বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালে যাত্রা শুরু করেছে অ্যাসিসটেড রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি (এআরটি) সেন্টার। গতকাল বেলা ১১টায় ফিতা কেটে এটি উদ্বোধন করেন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান রুকমিলা জামান। সেন্টারটিতে প্রাথমিক ধাপে ইন্ট্রা ইউটেরাইন ইন্সেমিনেশন (আইইউআই) পদ্ধতিতে নিঃসন্তান দম্পতিদের সেবা দেওয়া হবে। বন্ধ্যাত্ব সমস্যায় ল্যাবরেটরিতে স্বামীর বাছাইকৃত ও গুণগত মানসম্পন্ন শুক্রাণু স্ত্রীর গর্ভাশয়ে সরাসরি প্রবেশ করানোর এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির নাম আইইউআই। এতে শুক্রাণুর পরিভ্রমণ পথ সংক্ষিপ্ত হয়ে ডিম্বাণুর কাছাকাছি প্রতিস্থাপিত হয়। অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, পরবর্তীতে এই সেন্টারে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) পদ্ধতি চালু করা হবে।
যাত্রা শুরু করা সেন্টারের নেতৃত্ব রয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিদ্যা বিভাগের সাবেক প্রধান ও অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. শাহানারা চৌধুরী। তিনি বলেন, ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নারী বিয়ের এক বছরের মধ্যে কনসিভ (গর্ভধারণ) করতে পারে না। আমরা নিঃসন্তান তাদেরই বলি যারা বিয়ের পর স্বামী–স্ত্রী একসঙ্গে থাকার পরেও যদি ১২ মাস চলে যায়, তাও কনসিভ না হয়। তখনই আমরা চিকিৎসা শুরু করি। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায়, স্বামী বিদেশ চলে যায়, আবার আসে। তখন একটা মেন্টাল স্ট্রেস হয়, স্বামী চলে যাবে, আবার কখন আসবে। এখানে সাইকোলজিক্যাল বিষয়টাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পুরো পরিবার যদি সাপোর্টিভ না হয় তখনও কিন্তু গর্ভধারণ হয় না। আর যদি স্ত্রীর বয়স পঁয়ত্রিশের কাছাকাছি হয়, তখন উনি বিয়ের ৬ মাসের মধ্যে গর্ভধারণ না হলে তখন পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে কারণ দেখি। এই যে বিরাট অংশ যারা নিঃসন্তান, তাদের সেবা দেওয়াটা কিন্তু বাকিদের সেবা দেওয়ার চেয়ে আলাদা। ওদের কিন্তু চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক ও সাপোর্টিভ পরিবেশ তৈরি করার বিষয় থাকে। কাউন্সেলিং করতে হবে। আজকে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল সেই সুন্দর পরিবেশটি তৈরি করেছে। তবে সাধারণ রোগীর সাথে তাদের চিকিৎসা না দেওয়াটা ভালো।
তিনি আরো বলেন, একটা দম্পতির প্রত্যাশা হচ্ছে, একটা বাচ্চা হওয়া। যদি কারো বাচ্চা হয়, ওই সময় স্বামী–স্ত্রীর ওপর অনেক ধকল যায়। স্ব্বামী–স্ত্রী হয়তো বিষয়টি মানিয়ে নিতে পারে। কিন্তু এখানে যখন তৃতীয় পক্ষ সবসময় জিজ্ঞেস করে, বাচ্চা হয় না কেন? ডাক্তার দেখাও না কেন? এসব প্রশ্ন তাদের জন্যও বিরক্তিকর। এক্ষেত্রে আমরা দেখি অনেক দম্পতি সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে যেতে চায় না। কারণ তাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আমরা জানি এটা কত বেদনাদায়ক। বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা এখন অনেক দূর এগিয়েছে। এখন আমরা নিঃসন্তান বলি না। আমরা কম সন্তান সম্ভাবনা বলি। ইনফার্টিলিটির প্রথম পদ্ধতি হচ্ছে রোগ নির্ণয় করা। সেই সুযোগ তো এখানে প্রথম থেকেই আছে। রোগ নির্ণয়ের পরের ধাপ হচ্ছে চিকিৎসা দেওয়া। এটাও কিন্তু বহির্বিভাগে আছে। যাদের হাসপাতালের বহির্র্বিভাগের সেবায় কাজ হচ্ছে না, ইন্টারভেনশন বা যন্ত্রপাতির সাহায্য লাগবে, তাদের জন্যই এই সেন্টার। সাধারণ কারণে যেসব দম্পতির বাচ্চা হয় না, তাদের জন্য এই সেন্টার নয়। আমরা বহির্বিভাগে রোগী দেখি, কিন্তু সবাইকে অপারেশন থিয়েটারে নিই না। যাদের অপারেশন লাগবে তাদেরই নিচ্ছি। এটিও সে রকম। সাধারণ বাচ্চা না হওয়ার যে কারণ সেগুলো আমরা বহির্বিভাগে সমাধান করছি।
অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান ওয়াহিদ মালেক বলেন, কিছু বিষয় আমরা সামাজিকভাবে চেপে যেতে চাই। সন্তান না হওয়ার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মহিলা, ৩০ শতাংশ পুরুষ এবং বাকি ৪০ শতাংশের কারণ অজানা। ওই জায়গাতে আমরা অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতাল নিঃসন্তান দম্পতির মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টায় আছি।
অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাফিদ নবী বলেন, আমাদের দেশে প্রেগনেন্সি সমস্যা হলে মহিলাদের দিকে আঙুল তোলা হয়। আসলে মহিলাদের কারণে সমস্যা হয় ৩০–৩৫ শতাংশ। বাকি সমস্যা সাধারণত পুরুষের কারণে হয়। শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণেও গর্ভধারণ হয় না।
অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডা. এএন রাও বলেন, বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবার অঙ্গীকার নিয়ে আমরা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। আমরা রোগীদের প্রত্যাশা পূরণে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি। সেই ধারাবাহিকতায় এআরটি সেন্টার চালু করেছি। যেসব দম্পতি আগে ইনফার্টিলিটির সমস্যার কারণে বিদেশে দৌড়াদৌড়ি করতেন, তাদের জন্য এই সেন্টার হবে আস্থার জায়গা। আমরা এখন আইইউআই পদ্ধতি দিয়ে সেন্টারের কার্যক্রম শুরু করেছি। আমাদের এখানে ৬ জন স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যুক্ত আছেন। ভবিষ্যতে এখানে আইভিএফ পদ্ধতিও চালু করা হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শিরিন ফাতেমা, ডা. শাহনাজ শারমিন, কনসালটেন্ট ডা. দিল আনজিজ বেগম, ডা. রেশমা সুলতানা, দৈনিক আজাদীর নির্বাহী সম্পাদক পারিহা আকতার, ফারহানা সিফাত জহির, হাসপাতালের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. মাসুদ আহমেদ ও চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. প্রকাশ কেএন।