব্রাভারম্যান, যুক্তরাজ্যের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি
ব্রাভারম্যান ফিলিস্তিনের সমর্থনে হওয়া বিক্ষোভ মিছিলকে ‘বিদ্বেষমূলক মিছিল’ বলে মন্তব্য করেন। তার ওই মন্তব্য লন্ডনে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি করে বলে অভিযোগ করেন লেবার পার্টির নেতারা।
গত সপ্তাহে একটি ‘আনঅথরাইজড’ আর্টিক্যালে ব্রাভারম্যান বিক্ষোভ আয়োজন নিয়ে লন্ডন পুলিশ ‘দ্বিমুখী আচরণ’ করে বলেও অভিযোগ করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মত এত গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা কারো এহেন মন্তব্যে বিরোধী আইনপ্রণেতাদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন প্রধানমন্ত্রী সুনাক। তারা ব্রাভোরম্যানের পদত্যাগ দাবি করেন। এমনকি, সুনাকের দলের ভেতর থেকেও ব্রাভারম্যানকে সরিয়ে দেওয়ার চাপ সৃষ্টি হয়।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরেই মন্ত্রিসভায় রদবদলের পরিকল্পনা করছিলেন সুনাক। ব্রাভারম্যানকে ‘সরকার ব্যবস্থা থেকে সরে যেতে বলে’ সোমবার সকালে সুনাক সেই রদবদলের সূচনা করেন। ব্রাভারম্যান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে নিয়ে বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছিল আমার জন্য সবচেয়ে সম্মানের। যথা সময়ে আমি আরো কিছু কথা বলবো।”
ব্রাভারম্যানের সরে যাওয়ার পরই জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়, তবে কে হচ্ছেন যুক্তরাজ্যের পরবর্তী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য নতুন নাম জানা যায়। তিনি হলেন, জেমস ক্লেভারলি। তিনি এতদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ক্লেভারলি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই বলেছেন, তার নতুন লক্ষ্য ‘দেশের মানুষকে নিরাপদে রাখা’।
তবে ব্রাভারম্যানকে বরখাস্ত করে নয় বরং ক্যামেরনকে সরকার পরিচালনায় ফিরিয়ে এনে দিনের সবচেয়ে বড় চমকটি দেন প্রধানমন্ত্রী সুনাক। যার তার দল কনজারভেটিভ পার্টির জন্যও বিস্ময় হয়ে এসেছে বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সোমবার ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে হাসি মুখে বের হয়ে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) এ পোস্টে ক্যামেরন লেখেন, “নতুন ভূমিকা নিতে পেরে তিনি দারুণ আনন্দিত। কারণ, বৈশ্বিক পরিবর্তনের এই সময়ে দেশ হিসেবে আমাদের নিজেদের মিত্রদের পাশে দাঁড়ানো, নিজেদের অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করা এবং আমদের কণ্ঠস্বর যাতে সবাই শুনতে পায় তা নিশ্চিত করার মত গুরুত্বপূর্ণ সময় অতীতে খুব কমই এসেছে। যদিও (তার) কিছু ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে আমার দ্বিমত আছে, তবে এটা আমার কাছে স্পষ্ট যে ঋষি সুনক একজন শক্তিশালী এবং যোগ্য প্রধানমন্ত্রী, যিনি কঠিন সময়ে অনুকরণীয় নেতৃত্ব দেখাচ্ছেন।”
৫৭ বছরের ক্যামেরন ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬ সালে ঐতিহাসিক এক গণভোটে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের (বেক্সিট) পক্ষে রায় এলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান ক্যামেরন। তিনি ইইউতে থেকে যাওয়ার পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন।
পদত্যাগের পর গত সাত বছর নিজের স্মৃতিকথা লিখে এবং ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন ক্যামেরন। যদিও ব্যবসায় তেমন একটা সুবিধা করতে ব্যর্থ হন তিনি। তার ফিন্যান্স ফার্ম ‘গ্রিনসিল ক্যাপিটাল’ বন্ধ হয়ে গেছে।
কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যপন্থি আইনপ্রণেতারা ক্যামেরনের ফিরে আসাতে খুশি। তারা আশা করছেন, এই নিয়োগ সরকার ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাকে ফিরিয়ে আনবে এবং দেশবাসীর জন্য এটা একটি বড় বার্তাও।
কিছু কিছু আইনপ্রণেতার ভয় ছিল, ব্রাভারম্যান অভিবাসন এবং নানা সামাজিক ইস্যুতে নিজের কঠোর অবস্থানের মাধ্যমে কনজারভেটিভ পার্টিকে ‘খারপ দল’ হিসেবে উপস্থাপন করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন।
এদিকে, কেউ কেউ ক্যামেরনের প্রত্যাবর্তনে নাখোশ হয়েছেন। তারা মনে করেন, পুলিশের কিভাবে বিক্ষোভ সামলানো উচিত সে বিষয়ে ব্রাভারম্যান সঠিক ছিলেন। তারা বলেছিলেন, এভাবেই ভবিষ্যতে তিনি আওয়াজ তুলে যাবেন।
আবার ব্রেক্সিটের পক্ষে থাকা কেউ কেউ ক্যামরনের ফিরে আসাতে এমনও বলছেন, তার ফিরে আসার অর্থ দলের মধ্যে সেই ‘থেকে যাওয়ার পক্ষের’ শাখার ফিরে আসা।
সোমবার সুনাকের আরো দুই মন্ত্রী দায়িত্ব ছেড়েছেন। তারা হলেন পরিবেশমন্ত্রী থেরেস কফি এবং পরিবহনমন্ত্রী জেসি নরম্যান।