পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে সংসার চলে মানুষের। এক বা দুই জন নয়, তিন শতাধিক মানুষ এর উপর নির্ভরশীল। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা, মানিকছড়ি, দীঘিনালাসহ বিভিন্ন উপজেলার সাথে দেখা যায়। এমনই এক গ্রাম আছে যেখানে এক গ্রামেরই অন্তত ২৫ জন মানুষের জীবিকা চলে পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে।
শিশির ভেজা ভোরে ওদের বেরিয়ে পড়া, বিকেলে ডিম সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরা। একদল মানুষ বাঁশের ঝুঁড়ি আর লম্বা বাঁশ নিয়ে বেড়ান এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। পাহাড়ের বিভিন্ন প্রজাতির গাছে পিঁপড়ার বাসা থেকে ডিম সংগ্রহ করেন তারা। দিনে এক থেকে দুই কেজি পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করেন প্রত্যেকে। প্রতি কেজি পিঁপড়ার ডিম বিক্রি হয় ৫শ থেকে ৬শ টাকায়। সেই টাকায় জীবন ও জীবিকা চলে এসব মানুষের।
মাটিরাঙার গোমতি ইউনিয়নের রংমিয়া পাড়ার রুস্তম আলী পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহকারী। তিনি বলেন, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করি। এসব ডিম মাছের খাবার ও বড়শি দিয়ে মাছ ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে স্থানীয় পাইকারদের কাছে বিক্রি করি। সাত বছর ধরে এই পেশায়।
মো. কামাল হোসেন বলেন, ডিম সংগ্রহের কাজ বেশ কষ্টকর। গাছের উপরের ডালে পিঁপড়া বাসা বাঁধে। ডিম সংগ্রহ করার সময় পিঁপড়ার কামড় খেতেই হয়। পিঁপড়ার বাসার উপর আয়ের পরিমাণ নির্ভর করে। একই এলাকার বাসিন্দা ডিম সংগ্রহকারী মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা সাধারণত লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে থাকি। লাল পিঁপড়ার বাসায় মিলে প্রচুর সাদা ডিম। মেহগনি, আম, লিচু, কনক ও কড়াইসহ দেশীয় গাছগুলোতে লাল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ২৫ জন নির্দিষ্ট ডিম সংগ্রহকারী আছে। তাদের থেকে কিনে সেসব ডিম আমি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাই। মাছের খামারি ও সৌখিন মাছ শিকারিদের এসব ডিম সরবরাহ করা হয়।
মো. জাকির হোসেন নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, একসময় এ পেশায় লোক কম ছিল, তখন সরবরাহ বেশি ছিল। আমার তত্ত্বাবধানে ১৮ জন সংগ্রহকারী কাজ করে। তাদের থেকে ডিম কিনে শৌখিন মাছ শিকারিদের কাছে বিক্রি করি। প্রতি কেজিতে ৫০ থেকে ১শ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। প্রতিদিন ২০ থেকে ৪০ কেজি ডিম সংগ্রহ করে বিভিন্ন জেলায় পাঠাই।