স্তব্ধ ফিলিস্তিনের কণ্ঠ

রিতু পারভী | শনিবার , ১১ নভেম্বর, ২০২৩ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

বিস্ফারিত রকেটের আলো ছাড়া নিকষ অন্ধকারে ছেয়ে আছে গাজার রাতের আকাশ,

নীরবতায় মগ্ন চারদিক; কেবল বোমার সুতীক্ষ্ম চিৎকার,

প্রার্থনার প্রশান্তি ছাড়া সর্বক্ষণ আতঙ্ক,

কুচকুচে কালো রাত, শুধু শহীদের আলো উদ্ভাসিত,

শুভরাত, গাজা’

উপরের লাইনগুলো একজন ফিলিস্তিনি কবির লেখা শেষ কবিতা, যা লেখা হয়েছিল যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজায় বসে। যুদ্ধের নিষ্ঠুরতার কাছে যিনি হার মেনেছেন সমপ্রতি, যাকে আর কখনো বিভীষিকাময় কালো রাতের বর্ণনা দিতে হবে না, লিখতে হবে না যুদ্ধের করুণগাঁথা।

ফিলিস্তিনের কন্ঠ নামে পরিচিত হেবা কামাল আবু নেদা ফিলিস্তিনইজরায়েল যুদ্ধে নিহত হয়েছেন ক’দিন আগে (২০ অক্টোবর ২০২৩)। মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে শেষ হয়ে যায় এই গুণী, সৃজনশীল লেখকের জীবন। একাধারে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক হেবা ফিলিস্তিন সমস্যাকে তাঁর লেখায় তুলে আনেন।

যুদ্ধ সবসময়ই নিকৃষ্টতম। সকল যুদ্ধেরই শিকার হয় নিরীহ মানুষ। ফিলিস্তিনইজরায়েল যুদ্ধের এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। চরম বিভীষিকার মধ্যে অতিবাহিত করছে ফিলিস্তিনের গাজা এলাকার মানুষ। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে শত শত মানুষ যার অগ্রভাগে রয়েছে নিষ্পাপ শিশুরা, নারীরা। এই যুদ্ধে নিহতদের মধ্যে চল্লিশ শতাংশ শিশু এবং তিরিশ শতাংশ নারী যা অত্যন্ত ঘৃণ্য এবং হৃদয় বিদারক। এভাবে পরিকল্পিতভাবে নারী শিশু হত্যা কখনোই কোনো যুদ্ধের স্ট্র্যাটিজি হতে পারে না। এটা আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধের অন্তর্ভুক্ত। ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সমূলে শেষ করে দিতে কোনো কূটচাল যে নয় তাও নিশ্চিত করে বলা যায় না, নয়তো একটা যুদ্ধে এতো শিশুকে হত্যা করে হবে কেন! নির্বিচারে বোমা ফেলা হচ্ছে গাজার ঘনবসতি আবাসিক এলাকায়। এমনই এক অভিযানে

গাজার খান ইউনিসে আবাসিক এলাকায় বোমা বিস্ফোরণে মারা যান তরুণ সাহসী লেখক হেবা কামাল আবু নেদা।

হেবা আবু নেদা ১৯৯১ সালে সৌদি আরবের মক্কা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এক ফিলিস্তিন উদ্বাস্তু পরিবারে জন্ম হেবা কামাল জৈব রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করেন। শিক্ষা পুনর্বাসন নিয়েও পড়াশোনা করা হেবা মূলত শিক্ষা নিয়েই তাঁর পেশাগত জীবন শুরু করেন। গুণী এই নারী শিক্ষা ক্ষেত্রে এবং সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন সময়ে পুরস্কৃত হন। তিনি খ্যাতি অর্জন করেন একাধারে ছোট গল্প, উপন্যাস এবং কবিতা লিখে। ফিলিস্তিন সমস্যা নিয়ে লেখা ছোট গল্পের জন্য বিশেষভাবে পুরস্কৃত হন হেবা। তাঁর লেখা উপন্যাস ‘অক্সিজেন ইজ নট ফর দ্য ডেথ’ তাঁকে সুখ্যাতি এনে দেয় সাথে শারজাহ পুরস্কার।

ফিলিস্তিন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে হেবা কামালের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বলা তিনি একজন প্রতিভাবান লেখক ও কবি ছিলেন যিনি ইজরাইল সেনাবাহিনীর ক্রমাগত বোমাবর্ষণের সময় নিহত হন। হেবা কামাল আবু নেদার মৃত্যু ফিলিস্তিন সাহিত্যের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।

লেখক: পরিবেশকর্মী

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাজার হাসপাতালে ফের ইসরায়েলের হামলা
পরবর্তী নিবন্ধনারীর শক্তি ও একটি প্রাসঙ্গিক ভাবনা