১১ মাস পর আগামীকাল শনিবার আবারো কক্সবাজার সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এ সফরকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে পর্যটননগরী কক্সবাজারে চলছে সাজ সাজ রব। শহরসহ জেলার পাড়ায়–মহল্লায় চলছে উৎসবের আমেজ। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে স্বাগত জানিয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে টাঙানো হয়েছে ব্যানার–ফেস্টুন। শহরজুড়ে চলছে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা কাজ। প্রধানমন্ত্রী এবারের কক্সবাজার সফরে সাতটি বড় প্রকল্পসহ মোট ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন বলে জানান কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান। তিনি জানান, এছাড়াও আরও ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
জেলা প্রশাসক জানান, কক্সবাজার সফরে প্রধানমন্ত্রী ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারী–কক্সবাজার রেল লাইন ও আইকনিক রেল স্টেশন প্রকল্প ছাড়াও ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়িতে নির্মিত ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প, ৬৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত সাব মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়া দ্বীপকে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত করণ প্রকল্প, ৪৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত কস্তুরাঘাট–খুরুশকুল সেতু, ২৬২ কোটি টাকায় বাস্তবায়িত কক্সবাজার বিমান বন্দরের ভূমি ভরাট, প্রোটেকশান বাঁধ নির্মাণ, এপ্রোচ রোড ও সৌন্দর্য্য বর্ধন কাজ। এছাড়া ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে স্থাপিত ‘সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ডিজাইন ও স্থাপনকরণ প্রকল্প, ৪২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত মহেশখালী গোরকঘাটা–শাপলাপুর জনতা বাজার সড়কের মজবুত ও প্রশস্তকরণ প্রকল্প, ২৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপিত রামু কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এছাড়া উদ্বোধনের জন্য আরও ৬টি ছোট প্রকল্প প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী যে চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন সেগুলো হল– ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প, ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে টেকনাফ মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প। ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা–নন্দাখালী সড়কে ১৮৪ মিটার দীর্ঘ গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ এবং ১৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার সদরে কাব স্কাউটিং সমপ্রসারণ ( ৪র্থ পর্যায়) প্রকল্প।
কক্সবাজার শহরের অদূরে সদর উপজেলার চান্দের পাড়ায় গড়ে তোলা দেশের প্রথম ঝিনুক আকৃতির আইকনিক রেল স্টেশন। এ স্টেশনের পাশেই রেলপথ উদ্বোধনের জন্য আয়োজন করা হয়েছে একটি ছোট অনুষ্ঠান। এতে প্রায় ৫ হাজার মানুষ উপস্থিত থাকবেন। বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী বহুল প্রতিক্ষীত দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করবেন। দুপুরে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষন দেবেন।
এর ১১ মাস আগে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ কক্সবাজার সফর করেন। ওই সময় তিনি কক্সবাজারে ১৯৬৩.৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও চারটি নতুন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং ইনানীতে আটাশ দেশের চারদিনের নৌ মহড়ার উদ্বোধন করেন। টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর সেটি ছিল তার প্রথম কক্সবাজার সফর। এর সাড়ে ৬ বছর আগে ২০১৭ সালের ৬ মে কক্সবাজার–টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধনকালে তিনি সর্বশেষ কক্সবাজার সফর করেছিলেন।
তবে ২০১৭ সালের ৬ মে’র পর পর প্রধানমন্ত্রী সশরীরে কক্সবাজার সফরে না এলেও ভার্চুয়ালি নানা অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। তিনি গতবছর ১৮ মে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) ভবন উদ্বোধন করেন। তাছাড়া গতবছর ৩১ মার্চ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ উদযাপন উপলক্ষে “উন্নয়নের নতুন জোয়ার, বদলে যাওয়া কক্সবাজার” প্রতিপাদ্য নিয়ে কক্সবাজারে আয়োজিত একটি জাতীয় অনুষ্ঠানে কক্সবাজারবাসীকে উদ্দেশ্যে করে চাটগাঁইয়া আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দিয়ে স্থানীয়দের হৃদয় কাড়েন প্রধানমন্ত্রী।